শুকনো কাশি কি?
একটা অনুৎপাদক প্রকৃতির বিরক্তিকর কাশি যাতে কোনো কফ বা শ্লেষ্মা নির্গমণ হয় না তাকে শুকনো কাশি বলা হয়। সাধারণত এর সাথে গলায় একটা সুড়সুড়ে ভাব অনুভব হয়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
শুকনো কাশির সাথে জড়িত লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হল:
- শ্বাসকষ্ট।
- জ্বর ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
- গলা ফুলে থাকা।
- রাতে ঘাম হওয়া।
- ওজন কমে যাওয়া।
- ব্যায়াম করতে না পারা (সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া)।
- শ্বাসগ্রহণের সময় বুকে সাঁই সাঁই আওয়াজ।
- বুকজ্বালা।
- খাবার গিলতে অসুবিধা।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
শুকনো কাশি প্রধানত নিচে দেওয়া কারণগুলোর জন্য হয়:
- ভাইরাসঘটিত অসুস্থতা (ঠান্ডা লাগা, ফ্লু [ইনফ্লুয়েঞ্জা] বা ভাইরাস সংক্রমণের পরে কাশি [যেখানে ভাইরাসঘটির অসুস্থতার পরে কয়েক সপ্তাহ ধরে কাশি থাকতে পারে])।
- অ্যাস্থমা।
- হুপিং কাশি।
- ল্যারিংক্সে প্রদাহ (ল্যারিঞ্জিটিস) বা কিছু বিশেষ প্রকারের ফুসফুসের অসুখ (ফুসফুসের অভ্যন্তরীণ অসুখ)।
- ধূমপান।
- অ্যালার্জিক রাইনিটিস (হে ফিভার, শরীরে শ্বাসের সাথে অ্যালার্জির কারণগুলি প্রবেশের জন্য যেমন পোষ্যের শরীর থেকে আসা অ্যালার্জি, রেণু বা ধুলো) বা কোনও বাতাসে থাকা পদার্থ নিঃশ্বাসের সাথে প্রবেশ করলে, যেটা সাধারণত সদ্যজাত ও শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
- ওষুধের পার্শ্ব প্রভাব (অ্যাঞ্জিওটেন্সিন- কনভার্টিং-এনজাইম [এসিই] উচ্চ রক্তচাপের জন্য ইনহিবিটরস)।
- গ্যাস্ট্রো-এসোফেজাল রিফ্লাক্স বা পোস্ট নাসাল ড্রিপ (নাক বা সাইনাস থেকে শ্লেষ্মা নিঃসরণ করে গলা দিয়ে নির্গমণ করানো)।
- নাকডাকা এবং প্রতিরোধী স্লিপ অ্যাপনিয়া।
শুকনো কাশির যে উপসর্গগুলি বিরল ক্ষেত্রগুলিতে দেখা যায়:
- হার্ট ফেলিওর।
- ফুসফুসে ক্যান্সার।
- ফুসফুসে রক্ত জমাট বাধা (পাল্মোনারী এম্বোলিজম)।
এটি কিভাবে নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা কি?
প্রাথমিকভাবে আপনার চিকিৎসক আপনার কাশি ও অন্যান্য উপসর্গগুলোর বিশদ ইতিহাস জানতে চাইবেন, এর পরে আপনার শারীরীক পরীক্ষা করা হবে। চিকিৎসাগত ইতিহাস, ব্যক্তির বয়স, ও পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করে, চিকিৎসক আপনাকে নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করতে বলতে পারেন:
- অ্যালার্জি পরীক্ষা।
- ছাতির এক্স-রে।
- গলার লালার নমুনা (গলার ভিতরের দিক থেকে লালার একটা নমুনা সংগ্রহ করা হয়, এবং নমুনাটি সংক্রমণের কারণ জানার জন্য পরীক্ষা করা হয়)।
- পাল্মোনারী কার্যকারীতার পরীক্ষা।
শুকনো কাশির চিকিৎসা এর কারণগুলোর উপর নির্ভর করে (যেমন, ভাইরাস সংক্রমণের জন্য কাশিতে নিজেকে নিজের যত্ন নিতে হয় এবং এটা এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়)। শুকনো কাশির থেকে আরাম পাওয়ার জন্য নিচের চিকিৎসাগুলো বলা হল:
নিজে যত্ন নেওয়া
- মধু গলাকে প্রলেপ দেয় এবং স্বস্তিপ্রদান করে এবং গলার সেইসকল অস্বস্তি থেকে আরাম দেয় যার জন্য শুকনো কাশি হয়।
- প্রচুর পরিমান তরলপদার্থ পান করা (ঈষদুষ্ণ জুস, চা, ইত্যাদি)।
- লবন জলে গার্গল করলে এটা ঠান্ডা লাগা এবং শুকনো কাশির জন্য গলা ফুলে যাওয়া থেকে আরাম দেয়।
- কিছু বিশেষ ওষুধ নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া (এসিই ইনহিবিটর, বিটা ব্লকারস্) যার জন্য শুকনো কাশি হয় এবং আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে এর বদলে অন্য ওষুধ নিন।
- কাশির দমক কম করার জন্য চুমুক দিয়ে জল খেতে থাকুন।
- কাশি দমনকারী (লজেন্স হিসাবে উপলব্ধ [যাতে অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়া আছে] বা তরল পদার্থ বা লিঙ্কটাস [কাশির জন্য মিক্সচার]) যেগুলো কাশিকে চাপা দিতে সাহায্য করে যেমন:
- ফল্কোডিন।
- ডেক্সট্রোমেথোর্ফেন।
- কোডেইন।
- ডাইহাইড্রোকোডেইন।
- পেন্টোক্সাইভেরিন।
- ঠান্ডা লাগা ও জ্বরের জন্য একসাথে দেওয়া ওষুধে সাধারণত এই পদার্থগুলো থাকে:
- অ্যান্টিহিস্টামিন।
- ডিকনজেস্ট্যান্ট (বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে)।
- প্যারাসিটামল।
- নাকের স্প্রে এবং ইনহেলারস অ্যালার্জি রাইনিটিসের কারণে শুকনো কাশির জন্য নাসাল-ড্রিপের পরবর্তীকালে যেগুলি দেওয়া হয়:
- সেলাইন বা কর্টিকোস্টেরয়েড নাকের স্প্রে।
- কর্টিকোস্টেরয়েড ইনহেলার (মুখ দিয়ে শ্বাসের মাধ্যমে নেওয়া হয়)।
- রিফ্লাক্স চিকিৎসা, গ্যাস্ট্রো-এসোফেজাল রিফ্লাক্স অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেগুলি দেওয়া হয়:
- ওষুধ দেওয়া হয় যেটা শরীরে অম্লের নিঃসরণ বন্ধ করে (যেমন প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরস)।
- নিজের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে খেয়াল রাখতে হবে যে শোয়ার ঠিক আগে খাবার যাতে না খাওয়া হয় এবং বিছানা মাথার দিক থেকে যেন ঢালু হতে থাকা অবস্থানে থাকে।