বেশি মাত্রায় ওষুধ সেবন কি?
একটি ড্রাগ অথবা ওষুধের (যা অবৈধ ড্রাগ, প্রেসক্রিপশন, এবং ওভার-দ্য কাউন্টার ওষুধগুলি, অথবা নির্দিষ্ট হার্বাল প্রতিকারগুলির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে) বিষ অথবা বিষাক্তের পরিমাণ সেবন করা হল ওভারডোজের (বেশি মাত্রার) কারণ, যা কখন-সখন মারাত্মক হতে পারে। বেশি মাত্রায় ওষুধ সেবনের প্রতিক্রিয়া এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
বিভিন্ন কারণের উপর ভিত্তি করে বেশি মাত্রার (ওভারডোজের) প্রাথমিক লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি আলাদা হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে যে ড্রাগটি নেওয়া হয়েছে তার ধরন এবং পরিমাণ, এবং ব্যক্তিটির স্বাস্থ্যের অবস্থা। সাধারণভাবে দেখা যাওয়া কিছু উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
- ডায়রিয়া (পেট খারাপ), বমি এবং/বা বমি বমি ভাব
- তলপেটে টান ধরা
- শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ
- মাথা ঘোরা বা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব
- শ্বাস নিতে অসুবিধা (শ্বাসকষ্ট)
- ভারসাম্য হারানো
- খিঁচুনি
- বিভ্রান্তি অথবা ভুল জিনিস চোখের সামনে দেখা
- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
- জোরে জোরে নাক ডাকা
- নীল হয়ে যাওয়া (ত্বকের রং নীল হয়ে যাওয়া)
- কোমাতে চলে যাওয়া
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
বেশি মাত্রায় ওষুধ সেবন নিম্নলিখিত যেকোন কারণে হতে পারে:
- ইচ্ছাকৃতভাবে ওষুধের অপব্যবহার, যার মধ্যে একটি ব্যক্তি ‘উচ্চতা’ (সম্পূর্ণভাবে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার জন্য) পেতে অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজের ক্ষতি করার কারণে (এটি একটি আত্মহত্যার চেষ্টার অংশ হতে পারে) বেশি মাত্রা নিতে পারেন।
- এটি দুর্ঘটনামূলক হতে পারে, যেখানে একটি ব্যক্তি ভুল করে সেবন করে ফেলে:
- ভুল ওষুধ
- ওষুধের ভুল মিশ্রণ
- ওষুধের ভুল পরিমাণ
- ভুল সময় ওষুধ সেবন করা যার থেকে ক্ষতি হতে পারে
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
যখন একজন ব্যক্তিকে বেশি মাত্রায় ওষুধ সেবন করেছে বলে সন্দেহ করা হয়, তার অবিলম্বে চিকিৎসা পরিষেবার প্রয়োজন। চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী দল রোগীর সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করবে এই ভাবে:
- বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা করবেন
- রোগীকে নিরীক্ষণ করবেন
- একটি মনস্তাত্ত্বিক পর্যালোচনা করবেন
বেশি মাত্রায় ওষুধ সেবনের চিকিৎসা, কোন ধরনের ওষুধ (বা ওষুধগুলি) সেবন করেছে এবং ব্যক্তিটির ওপর তার প্রভাব কতটা তার ওপর নির্ভর করে করা হয়। এটি আরো বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে যার মধ্যে রয়েছে, ড্রাগের সঙ্গে অন্য আর কি সেবন করা হয়েছে, কিভাবে এবং কখন এটা নেওয়া হয়েছে, বেশি মাত্রার কারণে তার সাথে জটিলতাগুলো সৃষ্টি হয়েছে কিনা তার ওপর। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা অল্প সময়ের জন্য হয়, কিন্তু আত্মহত্যার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে, দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
নিম্নলিখিত প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে:
- শান্ত এবং স্থির থাকুন এবং আক্রান্ত ব্যক্তিটির মাথা পিছন দিকে হেলিয়ে এবং থুতনিটিকে উপরের দিকে তুলে ধরে ঠিক মতো শ্বাস নিতে সাহায্য করুন। কিছু চিকিৎসার সাহায্য না পাওয়া পর্যন্ত রোগীর নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের দিকে নজর রাখুন। যদি ব্যক্তিটি অজ্ঞান হয় কিন্তু শ্বাস নেয় তবে তাকে সেই স্থানেই রাখা উচিত, যা ঠিক হওয়ার অবস্থা হিসেবে ধরা হয়। নিচে লেখা নির্দেশগুলি মেনে চলুন:
- ব্যক্তিটিকে বমি করানো বা কিছু খাওয়ানো বা পান করানো যাবে না।
- যে জায়গায় বড়িগুলো ছিল যা এই ওভারডোজের (বেশি মাত্রার) কারণ সেটিকে ঠিক করে রাখতে হবে এবং হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
বেশি মাত্রায় ওষুধ সেবনের চিকিৎসার বিভিন্ন পদক্ষেপগুলি হল:
- ওষুধটিকে শরীর থেকে বার করার জন্য (অ্যাক্টিভেটেড চারকোলের মতো একটি পদার্থ রোগীকে দেওয়া হয় যা ওষুধের সাথে মিশে সহায়তা করে, এইভাবে শরীর এটি শোষণ করতে পারে না। কখনও কখনও অ্যাক্টিভেটেড চারকোল ব্যবহারের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, তার জন্য প্রচুর পরিমাণে জল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই চারকোলটি কিছু কিছু ওষুধের কাজেও বাধা সৃষ্টি করে সেই ওষুধগুলোর কাজকে পরিবর্তন করে দেয় [বিশেষত ওরাল গর্ভনিরোধক ব্যবহারকারী মহিলাদের মধ্যে])।
- যখনই সম্ভব, একটি প্রতিষেধকের প্রয়োগ (একটি প্রতিষেধক হল এমন একটি পদার্থ যা বিষক্রিয়ার গঠনকে রোধ করতে পারে) যার মধ্যে আছে নালক্সোন হাইড্রোক্লোরাইডের মত পদার্থ যা ওপিওয়েডের (আফিম জাতীয়) বেশি মাত্রার (ওভারডোজের) ক্ষেত্রে প্রয়োজন।
- ওভারডোজের ঘটনার পর থেকে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠাকে নজরে রাখতে সব কিছু সঠিক ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এটি চিকিৎসককে রোগীর আর চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কি না বা যদি প্রয়োজন পরে তাহলে রোগীর আর কোনো সাহায্য লাগতে পারে কি না, এই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
- যদি আত্মহত্যার প্রচেষ্টা হয় তাহলে রোগীর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাকে মানসিক কাউনসেলিং করানো প্রয়োজন।