ওষুধের অপব্যবহার (ওষুধের ভুল ব্যবহার) কি?
ওষুধের অপব্যবহার ওষুধের উপর এক ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতাকে বোঝায়, যাতে কোন একটি ব্যক্তি কোন ওষুধ বারংবার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। সারা বিশ্ব জুড়ে ওষুধের অপব্যবহার বর্তমানে কিশোর ও যুবকদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা। এটা দেখা গেছে যে প্রায় সমস্ত রকম আসক্তি-সৃষ্টিকারী ওষুধ মস্তিষ্কে অধিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে এমন কিছু স্নায়ুগত সংকেত প্রেরণ করে যাতে সেই ব্যক্তি একটি আনন্দ-চঞ্চল অবস্থা উপলব্ধি করে ফলে সেই ব্যক্তি বারবার একই ওষুধ গ্রহণ করতে চায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
ওষুধের অপব্যবহার ভারতে একটি অন্যতম সমস্যা এবং এটি সমাজের যেকোনো তলার মানুষদের প্রভাবিত করে। বেশীরভাগ সময়ে, নিজের অজান্তেই, যুবক-যুবতীরা প্রেসক্রিপশন করা বা না করা ওষুধের প্রতি অথবা একটি অবৈধ্য আসক্তিকারী ওষুধজাতীয় বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। ওষুধের অপব্যবহারের উপসর্গগুলি তিন রকমের হয়, শারীরিক, আচরণগত ও জৈবিক।
শারীরিক উপসর্গগুলি:
- বেশি ঘুমানো অথবা অনিদ্রায় ভোগা
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া
- চোখের তারা প্রসারিত বা সংকুচিত হয়ে থাকা
- দেহের ওজনে হঠাৎ পরিবর্তন
- বমি
- ক্ষুধামান্দ্য
আচরণগত লক্ষণ: ওষুধের অপব্যবহারে রোগীর কিছু অভ্যাস বা ব্যবহার বদলে যায়। নিম্নের উপসর্গগুলি চিহ্নিত করতে পারলে অবস্থার অবনতি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
- সামাজিক যোগাযোগ বদল হওয়া
- বিষণ্ণতা
- আক্রমণাত্মক ব্যবহার
- বিরক্তি বেড়ে যাওয়া
- একলা থাকার ইচ্ছা
- পরিবার পরিজনকে পরিহার করা
জৈবিক উপসর্গগুলি: ওষুধের অপব্যবহার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। ওষুধের অপব্যবহারে নিম্নলিখিত জটিলতাগুলি সৃষ্টি হতে পারে:
- লিভার সিরোসিস
- হেপাটাইটিস
- এইচআইভি সংক্রমণ
- যক্ষ্মারোগ
- মুখের ভিতরের স্বাস্থ্যসম্বন্ধনীয় সমস্যা
এই রোগের প্রধান কারণগুলি কি কি?
ওষুধের অপব্যবহার সংক্রান্ত জাতীয় সংস্থা অনুযায়ী, অ্যানাবোলিক স্টেরয়েড, বিনা প্রেসক্রিপশনে কিনতে পারা যায় এরকম ওষুধ, হেরোইন, মেথামফেটামাইন ইত্যাদি অনেক কিছুই অপব্যবহারের ওষুধ হতে পারে। ওষুধের অপব্যবহারের কারণ সামাজিক কিংবা মানসিক হতে পারে। যে যে কারণে কেউ ওষুধের অপব্যবহার করার চেষ্টা করে সেগুলি হলো:
- কুসঙ্গে পড়ে ওষুধের অপব্যবহারে উৎসাহিত হওয়া
- নিজের ভাইবোন কিংবা পরিবারের কেউ যদি আগে থেকেই মাদকাসক্ত হয়
- অপব্যবহার করা যাবে এমন জিনিস একেবারেই কৈশোর অবস্থায় হাতে পেয়ে যাওয়া
- একাকিত্ব ও বিষণ্ণতা
- মা-বাবার দ্বারা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া কিংবা কোন পারিবারিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলা
এই রোগ কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
ব্যক্তির উপসর্গগুলি দেখে ওষুধজাতীয় বস্তুর প্রতি তার আসক্তির বিষয়টি নির্ণয় করা যেতে পারে। বিশদে অনুসন্ধান করে দেখার জন্য এই পরীক্ষাগুলি জরুরি:
- চিকিৎসকের বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া
- রক্ত পরীক্ষা
- মূত্রের পরীক্ষা
ওষুধের অপব্যবহার রোগটি সম্পূর্ণ ভাবে সারিয়ে তোলা যায়। সঠিকভাবে প্রস্তুত করা পুনর্বাসন পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ ভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব। যে প্রধান দুটি উপায়ে ওষুধের অপব্যবহার রোগটি সারিয়ে তোলা যায় তা হল চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ ও নিয়মিত ওষুধ খাওয়া। মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞদের সঠিক পরামর্শ ও নিয়মিত ওষুধ খাওয়া বিস্ময়কর ফলদান করতে পারে। ওষুধের অপব্যবহার রোধের জন্য যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়:
- বিষণ্ণতা কমানোর ওষুধ
- মনোরোগের ওষুধ
- অ্যালকোহলের প্রতিষেধক
- আফিঙের নেশার প্রতিষেধক
জীবনশৈলীর কিছু পরিবর্তন যেমন প্রাত্যহিকভাবে যোগাসন ও ধ্যান মনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে যাতে আরো সহজে সেরে ওঠা যায়। যদিও নেশার হাত থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিস্তার পাওয়া একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, কিন্তু তারপর এক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সম্ভব। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে চলা রোগীকে পুরোপুরি সারিয়ে তোলে। ওষুধের অপব্যবহারকারীর সম্পূর্ণভাবে অভ্যাস ত্যাগ করতে পরিবার পরিজনের সহযোগিতা এক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয়।