মাথা ঘোরা - Dizziness in Bengali

মাথা ঘোরা, যাকে লাইটহেডনেস বলা হয়, হচ্ছে অস্থিরতা বা ভারসাম্য ক্ষতির অনুভূতি। এই অনুভূতি চেতনা হারানো বা ছাড়াও হতে পারে এবং এটি একটি খুব সাধারণ অবস্থা। এটি বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবারই হতে পারে। বেশির ভাগ সময় এর চিকিৎসা করা যায়। কদাচিৎ, অবস্থা গুরুতর হাসপাতালে ভর্তি করা হতে পারে। আপনার কিছু অস্বাভাবিক উপসর্গ থাকতে পারে যা কিছু সময়ের পর নিজের থেকেই চলে যায়। কিন্তু এই উপসর্গগুলিকে উপেক্ষা করবেন না। যদি মাথা ঘোরা বারে বারে হতে থাকে তাহলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি ডাক্তারবাবুর কাছে যাবেন। ভ্রমণের সময়ে আপনার মাথা ঘুরতে পারে (যেমন আপনি বাসে বা গাড়িতে ভ্রমণ করছেন)। এই ধরণের মাথা ঘোরাকে মোশান সিকনেস বলা হয়। ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিলে এর থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কখনও কখনও মাথা ঘোরার কারণ দেহে অন্য কোন অজানা রোগের উপস্থিতি। সুতরাং ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়া এবং সঠিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো খুবই জরুরী যাতে মাথা ঘোরার আসল কারণ জানা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যায়।

মাথা ঘোরা কাকে বলে?

মাথা ঘোরা হচ্ছে আপনি যখন শোয়া বা বসা অবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে উঠেছেন সেই সময় অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা। যখন মাথা ঘুরবে, তখন মনে হবে যে এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও আপনি নড়াচড়া করছেন।

মাথা ঘোরা একটি অস্পষ্ট উপসর্গ। আপনি ঠিক কি অনুভব করছেন তা আপনার ডাক্তারবাবুকে ব্যাখ্যা করা কঠিন হতে পারে। আপনার মনে হতে পারে:

• শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে আপনি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
• একটা অস্বস্তিকর অবস্থা যেখানে আপনি এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়ছেন না।
• এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও আপনার মনে হচ্ছে যে আপনি নড়ছেন।
• আপনার মনে হচ্ছে যে আপনি যে কোন সময় অজ্ঞান হয়ে যাবেন।

আপনার যদি এই রকমের উপসর্গ থাকে তাহলে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।

মাথা ঘোরা কোন ওষুধ ছাড়াই নিজে নিজে সেরে যেতে পারে। যদি মাথা ঘোরার কারণ অন্য কোন অসুখ হয় তাহলে সে অসুখের চিকিৎসা করলে পরিস্থিতি ভাল হবে। পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যখন  ডাক্তারবাবু আপনার মাথা ঘোরার কারণ খুঁজে পাবেন, তখন সেই রোগের চিকিৎসা আরম্ভ হবে এবং মাথা ঘোরার চিকিৎসাও সাথে সাথে হতে থাকবে। যদি তাও না সারে, তাহলে ডাক্তারবাবু কিছু ওষুধ-পত্র প্রেসক্রাইব করতে পারেন।

• মোশান সিকনেস'এর কারণে মাথা ঘোরা হলে ডাক্তারবাবু তার ওষুধ দেবেন যা যাত্রা শুরু করার এক ঘণ্টা আগে খেতে হবে। তাহলে মোশান সিকনেস বন্ধ করা যাবে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে এন্টিহিস্টামিন'এর মত ওষুধ দেওয়া হয়।
• রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে মাথা ঘুরতে পারে। এর চিকিৎসা হল রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। বারে বারে অল্প সময়ের ব্যবধানে হাল্কা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
• মাইগ্রেন থাকার কারণে মাথা ঘুরলে, ডাক্তারবাবু আপনাকে এন্টি-মাইগ্রেন ওষুধ দেবেন।
• নিম্ন রক্ত চাপের কারণে মাথা ঘুরলে হাসপাতালে ভর্ত্তি হয়ে ইন্ট্রা-ভেনাস পদ্ধতির মাধ্যমে শরীরে তরল পদার্থ নিতে হবে। এতে রক্তের চাপ স্বাভাবিক হবে এবং মাথা ঘোরাও কমে যাবে।
• মদ্যপানের কারণে যদি আপনার মাথা ঘোরে তাহলে ডাক্তারবাবু আপনাকে হাসপাতালে পাঠাতে পারেন এবং ওষুধ দিতে পারেন যাতে মদ্যপানের প্রভাব কেটে যায়।
• কানের ভিতরের রোগের চিকিৎসা করার জন্য আপনার ডাক্তারবাবু ওষুধ দিতে পারেন। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে অস্ত্রোপচারের পরামর্শও দিতে পারেন।
• মাথা ঘোরা যদি কোন ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার জন্য হয়, ডাক্তারবাবু সেই ওষুধের মাত্রা কম করে দিতে পারেন অথবা বন্ধ করে দিতে পারেন।

জীবনধারার ব্যবস্থাপনা

জীবনধারাতে কিছু বুনিয়াদি পরিবর্তন আনলে মাথা ঘোরা বন্ধ হতে পারে:

• জল-বিয়োজন এড়াতে প্রতিদিন 3-4 লিটার জল পান করুন।
• মেনিয়ার'স রোগের ক্ষেত্রে কম মাত্রায় লবণ খাবেন। ফল, স্যালাড বা খাদ্যের উপরে কাচা লবণ ছড়াবেন না।
• ডাক্তারবাবুর নির্দেশ অনুযায়ী সময়মত ইনসুলিন ইনজেকশান নিন। গ্লুকোজের উৎস, যেমন বিস্কিট বা লজেন্স হাতের কাছে রাখবেন যাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
• মাত্রাধিক মদ্যপান পরিহার করুন। পুরুষদের ক্ষেত্রে দৈনিক 1-2 টি এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে 1টি ড্রিঙ্কের মধ্যে সীমিত রাখুন। সম্ভব হলে মদ্যপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।
• যখন মাথা ঘুরবে তখন একটি শান্ত পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন যেখানে অত্যধিক শব্দ এবং উজ্জ্বল আলো নেই।
• শুয়ে থাকা থেকে হঠাৎ উঠে বসবেন না।
• মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে কোনও কিছুর সাহায্য নিন অথবা বসে পড়ুন।
• অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়ে যাতে আঘাত না লাগে তার জন্য কারুর সাহায্য গ্রহণ করুন।
• মাথা ঘোরা অনুভব করলে গাড়ি চলাবেন না বা জন্ত্রপাতি চালনা করবেন না।