সাইনাইড পয়জনিং কি?
সাইনাইড পয়জনিং ঘটে যখন কোনো ব্যক্তি সাইনাইডের সংস্পর্শে আসে, এটি একটি দ্রুত ক্রিয়াশীল বিষাক্ত রাসয়নিক। সাইনাইডের গ্যাসীয় রূপ হল হাইড্রোজেন সাইনাইড, এর কঠিন বা লবণ রূপটির নাম পটাসিয়াম সাইনাইড। সাইনাইডের প্রাকৃতিক উৎসগুলি হলো, লিমা বিনস, আমন্ড বাদাম, কাসাভা গাছ এবং শিল্পজাত দ্রব্য যেমন কিছু কীটনাশক, ও ফোটোগ্রাফিতে ব্যবহৃত দ্রবণ ও গহনা পরিষ্কার করার দ্রবণ। ভারতে সাইনাইড পয়জনিংয়ের পরিসংখ্যান জানা নেই।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
এটি নিঃশ্বাসের সাথে বা পাকস্থলিতে গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে লক্ষণ ও উপসর্গগুলি দেখা যায় এবং রক্তে এর মাত্রা 40 মোল/লিটার অবধি হয়ে যায়। এর উপসর্গগুলির সূত্রপাত খুব দ্রুত শুরু হয় এবং যদি গ্যাসীয় অবস্থায় সাইনাইড শরীরে ঢোকে তাহলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে, অথবা যদি লবণ অবস্থায় সাইনাইড কেউ খেয়ে ফেলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে। সাইনাইড প্রধানতঃ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং হৃদপিন্ড ও সংবহনতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এটি শরীরে প্রবেশ করে নিঃশ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে, ত্বকের শোষণের মাধ্যমে, বা সাইনাইডযুক্ত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে। সাইনাইডের বিষক্রিয়াতে তাৎক্ষণিকভাবে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যেতে পারে:
- কম্পনের সাথে মাথা ব্যথা
- মাথাঘোরা
- বমি বমি ভাব
- বমি
- দ্রুত হৃদস্পন্দন ও দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
যেকোন ভাবেই বেশি পরিমানে সাইনাইড শরীরে প্রবেশ করলে, নিম্নের উপসর্গগুলি দেখা যেতে পারে:
- খিঁচুনি (সবচেয়ে বেশি দেখা যায়)
- অচেতন হয়ে পড়া
- রক্তের নিম্নচাপ
- ফুসফুসের ক্ষতি
- হৃদস্পন্দন কমে আসা
যারা সাইনাইডের বিষক্রিয়ার পরে বেঁচে যান তাঁদের স্নায়বিকমনোরোগ ও দৃষ্টিশক্তির অবনতি দেখা যায়।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
সাইনাইডের বিষক্রিয়ায়, শরীরের কোষসমূহ অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। যেটার ফল মারাত্মক হতে পারে। অল্প পরিমানে থাকলে, সাইনাইড থায়োসাইনেটে রূপান্তরিত হয়ে যায়। বেশি পরিমানে থাকলে, এর ক্রিয়া খুব মারাত্মক হয়ে যায়, ফলে কোষের মৃত্যু ঘটাতে শুরু করে। এটি সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে বিকল করে দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বিষক্রিয়া শুরু হওয়ার মাত্রা হলো 100-200 মিলিগ্রাম।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা কি?
সাইনাইড পয়জনিং নির্ধারণ পুরোপুরি রোগীর শারীরিক পরীক্ষার উপর নির্ভরশীল, যদিও কিছু ল্যাবরেটরী পরীক্ষাও এতে সাহায্য করে। নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করে শারীরিক অস্বাভাবিকতাগুলি চিহ্নিত করা যেতে পারে:
- মেটাবলিক অ্যাসিডোসিস।
- শরীরে ল্যাকটিক অ্যাসিডের পরিমান বেড়ে যাওয়া।
- শিরাতে 90% এর বেশী অক্সিজেনের সম্পৃক্তি।
যে যে পরীক্ষাগুলি করা হয়:
- সম্পূর্ণ রক্ত গণনা।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নির্ধারণ।
- জৈব-রাসায়নিক পরীক্ষা।
- ইসিজি পরীক্ষা করা।
কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়া থেকে এটিকে সহজে আলাদা করা যায় কারণ দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হৃদপিন্ডের হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি একমাত্র দেখা যায়।
এর চিকিৎসার অন্তর্গত হল:
- সংক্রমণ মোচন:
- প্রতিষেধক সরঞ্জাম: এতে তিনটি পদার্থের মিশ্রণ থাকে যা সাইনাইডকে প্রশমিত করে।
- হাইড্রোক্সোকোবালামিন: এটি সাইনাইডের সাথে যুক্ত হয়ে মূত্রের সাথে নিষ্কাশিত হয়ে যায়।
নিজের যত্ন নেওয়া:
- এমন কোনো গ্যাসের সংস্পর্শ থেকে দ্রুত দূরে সরে যান যার সাথে সাইনাইড মিশ্রিত থাকতে পারে।
- সেই পোশাকটি ত্যাগ করুন যাতে সাইনাইডের স্পর্শ থাকতে পারে।
- চোখে বেশি বেশি করে জলের ঝাপ্টা দিন আর শরীর ধোওয়ার কাজে অনেকটা জল ও সাবান ব্যবহার করুন।
- যদি খেয়ে ফেলে থাকেন তাহলে, সক্রিয় চারকোল তা শরীরে শোষণ হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
- ব্লিচ ব্যবহার করে সাইনাইড অপসারণের চেষ্টা করবেন না।
- দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রতিরোধ করার উপায়:
- যেসব কারখানায় সাইনাইড বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয় সেই সব কারখানার শ্রমিকদের সাইনাইডের বিষক্রিয়া সম্বন্ধে সচেতন করা উচিত যাতে কোনো অবাঞ্ছনীয় বিপদ না ঘটে।
- পেশাগত বিপত্তি ঘটতেই পারে, তাই আগে থেকেই শ্রমিকদের জানিয়ে রাখা ভালো এবং সাইনাইডসমৃদ্ধ দ্রব্যের ব্যবহার করা শিখিয়ে দেওয়া উচিত।
- রোগীদের জন্য আগে থেকেই জ্ঞাপনপত্র বানিয়ে রাখা উচিত যাতে সাইনাইডের বিষক্রিয়া সম্বন্ধে তথ্য থাকে এবং পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি জানানো থাকে।
অন্যান্য বিষক্রিয়া চেয়ে, সাইনাইডের বিষক্রিয়া অনেক বেশী মারাত্মক এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে পারে। অবশ্যম্ভাবী বিপদ এড়াতে গেলে সাইনাইড সম্বন্ধে আগে থেকে জেনে রাখাই শ্রেয়।