কনজাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ ওঠা কি?
কনজাঙ্কটিভাইটিস হল কনজাঙ্কটিভার প্রদাহ বা ব্যথা, এটি হল আমাদের চোখের পাতার নিচে ঝিল্লির মতো পাতলা পর্দা যা চোখের সাদা অংশকে ও চক্ষুপল্লবের ভিতর ভাগকে ঢেকে রাখে । কনজাঙ্কটিভাইটিস মূলত ছোটো বাচ্চাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায় আর তাদের থেকে এই রোগ অন্যদের চোখে ছড়ায়, যদি তা ছোঁয়াচে হয়।
কনজাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
যে উপসর্গগুলি কনজাঙ্কটিভাইটিস রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় সেগুলি হল:
- সংক্রমিত চোখের সাদা অংশটি গোলাপি বা লালচে হয়ে ওঠা।
- চোখ দিয়ে জল পড়া।
- চোখে জ্বালা এবং চুলকানির ভাব।
- চোখে অতিরিক্ত পিঁচুটি আসা।
- চোখের পাতা ফুলে ওঠা ও কনজাঙ্কটিভা ফুলে ওঠা।
- চোখে অস্বস্তিবোধ হওয়া।
- চোখের ভিতরে যেন কিছু একটা রয়েছে বলে মনে হওয়া।
- চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া।
- আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা।
- সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় চোখের পাতায় চটচটে পদার্থ লেগে থাকা।
কনজাঙ্কটিভাইটিসের প্রধান কারণগুলি কি কি?
কনজাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ ওঠার মূল কারণই হলো সংক্রমণ, অ্যালার্জি ও পরিবেশের যন্ত্রণা সৃষ্টিকারী পদার্থগুলি।
- সাধারণত স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ক্ল্যামাইডিয়া ও গোনোকক্কাসের মতো ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাসের কারণে সংক্রমণ হয়। সংক্রমণ পোকার মাধ্যমে, সংক্রমিত ব্যক্তির চোখ থেকে, আবার সংক্রমিত কসমেটিক বা প্রসাধনী দ্রব্য থেকেও ছড়ায়।
- ফুলের রেণু, ধুলোর কণা, পশুপাখির লোম/পালক, দীর্ঘক্ষণ ধরে শক্ত বা নরম কন্ট্যাক্ট লেন্স একনাগাড়ে ব্যবহার করলে চোখের অ্যালার্জি হয়।
- সাধারণত পরিবেশের যন্ত্রণা উৎপাদক কারণ হল দূষণ (ধোঁয়া, বাষ্প, প্রভৃতি), সুইমিং পুলের জলে থাকা ক্লোরিন ও বিষাক্ত রাসায়নিক।
কিভাবে কনজাঙ্কটিভাইটিস নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
রোগীর চোখের রোগের পূর্বেকার ইতিহাস, লক্ষণ, উপসর্গ, চক্ষু পরীক্ষার মাধ্যমে, চিকিৎসক (চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ) সিদ্ধান্তে আসেন যে রোগীর কনজাঙ্কটিভাইটিস হয়েছে কি না। সংক্রমণের কারণে দেখার অসুবিধা হচ্ছে কি না, ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখেন এবং চোখের কনজাঙ্কটিভার অবস্থা, চোখের বাহ্যিক টিস্যু বা কলা ও চোখের ভিতরকার গঠনও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন চিকিৎসক। সাধারণত, চোখ ওঠা রোগের সমস্যা সাধারণত প্রায় চার সপ্তাহ মতো থাকে। সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা চিকিৎসায় ঠিকমতো সাড়া না মেলে, তাহলে সোয়াব (চোখের পিঁচুটির নমুনা/ চোখের নির্গত বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ) সংগ্রহ করে পরীক্ষা অর্থাৎ টেস্ট করা হয়।
কনজাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সংক্রমণের কারণ অনুযায়ী করা হয়। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দেন চিকিৎসক, ভাইরাস-ঘটিত সংক্রমণ সারতে তার নিজস্ব সময় লাগে। ঠান্ডা সেঁক ও আর্টিফিশিয়াল টিয়ার্স বা কৃত্রিম চোখের জল উপসর্গ অনুযায়ী উপশম দিতে সাহায্য করে। অ্যালার্জি ঘটিত কনজাঙ্কটিভাইটিসের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিনস ও আই ড্রপ দেওয়া হয়। কনজাঙ্কটিভাইটিসের সময়ে কন্ট্যাক্ট লেন্সের ব্যবহার পুরোপরি বন্ধ রাখা প্রয়োজন।
আপনি পরিবারের বাকি সদস্যদের সংক্রমিত হওয়া থেকে নিম্নোক্ত উপায়গুলি দ্বারা বাঁচাতে পারেন:
- সংক্রমিত চোখ/চোখদুটি বেশি না ছোঁয়া।
- হাত ভালো করে ধোওয়া দরকার।
- নিজের তোয়ালে ও প্রসাধনী দ্রব্য অন্য কাউকে ব্যবহার করতে না দেওয়া।