ক্রোমোজোম 10, ডিস্টাল ত্রিশমি 10q (ক্রোমোজোম সংখ্যা) কি?

ক্রোমোজোম 10, ডিস্ট্রাল ত্রিসমি 10q (ক্রোমোজোম সংখ্যা) একটা ক্রোমোজোমের অবস্থা যা খুবই বিরল প্রকৃতির হয়। এই রোগ সাধারণত মা-বাবার থেকে সন্তানের দেহে আসে যাদের কোন একজনের ক্রোমোজোমের স্থানচ্যুতি ঘটেছে। এটা তখনই ঘটে যখন ক্রোমোজোমের লম্বা বাহুর শেষ প্রান্ত  তিনবার শরীরে প্রকাশিত হয় (ত্রিশমি) যা সাধারণক্ষেত্রে দুবার হওয়ার কথা। এই অবস্থার প্রকাশ অনেকভাবে দেখা দিতে পারে, এমনকি শিশুদের মধ্যেও তা দেখা যায় এবং জন্মের পরে পরেই খুবই সহজেই তা নির্ণয় করা যায়।

এই রোগের মূল লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?

যদিও রোগীদের মধ্যে সবসময় উপসর্গগুলি একরকম হয় না, কিন্তু এমন কিছু উপসর্গ আছে যা এই রোগের সরাসরি ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যে আছে:

  • জন্মের আগে ও পরে অসম্পূর্ণভাবে বেড়ে ওঠা, খুবই আলগা হাড়ের সন্ধি আর দুর্বল পেশির গঠন
  • বুদ্ধির বিকাশে বিকলতা যার ফলে কোন কিছু শিখতে অনেক দেরী হওয়া, দক্ষতা অর্জনে অক্ষমতা এবং সঠিকভাবে সমন্বয়সাধন করতে না পারা
  • মুখ ও করোটি সঠিকভাবে গঠিত না হওয়া, যার ফলে চ্যাপটা মুখ ও অতি প্রকট গালের হাড় দেখা যায়, ছোট নাক আর ওপরদিকে ওঠা নাসারন্ধ্র, সঠিকভাবে পরিণত না হওয়া কান, ছোট মুখ যাতে লক্ষণীয়ভাবে প্রকট উপরের ঠোঁটটি, চোখের কাছে ঝোলা চামড়া, সরু হয়ে আসা চোখের পাতার ভাঁজ, দুটি চোখ খুবই দূরে দূরে অবস্থিত আর ছোট্ট একটি নিম্ন চোয়াল
  • বিকলাঙ্গ হাত পা আর হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলি একটি অন্যটির সাথে জড়িয়ে থাকা, পায়ের আঙ্গুলগুলির মাঝে বড় ফাঁক, আবার আঙ্গুলগুলি মধ্যিখানে ত্বকের বুনন দ্বারা একের সাথে অপরের যুক্ত থাকে, হাত পায়ের ত্বকে শিরা ওঠা ভাব দেখা যায়, এবং গভীর কুঞ্জন বা খাঁজ দেখা যায় পদতলে
  • মাথার খুলি আর দেহের হাড়ে অস্বাভাবিকতা, যেমন পাতলা পাঁজর বা কোন একটি পাঁজর না থাকা, ছোট গলা, বাঁকা মেরুদন্ড, হাড়ের পরিণত হতে সময় লাগা বা অপরিণত জঙ্ঘা বা থাইয়ের হাড়
  • কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্টস বা আজন্ম বিদ্যমান হৃদযন্ত্রের ত্রুটি, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা এবং কিডনির সমস্যা
  • পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাশয়জনিত সমস্যা

এই রোগের মূল কারণগুলি কি কি?

ক্রোমোজোম 10, ডিস্ট্রাল ত্রিশমি 10q (ক্রোমোজোম সংখ্যা) হল ক্রোমোজোম 10 এর লম্বা বাহুর (যাকে কিউ বাহু বলা হয়) শেষ ভাগের দুটি সত্ত্বার অবস্থান। এই ক্রোমোজোমের ডিস্টাল অংশের দুটি সত্ত্বা হওয়াই এই শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য দায়ী। যখন কোন একজন অভিভাবকের মধ্যে এই স্থানচ্যুতি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে বাচ্চার মধ্যে হয়তো ক্রোমোজোমের অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্থানচ্যুতি দেখা দিতে পারে, যাতে উপসর্গগুলি আরো দৃষ্টিগোচর হয়। মাঝে মাঝে, জিন হয়তো নিজেই পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত হয়ে যায়, তার ফলস্বরূপ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, কিন্তু এই রোগ বংশগত নয়।

এই রোগ কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?

এই অবস্থা জন্মের আগেই আল্ট্রাসাউন্ড বা অ্যামনিওসেনটিসিসের মাধ্যমে ধরা পড়তে পারে। ভ্রূণের অস্বাভাবিকতা যাচাই করার জন্য এই পরীক্ষাগুলি করা হয়। জন্মের পরে, চিকিৎসাগত পরীক্ষা করে আর ক্রোমোজোমের উপর গবেষণা করে এই রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে। অস্বাভাবিকতা আর খুঁতগুলি নির্ধারণ করার জন্য ইমেজিং আর বিশেষ ধরণের পরীক্ষা ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই রোগের চিকিৎসায় অনেক বড় একটি দল যুক্ত থাকে - যেমন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, শল্য চিকিৎসক, হৃদযন্ত্র-বিশেষজ্ঞ, কিডনি এবং হাড়ের বিশেষজ্ঞরাও। বিকালঙ্গতা আর খুঁত ঠিক করতে সার্জারি দরকার হতে পারে। সদ্যজাত ও শিশুদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার জন্য প্রয়োজনীয় সেবাদান করতে হবে প্রয়োজন ও গুরুত্বের উপর নির্ভর করে। স্বাস্থ্য-সম্বন্ধীয় কারণে চিকিৎসা চলাকালীন ওষুধ খেতে দেওয়া হয়, রোগী ও তার পরিবারের জন্য জ্ঞানীয় বিষয়গুলি আর সমর্থনমূলক থেরাপির বিষয়ে শিক্ষামূলক থেরাপি দেওয়া হয়।

সংস্কলিস্ট প্রবন্ধ

Read more...
Read on app