শিশুর মাইগ্রেন কি?
আমরা প্রায়শই এটা বিশ্বাস করি যে মাইগ্রেন কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদেরই হয়, কিন্তু শিশুরাও মাইগ্রেন প্রবণ হয়। প্রকৃতপক্ষে, রিপোর্টে বলছে, স্কুল-পড়ুয়া বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে 5 শতাংশ শিশু মাইগ্রেনের সমস্যার অভিযোগ করে। মাইগ্রেন হলো তীব্র মাথাব্যথা, যে বারবার হতে থাকে। যদিও এর অন্য আনুষাঙ্গিক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, মাথাযন্ত্রণা করাই সবচেয়ে তীব্র এবং সাধারণ উপসর্গ।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
মাথাব্যথা বৈশিষ্ট্য ছাড়া, মাইগ্রেনে আক্রান্ত শিশুরা আর যেসব উপসর্গগুলি অনুভব করতে পারে:
- বমনেচ্ছা এবং পেটে খিঁচুনি।
- আলো, শব্দ এবং গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা।
- ঝিমুনি।
- বিবর্ণতার পাশাপাশি চোখের নিচে কালি পড়া।
- প্রচণ্ড ঘাম হওয়া এবং তেষ্টা।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
মাইগ্রেনের কারণগুলিকে সাধারণ রূপ দেওয়া অথবা ঠিক কি কারণে এটা হয়, তা বলা মুশকিল। মাইগ্রেনের কিছু সাধারণ কারণ নিচে বলা হলো:
- মস্তিস্কে সেরোটোনিন রাসায়নিকের অভাব।
- মদ্যপান।
- মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) যুক্ত খাবার খাওয়া।
- চিনি এবং ক্যাফেইন।
- বাদাম এবং শেলফিশ (চিংড়ি, কাঁকড়া, শামুক জাতীয় জলজ প্রাণী)।
- নির্দিষ্ট কিছু দুগ্ধজাত খাদ্য।
- মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা।
- অপর্যাপ্ত খাবার, জল বা ঘুম।
- উজ্জ্বল আলো।
- কম্পিউটারে দীর্ঘ সময় কাজ করা।
- তীব্র গন্ধ।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
এই রোগ নির্ণয় করার জন্য চিকিৎসক সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন করেন, যেমন কখন মাইগ্রেন অনুভব করেছিলেন বা মাথার কোন অংশে আপনি সাধারণত যন্ত্রণা অনুভব করেন, মাইগ্রেনের আগে বা চলাকালীন কোনও শব্দ বা দৃশ্যের উপস্থিতি ছিল কি না, মাইগ্রেনের তীব্রতা এবং আরও বেশ কিছু।
শরীরে অন্যান্য সমস্যার উপস্থিতি জানার জন্য অন্যান্য পরীক্ষা করা হতে পারে। শারীরিক পরীক্ষা সহ বিস্তারিত স্নায়বিক মূল্যায়ন করা হয়। যদি শিশুর জ্বর, ঘাড়ে শক্তভাব, স্নায়ুর অস্বাভাবিকতা, অপটিক ডিস্ক ফুলে থাকা, বা অ্যাসিমেট্রিক লক্ষণ (শরীরের একপাশে দুর্বলতা) থাকে, তাহলে অতিরিক্ত কিছু পরীক্ষা করা হয়। ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি (ইইজি) করা হতে পারে মাইগ্রেনের প্যাথোলজিকাল কারণ জানার জন্য, যদি তা গুরুতর হয়।
মৃদু মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে, চিকিৎসকেরা সাধারণত বিশ্রাম নেওয়া, মানসিক চাপ এড়ানো ও কি কি কারণে হচ্ছে তার উপর নজর রাখার পরামর্শ দেন। আরও নির্দেশ দেওয়া হয়, মাইগ্রেনের যন্ত্রণা চলাকালীন শিশুকে কিভাবে ভ্রুণাবস্থার মতো শোয়াতে হবে (বাঁদিক করে, বাচ্চার মতো গুটিয়ে শোয়া)। যদি দরকার পড়ে তবে যন্ত্রণা উপশমকারী ওষুধ বা প্রদাহরোধক দেওয়া হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আরাম করা ও সম্মোহন থেরাপিও কাজ করে। এমএসজি ও সাইট্রিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা হয়। ভ্রমন বা গতিশীলতার জন্য যাদের মাইগ্রেন হয় তাদেরকে উপযুক্ত ওষুধ দেওয়া হয়।
মাইগ্রেনের গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে ট্রাইপট্যান্স নামক ওষুধগুলির প্রয়োজন হতে পারে।