ব্রাডিকার্ডিয়া বা কম হার্ট রেট কাকে বলে?
ব্রাডিকার্ডিয়া বা কম হার্ট রেট বলতে এমন একটা অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তির হৃদযন্ত্র প্রতি মিনিটে 60 বারের কম স্পন্দিত হয়। একজন স্বাস্থ্যবান প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এই স্পন্দনের মাত্রা মিনিটে 60-100 হতে হবে। সাধারণত, ক্রীড়াবিদ ও বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে কম হৃদস্পন্দনের মাত্রা দেখা যায়। কিছু তরুণ ও স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের মধ্যেও ব্রাডিকার্ডিয়া দেখা যায়, এটা স্বাভাবিক যদি না অন্যান্য উপসর্গগুলি দেখা যায়।
এর মূল কারন ও উপসর্গগুলি কি কি?
ব্রাডিকার্ডিয়ার সাথে যুক্ত সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলি হল:
- দুর্বলতা।
- পরিশ্রান্তি।
- সংজ্ঞানাশ।
- বমি বমি ভাব।
- ঘাম ঝরা।
- ধন্দ।
- শ্বাস নিতে সমস্যা।
- কম রক্ত চাপ।
- অল্প থেকে বেশি বুকে ব্যথা।
কোনও কোনও সময় কোনও উপসর্গই দেখা যায় না।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
ব্রাডিকার্ডিয়া হবার দু’টি কারণ আছে। সেগুলি হল:
- অন্তর্নিহিত কারণগুলি (অর্থাৎ, অভ্যন্তরীণ কারণগুলি):
- বাড়তে থাকা বয়স।
- হার্ট অ্যাটাক।
- অটোইমিউন রোগ (যখন রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা স্বাস্থ্যকর শরীরকলাগুলিকে আক্রমণ করে) যেমন প্রণালীবদ্ধ লুপাস, ফোলা বাত, এবং স্কেলেরোডার্মা।
- মাস্কুলার ডিস্ট্রফি (ক্ষয় রোগ)।
- হার্টে সংক্রমণ।
- হার্টের সার্জারি।
- স্লিপ অ্যাপনিয়া (ঘুমের সময় শ্বাস নেওয়ার সমস্যা)।
- জেনেটিক বা জিনগত।
- সাইনোআট্রিয়্যাল নোড (যে স্নায়ু তন্তুগুলি নিয়মিত হৃদস্পন্দনের ছন্দগুলির জন্য দায়ী)।
- বাহ্যিক কারণ (অর্থাৎ, বাইরের কারণগুলি)
- কাশি।
- বমি হওয়া।
- মূত্রত্যাগ করা।
- মলত্যাগ।
- বেটা ব্লগারসের মতো ওষুধ, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লগারস (দু’টোই উচ্চ-রক্তচাপ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়) এবং অ্যান্টি-অ্যারিমিক ওষুধ (শব্দযুক্ত, অনিয়মিত, দ্রুত হৃৎস্পন্দনের জন্য)।
- হাইপোথাইরয়েডিজম (শরীরে কম মাত্রার থাইরয়েড হরমোনের উপস্থিতি)।
- কম শারীরিক তাপমাত্রা (হাইপোথারমিয়া)।
- মস্তিষ্কে আঘাত, সুষুম্নাকাণ্ড বা স্নায়ুতে।
- শরীরে পটাসিয়াম স্তরের অসামঞ্জস্য।
এর রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা কিভাবে হয়?
ডাক্তার কারণগুলি জানার জন্য আপনার সম্পূর্ণ শারীরিক অবস্থার পূর্ব ইতিহাস ও কি কি ওষুধ আপনি খান, তা জানতে চাইতে পারেন এবং হৃদস্পন্দনের গতি ধীর হলে শারীরিক পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। ব্রাডিকার্ডিয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে, ডাক্তার বিশেষ ধরণের পরীক্ষা করতে পারেন, যেমন - ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি), যা হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা ধরতে পারে। অন্য পরীক্ষাও করতে হতে পারে, যেমন, রক্ত পরীক্ষা (হাইপোথাইরয়েডিজম বা ইলেক্ট্রোলাইট অসামঞ্জস্য সনাক্ত করার জন্য), স্লিপ অ্যাপনিয়া পরীক্ষা, ইলেক্ট্রোফিজিওলজি পরীক্ষা (অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের আসল কারণ জানতে) এবং মানসিক চাপের জন্য পরীক্ষা (মানসিক চাপে হৃদযন্ত্র কিভাবে কাজ করছে, তা জানতে)।
ব্রাডিকার্ডিয়া রুটিন চেক-আপের সময়েও নির্ণয় হতে পারে, যদি রোগী আগে কোনও উপসর্গ অনুভব না করে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট উপসর্গগুলি না থাকলে সাধারণত চিকিৎসা বিধান দেওয়া হয় না। ব্রাডিকার্ডিয়ার কারণের ওপর উপসর্গগুলির ধরণের রকমফের নির্ভর করে। যদি কোনও নির্দিষ্ট ওষুধের কারণে হৃদস্পন্দনের গতি হ্রাস হয়, তাহলে ওষুধের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া হয় বা তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাইনাস নোড ডিসফাংশানের ক্ষেত্রে, হৃদস্পন্দনের গতি স্বাভাবিক করতে পেসমেকার ব্যবহার করা হয়।