রক্তে ইনফেকশন - Blood Infection (Sepsis) in Bengali

Dr. Nabi Darya Vali (AIIMS)MBBS

February 08, 2019

May 01, 2023

রক্তে ইনফেকশন
রক্তে ইনফেকশন

সারাংশ

সংক্রামক এজেন্ট এবং তাদের বিষ মূল জায়গা থেকে রক্ত প্রবাহে ছড়িয়ে পড়াকে রক্তে ইনফেকশান বলা হয়। এটি মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণের একটি জটিলতা। রক্তে সংক্রমণ একটি গুরুতর অবস্থা যাতে জীবননাশ পর্যন্ত হতে পারে। অতএব, এর জন্য জরুরী ইনটেনসিভ চিকিৎসা প্রয়োজন। রক্তে ইনফেকশানের লক্ষণগুলি হল দেহের তাপমাত্রার ওঠা-নামা করা, হার্ট রেট এবং শ্বাসযন্ত্রের হার বৃদ্ধি (শ্বাস) হওয়া। রক্ত চাপ এবং শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ সহ একটি সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা এবং তার সাথে অনুসন্ধানী পরীক্ষা যেমন প্রস্রাব পরীক্ষা, কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সি-বি-সি) রোগ নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রক্ত পরীক্ষায় সাধারণত সাদা রক্ত ​​কোষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি দেখাবে। রক্ত সংক্রমণের চিকিৎসা অবস্থার তীব্রতা এবং ক্লিনিকাল লক্ষণ এবং উপসর্গগুলির উপর নির্ভর করে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট'এ ভর্তি করে শরীরে তরল পদার্থ এবং এন্টিবায়োটিক প্রবেশ করানো এবং তার সাথে ওষুধের সাহায্যে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করা চিকিৎসার অন্তর্গত হতে পারে। রক্তের ইনফেকশানের চিকিৎসার ফলাফল সব সময় ভাল হয় না কারণ চিকিৎসা শুরু করতে করতেই আরও একটি বা একাধিক অঙ্গ সঠিক ভাবে কাজ করা বন্ধ করতে পারে। ফলাফল সব সময় ভাল হয় না কারণ রক্তের ইনফেকশানের সঠিক উৎস নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।

রক্তে ইনফেকশন এর উপসর্গ - Symptoms of Blood Infection (Sepsis) in Bengali

সেপসিস বা রক্তে ইনফেকশান অনেকগুলি লক্ষণ এবং উপসর্গের সাথে জড়িত, ফলে রোগ নির্ণয় করা অসুবিধাজনক। অবশ্য, সংক্রমণের উৎস থাকুক বা না থাকুক তিনটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গকে নির্ণায়ক বলে মনে করা হয়। এই উপসর্গগুলি হল:

  • শরীরের তাপমাত্রা উঁচু বা কম
    রক্তে ইনফেকশানের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে বা কমে যেতে পারে। তাপমাত্রা 38° সেলসিয়াসের বেশি হতে পারে, ফলে জ্বর হয়, অথবা 36° সেলসিয়াসের নিচে চলে যেতে পারে, ফলে কাঁপুনি হয়।
  • হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি
    স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের হার মানে এক মিনিট সময়ে হৃদয় কতবার ধুক ধুক করে। স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের হার হল প্রতি মিনিটে 60-100 বার। মিনিটে 100 বারের বেশি হলে মনে করা হয় হৃদয়ের স্পন্দন বৃদ্ধি পেয়েছে, যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়।
  • শ্বাসের হার বৃদ্ধি
    শ্বাসের হার, যাকে শ্বাসপ্রশ্বাসের হারও বলা হয়, তা হল একজন মানুষ এক মিনিটে যতবার শ্বাস নেয়। স্বাভাবিক শ্বাসের হার হল প্রতি মিনিটে 16-20 বার। সেপসিস হলে শ্বাসের হার বেড়ে গিয়ে প্রতি মিনিটে 20 বেশি বারও হয়।

রক্তে ইনফেকশন এর চিকিৎসা - Treatment of Blood Infection (Sepsis) in Bengali

রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মাত্রই চিকিৎসা শুরু করতে হবে কারণ প্রাথমিক লক্ষ্য থাকবে হৃৎস্পন্দনের হার এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করা। চিকিৎসার অন্তর্গত থাকবে:

  • তরল পদার্থ
    রোগ নির্ণয়ের আগে, রোগীর প্রাথমিক স্থিতিশীলতার জন্য ইন্ট্রাক্যাথেটারের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত ভাবে স্বাভাবিক লবণাক্ত তরল রোগীর শিরাতে ইনজেকশন দিয়ে প্রবেশ করানো হতে পারে। এতে রক্ত চাপ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে। রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ, রক্ত চাপ এবং ল্যাকটেট'এর মাত্রা দেখে তরল পদার্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা যেতে পারে।
  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
    শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে চলতি পদ্ধতিতে তা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যেমন, ঠাণ্ডা জল দিয়ে রোগীর সারা গা মুছিয়ে দেওয়া, ঠাণ্ডা করার কম্বল দিয়ে রোগীকে ঢেকে দেওয়া, প্যারাসিটামল'এর মত এন্টিপাইরেটিক ওষুধ (জ্বরের ওষুধ) দেওয়া।
  • এন্টিবায়োটিক
    প্রাথমিক এন্টিবায়োটিক চিকিৎসা শুরু করা হয় এমন এন্টিবায়োটিক দিয়ে যা সংক্রমণ-কারী সম্ভাব্য সকল রকমের মাইক্রোবগুলির মোকাবিলা করতে পারে। সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় না হওয়া পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক দেওয়া হতে থাকে। রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষার ফলাফল যেই সঠিক সংক্রমণ-কারী মাইক্রোবটিকে সনাক্ত করে, তখন এক ঘণ্টার মধ্যে সেই মাইক্রোবটির জন্য সুনির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক দেওয়া শুরু হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সংক্রমণের সমস্ত উপসর্গ চলে যায় এবং রোগী সম্পূর্ণ নিরাময় হয় ততক্ষণ পর্যন্ত রোগীকে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হতে থাকে।
  • উৎস সনাক্তকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ
    রক্তের ইনফেকশানের উৎস সনাক্তকরণের মানে হল রোগীর শরীরের কোনও একটি জায়গায় যে সংক্রমণটি হয়েছে তাকে সনাক্ত করা, পরে যা রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন লক্ষণ এবং উপসর্গের কারণ হচ্ছে। সংক্রমণের উৎস খুঁজে বার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে তা অন্য জায়গায় ছড়িয়ে না পড়ে এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যত তাড়াতাড়ি উৎসটিকে খুঁজে পেয়ে এন্টিবায়োটিক চিকিৎসা শুরু হবে, ততই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আরও ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে।
  • রক্ত ​​চাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ
    যদি শুধু তরল পদার্থ যথেষ্ট না হয়, তাহলে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধও একই সাথে দেওয়া হয়। যদি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৭ গ্রাম/ডেসি লিটারের কম হয় তাহলে বাইরে থেকে শরীরের ভিতরে সম্পূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হবে। (আরও পড়ুন - উচ্চ রক্ত চাপের চিকিৎসা)
  • চাপ থেকে সৃষ্ট আলসার প্রতিরোধ
    দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে শরীরে শারীরবৃত্তীয় চাপ সৃষ্টি হতে পারে যা থেকে স্ট্রেস আলসার হয়। স্ট্রেস আলসার থেকে যে রক্তক্ষরণ হয় তা প্রতিরোধ করতে হবে যাতে রক্তের চাপ আরও না কমে যায়। এর জন্য প্রোফাইল্যাকটিকেলি এইচ2 ব্লকারের মত ওষুধ দেওয়া হয়। (আরও পড়ুন - পেটের আলসারের কারণ এবং চিকিৎসা)
  • ফুসফুস প্রতিরক্ষামূলক বায়ুচলাচল
    ফুসফুসের রক্ষার জন্য অবিরাম অক্সিজেন সরবরাহ চালু রাখতে হবে। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে ভেন্টিলেটার'এর মত যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে।
  • শল্য চিকিৎসা
    ফোড়া একটি পুঁজ ভরা গর্ত, যা সেপসিসের সংক্রমণের উৎস হতে পারে। একে বাদ দিতে হবে। শরীরের বাইরের দিকে যে কোনও জায়গার ফোড়া অল্প একটু কেটে ভিতরের পুঁজ বার করে দেওয়া যায়। কিন্তু যদি তা শরীরের ভিতরে হয়, তখন অস্ত্রোপচার করার দরকার হয়।

জীবনধারার ব্যবস্থাপনা

জীবনধারার পরিবর্তন সংক্রমণ, এবং তাই, সেপসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এইগুলির মধ্যে আছে:

  • স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য
    স্বাস্থ্যকর খাদ্যে থাকবে সমস্ত প্রয়োজনীয় মিনারেল, ভিটামিন, সুষম অনুপাতে কার্বোহাইড্রেট (60% পর্যন্ত), প্রোটিন (30% পর্যন্ত) এবং চর্বি (5-10%)। এতে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী থাকবে।
  • স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অর্জন
    স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যেমন খাওয়ার আগে অথবা শৌচকর্মের পরে হাত ধোয়া, পরিষ্কার পোশাক পড়া, বিছানার চাদর ইত্যাদি পরিষ্কার রাখা, বাড়ি এবং তার চার পাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখার অভ্যাস করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে।


তথ্যসূত্র

  1. Levy MM1, Fink MP, Marshall JC, Abraham E, Angus D, Cook D, Cohen J, Opal SM, Vincent JL, Ramsay G; International Sepsis Definitions Conference. 2001 SCCM/ESICM/ACCP/ATS/SIS International Sepsis Definitions Conference.. Intensive Care Med. 2003 Apr;29(4):530-8. Epub 2003 Mar 28. PMID: 12664219.
  2. Cohen J. The immunopathogenesis of sepsis. Nature. 2002; 20:185-191. PMID: 12490963.
  3. Aitken LM, Williams G, Harvey M, et al. Nursing considerations to complement the Surviving Sepsis Campaign guidelines. Crit Care Med. 2011; 39:1800–1818. PMID: 21685741.
  4. Liberati A, D’Amico R, Pifferi S, et al. Antibiotic prophylaxis to reduce respiratory tract infections and mortality in adults receiving intensive care. Cochrane Collaboration. 2010; 9:1–72. PMID: 14973945.
  5. O’Grady NP, Alexander M, Dellinger EP, et al. Guidelines for the prevention of intravascular catheter-related infections. Clin Infect Dis. 2002; 35:1281–1307. PMID: 12517020
  6. De Jonge E, Schultz MJ, Spanjaard L, et al. Effects of selective decontamination of digestive tract on mortality and acquisition of resistant bacteria in intensive care: A randomised controlled trial. Lancet. 2003; 362:1011–1016. PMID: 14522530
  7. Kumar A, Safdar N, Kethireddy S, et al. A survival benefit of combination antibiotic therapy for serious infections associated with sepsis and septic shock is contingent only on the risk of death: A meta-analytic/ meta-regression study. Crit Care Med. 2010; 38:1651–1664. PMID: 20562695
  8. Shankar-Hari, M., Phillips, G. S., Levy, M. L., Seymour, C. W., Liu, V. X., Deutschman, C. S. Developing a New Definition and Assessing New Clinical Criteria for Septic Shock. JAMA, 2016; 315(8), 775. PMID: 26903336
  9. Kumar Anand et al. Duration of hypotension before initiation of effective antimicrobial therapy is the critical determinant of survival in human septic shock. Crit Care Med. 2006; 34:1589–1596. PMID: 16625125
  10. Singer M, Deutschman CS, Seymour CW, et al. The Third International Consensus Definitions for Sepsis and Septic Shock (Sepsis3). JAMA. 2016; 315:801.
  11. Rivers, E., Nguyen, B., Havstad, S., Ressler, J., Muzzin, A., Knoblich, B., Peterson, E., et al. Early goal-directed therapy in the treatment of severe sepsis and septic shock. . New England Journal of Medicine, 2001; 345(19), 1368-1377.

রক্তে ইনফেকশন জন্য ঔষধ

Medicines listed below are available for রক্তে ইনফেকশন. Please note that you should not take any medicines without doctor consultation. Taking any medicine without doctor's consultation can cause serious problems.