অ্যাস্কারিয়াসিস কি?
অ্যাস্কারিয়াসিস হল একটি পরজীবী সংক্রমণ, যা গোলাকার কৃমির জন্য হয়ে থাকে। এই পরজীবীটির দৈর্ঘ্য 40 সেন্টিমিটার আর ব্যাস 6 মিলিমিটার এবং এটি ভারতে খুবই প্রচলিত একটি সংক্রমণ। বিশ্ব জুড়ে আনুমানিক 1 বিলিয়ন মানুষ এই কৃমির দ্বারা আক্রান্ত হয়। এটি সব বয়সের মানুষেরই হয়, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলগুলিতে অ্যাস্কারিয়াসিস বেশী পরিমানে লক্ষ্য করা যায়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডাবলু এইচ ও) অনুসারে, 870 মিলিয়ন শিশু কৃমি-সংক্রমণ প্রবণ এলাকায় বসবাস করে।
অ্যাস্কারিয়াসিস রোগের মূল লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
যারা এই রোগে আক্রান্ত হন তাদের কোন উপসর্গই থাকে না বা অল্প কিছু উপসর্গ দেখা যায়।
সাধারণ কিছু উপসর্গ হল:
লঘু বা মাঝারি ক্ষেত্রে
- পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি।
- বমি বমি ভাব।
- বমি করা।
- ডাইরিয়া বা পেট খারাপ।
- রক্ত আমাশা।
অবস্থা গুরুতর হলে
- তীব্র পেটের যন্ত্রণা।
- অবসাদ।
- বমি করা।
- ওজন কমে যাওয়া।
- বমিতে বা মলে কৃমির উপস্থিতি।
অবস্থা খুব বেশী সঙ্গীন হলে পুষ্টির অভাব হতে পারে, অন্ত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়, আর বাচ্চাদের মধ্যে বেড়ে ওঠার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু রোগীর ফুসফুস সম্পর্কিত সমস্যাও হতে পারে, যেমন বুকের ভিতরে সাঁই সাঁই আওয়াজ এবং কাশি হওয়া।
নিম্নলিখিত কিছু সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে:
- মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া।
- মলত্যাগে কষ্ট বা বাঁধা।
- অ্যাপেন্ডিসাইটিস।
- লিভার এবং গলব্লাডারের রোগ।
- প্যানক্রিয়াটিক সিউডোসিস্ট।
অ্যাস্কারিয়াসিস রোগের মূল কারণগুলি কি কি?
অ্যাস্কারিয়াসিস রোগের কারণ হল পরজীবী অ্যাস্কারিস লুম্ব্রিকইডস। ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সংস্পর্শ দ্বারা এই রোগ ছড়ায় না কিন্তু এটি ছড়ায় একজনের সংক্রামিত মল থেকে যাতে অ্যাস্কারিয়াসিস ডিম্বক থাকে। এই ডিম্বকগুলি প্রাকৃতিক সার রূপে শস্য খামারে পাঠানো হতে পারে।
যেভাবে এই রোগ ছড়াতে পারে তা হল:
- গোলাকার কৃমির ডিম্বক দ্বারা সংক্রামিত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা।
- সংক্রামিত মাটিতে খেলা করা বা ধুলিকণা নিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ।
- খোলা স্থানে মলত্যাগ করা ও খুবই খারাপ স্বাস্থ্যবিধি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব।
- পশুদের সাথে সংস্পর্শে আসা যেমন শুয়োর।
এই রোগ কিভাবে নির্ণয় হয় ও চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
এই কৃমির জীবন চক্র হল 4 থেকে 8 সপ্তাহের মতো।
নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে এই রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে:
- মাইক্রোস্কপি: মলের সরাসরি পরীক্ষা করা।
- ইওসিনোফিলিয়া: বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ইওসিনোফিল কাউন্টের (এক ধরণের শ্বেত রক্ত কণিকা [ডাবলু বি সি এস]) উপস্থিতি সনাক্তকরণ।
- ইমেজিং বা প্রতিবিম্বিত করা: কৃমির উপস্থিতি ও এর দ্বারা কৃত বিপত্তিকে চাক্ষুষ করা।
- সেরোলজি (সচরাচর করা হয় না): এই পরজীবীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সনাক্তকরণ।
এই রোগের চিকিৎসা করতে অ্যান্থেলমিন্টিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যাতে কৃমি নয় বেরিয়ে যাবে নয়তো মরে যাবে। ডাক্তারেরা গর্ভাবস্থায় এই ওষুধ না খাওয়ার উপদেশ দেন কারণ তা ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে।
- অপারেশন হওয়ার পর যে যত্ন নেওয়া উচিত ও পুনর্বাসন পদ্ধতিগুলি হল:
- শিশুদের সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ভিটামিন এ দেওয়া হয়।
- অপারেশনের জায়গাটিতে 3-6 মাস অন্তর পুনরায় চিকিৎসা করানো।
- ওষুধ ও থেরাপির সমন্বয় ঘটানো যাতে সবচেয়ে বেশী ফলাফল পাওয়া যায়।
নিজের যত্ন নেওয়ার কিছু বিধি
- ভালোভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও ব্যক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা যাতে পুনরায় কোনরকম সংক্রমণ না ঘটে।
- সার হিসেবে মানুষের মল ব্যবহার না করা।
- এটা খেয়াল রাখা যে খাওয়ার আগে সব খাবার যাতে ঢাকা থাকে।
- খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়া শেখানো ও মেনে চলা।
- যতটা সম্ভব মাটিতে বাচ্চাদের না খেলতে দেওয়া।
- বোতলের জল খাওয়াই ভালো, রান্না করা খাবার খাওয়ার আর গরম খাবার খাওয়া ভালো, এবং ফল ও সব্জি ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া উচিত।
এইসকল উপদ্রবের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করাই ভালো। উপরে উল্লেখিত চিকিৎসার পদ্ধতিগুলি মেনে চললে খুব গুরুতর কিছু হওয়া থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।