এওরটিক স্টেনোসিস কি?

এওরটিক স্টেনোসিস হলো একটি অবস্থা যখন এওর্টা সরু হয়ে যায়, যা আমাদের হৃদযন্ত্রের সবচেয়ে বড়ো রক্তবাহী নালী। এওর্টা সরু হয়ে আসার ফলে রক্ত পাম্প করতে অসুবিধে হয় এবং সাধারণত হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে হৃদপিণ্ডের পেশীগুলি পুরু হয়ে যায়, এবং এই অতিরিক্ত চাপের ফলে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পড়তে পারে। 65 বছরের উপরে যাঁদের বয়স, তাঁদের মধ্যে এওরটিক স্টেনোসিসের সমস্যার প্রভাব 7 শতাংশ পর্যন্ত এবং পুরুষদের মধ্যেই এই সমস্যা বেশি দেখা যায় (80 শতাংশ)। শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রায়শই মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যেই এই সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়। ভারতে হৃদযন্ত্রের প্রকোষ্ঠজনিত সমস্যার প্রভাব 2.8 শতাংশ, তার মধ্যে 0.4 শতাংশ অর্টিক বা এওরটিক স্টেনোসিসের সমস্যা।

এওরটিক স্টেনোসিসের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?

এই রোগের নানান উপসর্গগুলি নির্ভর করে রোগীর বয়স এবং অর্টিক বা মহাধমনীর রক্তপ্রবাহের পথ কতটা সরু হয়ে পড়ে, তার ওপর। অনেক সময় রোগী উপসর্গগুলি বুঝতে পারেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায় এবং সেক্ষেত্রে রক্তপ্রবাহের বাধা পাওয়ার ব্যাপারটি সত্যিই চিন্তাজনক হয়ে দাঁড়ায়।

স্টেনোসিসের সমস্যা গুরুতর আকার নিলে নিম্নলিখিত উপসর্গ ও লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:

বাচ্চাদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা আসে এবং ওজনও কমে যেতে পারে। জন্মের কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই শিশুদের মধ্যে ক্লান্তির পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেনোসিসের সমস্যা গুরুতর আকার নিতে পারে এবং তার থেকে ব্যাকটিরিয়া ঘটিত সংক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি চলে আসে।

এর প্রধান কারণ কি?

এই সমস্যাটি জন্মগত হতে পারে অথবা পরবর্তীকালে শরীরে দেখা দিতে পারে।

  • জন্মগত সমস্যা
    • শৈশবে এওরটিক স্টেনোসিসের সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণ অর্টিক ভাল্ভের বিকৃতি হতে পারে।
    • শুরুতে সমস্যা মারাত্মক আকার না নিলেও, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাল্ভ বা প্রকোষ্ঠের ভিতরকার অংশ সরু হয়ে পড়তে পারে অথবা ফুঁটো হয়েও যেতে পারে। তখন অর্টিক ভাল্ভ সারিয়ে তোলা অথবা প্রতিস্থাপন করা, প্রায় অসম্ভব।
  • পরবর্তীকালে শরীরে দেখা দেওয়া
    • প্রাপ্তবয়ষ্কদের ক্ষেত্রে, স্ট্রেপ্টোকক্কাল ইফেকশন (রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর) এর কারণে মানুষের দেহে অর্টিক স্টেনোসিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে যার থেকে শরীরে ছাপ এবং অবশেষে স্টেনোসিসের সমস্যা তৈরি হয়।
  • ক্যালসিয়াম জমে ওঠা
    • ভাল্ভের চারপাশে ক্যালসিয়াম জমা হলে, তা শক্ত হয়ে যায় এবং তার থেকে স্টেনোসিস হতে পারে।
    • ক্যালসিয়াম জমার কারণ সবসময় বাইরে থেকে ক্যালসিয়াম আহরণ নাও হতে পারে।
    • বুকে রেডিয়েশন থেরাপি করালে, তা ক্যালসিয়াম জমা বাড়াতে পারে।

কিভাবে রোগ নির্ণয় এবং তার চিকিৎসা করা হয়?

রক্ত প্রবাহে অস্বাভাবিকতার গুরুতর ইঙ্গিত হলো হার্ট মারমার বা কলকল শব্দ হওয়া, টিকটিক শব্দ বা অস্বাভাবিক কোনও শব্দ আসা যা স্টেথোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করলে বা ক্ষীণ নাড়ির গতি অথবা ঘাড়ের কাছে নাড়ির গতি পরীক্ষা করলেও বোঝা যায়। অর্টিক স্টেনোসিসের সমস্যায় নিম্ন-রক্তচাপ সর্বদা লক্ষণীয়।

চিকিৎসক যেসমস্ত টেস্ট বা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন:

  • বুকের এক্স-রে।
  • ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি)।
  • এক্সারসাইজ স্ট্রেস টেস্ট বা এক্সারসাইজ টলারেন্স টেস্ট (ইটিটি)।
  • লেফট কার্ডিয়াক ক্যাথেটেরাইজেশন।
  • হৃদযন্ত্রের ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই)।
  • ট্রান্স ইসোফেগাল ইকোকার্ডিওগ্রাম (টিইই)।

স্টেনোসিসের অবস্থা কতোটা গুরুতর চিকিৎসার রকমফের তার ওপর নির্ভর করে। হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পড়া অথবা হৃদস্পন্দনের ছন্দে অনিয়মিতভাব দেখা দিলে, তার চিকিৎসা প্রধানত ওষুধ দিয়েই করা হয়। এইরকম অবস্থায় রক্তচাপকে সবসময় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা উচিত। স্টেনোসিসের সমস্যা রয়েছে, এমন কোনও রোগী যদি দাঁতের চিকিৎসা করাতে যান অথবা কোলোনস্কোপি করান, তাহলে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা তাঁকে কি ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে, সে ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। ব্যাকটিরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিসের সমস্যা এড়াতে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পর চিকিৎসক শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার পরামর্শ দেন। সাধারণত, অর্টিক বা এওরটিক স্টেনোসিসের সমস্যায় ভোগা প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তি অথবা যে সমস্ত শিশুদের উপসর্গ দেখা দেয়, তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হৃদপিণ্ড সারিয়ে তুলতে অস্ত্রোপচার অথবা অর্টিক ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা হয়। যে সমস্ত রোগীদের হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কৃত্রিম ভাল্ভ বসানো হয়, তাঁদের রক্ত পাতলা করার ওষুধ খেতে হয়, যাতে ভাল্ভের মধ্যে রক্ত জমাট না বাঁধে। অনেক সময় অস্ত্রোপচারের পরিবর্তে বা তার আগে রোগীকে ভাল্ভুলোপ্লাস্টি নামক বেলুন পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের চেয়ে এই ধরণের চিকিৎসায় কম কাটাছেঁড়া হয়।

ওষুধ খাওয়া ছাড়া আর যেসব পদক্ষেপ নিতে হয়:

  • পরিশ্রমসাধ্য বা প্রতিযোগিতামূলক খেলা এড়িয়ে চলা।
  • ধূমপান ত্যাগ করা।
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করানো।
  • রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দিচ্ছে কি না, তার ওপর নজর রাখা।
  • নিয়মিত চেক-আপ বা শারীরিক পরীক্ষা করানো।

চিকিৎসার পাশাপাশি রোজকার জীবনযাত্রার ধরণে পরিবর্তন আনলে এওরটিক স্টেনোসিস রোগের প্রবলতাও কমানো সম্ভব।

Read more...
Read on app