গর্ভাবস্থায় অম্লতা কি?
অম্লতা হল গর্ভাবস্থার একটি সাধারণ অসুখ। এটা অম্বল বা বুকজ্বালা নামেও পরিচিত। অম্লতার বৈশিষ্ট্য হলো এটি বুকের মাঝখানে ঠিক পাকস্থলীর উপরে জ্বলন্ত অনুভূতির সৃষ্টি করে । যদিও গর্ভাবস্থায় অম্লতা ক্ষতিকারক নয় এবং স্বাভাবিক ব্যাপার, তবুও এটি খুবই অস্বস্তিদায়ক হতে পারে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?
অম্লতায় জ্বালাপোড়া করার একটি অনুভূতি হয়, যা গলার নীচের অংশ থেকে ব্রেস্টবোনের নীচ পর্যন্ত প্রসারিত হয়, এটা গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের খুব সাধারণ ব্যাপার।
অম্লতা বা অম্বল হল মূলতঃ পাকস্থলীর পাকরস যা খাদ্যনালীর ভিতর দিয়ে উল্টোদিকে প্রবাহিত হয়। যার লক্ষণ হলো টক ঢেঁকুর, বমি বমি ভাব এবং মুখের মধ্যে টকভাব, যা অম্লতা হলে অনুভূত হয়।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
গর্ভাবস্থায় অম্লতার প্রধান কারণ হলো হরমোনের পরিবর্তন। গর্ভাবস্থায় অম্বল ঘন ঘন হয় প্রোজেস্টেরন নামক হরমোনের জন্য যা পাচনতন্ত্রের পেশিকে প্রভাবিত করে, এটি খাদ্যনালীর নীচের সেই ভাল্ভকে শিথিল করে দেয় যেটি খাদ্য উদ্গিরণকে আটকায় এবং কিছু নির্দিষ্ট খাদ্যের সহ্যশক্তিকেও পরিবর্তন করতে পারে।
এরই সাথে, জরায়ুর বিস্তৃতি পেটের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং পাকস্থলীর ভিতরে থাকা বস্তুকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়, যার ফলে অম্লতা আর জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হয়।
কিভাবে এটি নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
গর্ভাবস্থায় অম্লতা সাধারনত কিছু উপসর্গের উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়, যদি এই অবস্থা প্রায়ই হয় তাহলে ডাক্তার অ্যান্টাসিড খাবার জন্য নির্দেশ দেন।
যদিও গর্ভাবস্থা থাকাকালীন অম্লতা একটি সাধারন ব্যাপার এবং বিপজ্জনক বিষয় নয়, তাই ঘরোয়া কিছু প্রতিকারের মাধ্যমে এর সমাধান করা সম্ভব। ঘরোয়া প্রতিকারগুলি হলো:
- আদা চা (পরিমিত ব্যবহার)
- জল
- ঘোল
- চুইং গাম
- ঠান্ডা দুধ
- নারকেলের জল
অম্লতা কমতে সাহায্য করার জন্য অনেকগুলি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ রয়েছে :
- সারাদিনে প্রচুর পরিমানে জল ও তরল পদার্থ পান করুন।
- মশলাদার ও তৈলাক্ত খাবার, মদ, লেবু জাতীয় ফল, কফি বর্জন করুন। এগুলি অম্লতাকে বাড়ায় এবং আরো খারাপ করে।
- প্রস্তুত (রেডি-টু-ইট) খাবার ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করুন, যাতে বেশী মাত্রাতে তেল ও নুন আছে।
- অল্প পরিমানে ও ঘন ঘন খাবার খান। খাবার গিলে ফেলার আগে ভালো করে চিবিয়ে নিন।
- দীর্ঘ সময়ের জন্য না খেয়ে থাকা উচিত নয়।
- খাবার সময় বেশী পরিমাণে জল বা তরল পদার্থ খাবেন না। কার্বোনেটেড ওয়াটার বা সোডা বর্জন করুন।
- খাবার খাওয়ার পর তখনই শোয়া উচিত নয়।
- শরীরের উপরের অংশ বালিশ দিয়ে উচুঁ করে রাখুন যাতে পাকস্থলীর অম্ল বা অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ঢুকতে না পারে।