সিফিলিস রোগ কাকে বলে?
সিফিলিস একটি সংক্রামক রোগ যা মূলত যৌনপথে সংবাহিত হয়। কিছুক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এই রোগটি একজন মানুষের মধ্যে দীর্ঘসময় সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে, এরা সংক্রমণটির বাহকে পরিণত হয়। উৎসগত ভাবে সিফিলিস একটি ব্যাকটেরিয়াল রোগ।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
সিফিলিস ঘটে তিনটি পৃথক পর্যায়ে, এর প্রতিটি পর্যায়ের কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ আছে।
- প্রাথমিক পর্যায়ের সিফিলিস:
- এটি একটি প্রারম্ভিক পর্যায় যা সংক্রমণের 3 মাস অবধি দেখা যায়।
- আক্রান্তের শরীরে ক্ষুদ্র যন্ত্রণাহীন ক্ষতের সৃষ্টি হয়, তবে অন্য কোন গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয় না।
- কোন হস্তক্ষেপ ছাড়াই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের সিফিলিসের নিরাময় ঘটে।
- দ্বিতীয় পর্যায়ের সিফিলিস:
- উপসর্গের অগ্রগতি ঘটে, হাতে, পায়ে ও যৌনাঙ্গে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
- সংক্রমণের 6 মাস পর পর্যন্ত এই পর্যায়টি স্থায়ী হয়।
- এছাড়াও, আক্রান্তের মধ্যে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা এবং যৌনাঙ্গে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
- তৃতীয়/অন্তিম পর্যায়ের সিফিলিস:
- এটি রোগের অগ্রসর পর্যায় যেখানে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
- এই পর্যায়ে সবথেকে গুরুতর যে উপসর্গগুলি দেখা যেতে পারে সেগুলি হল অন্ধত্ব, পক্ষাঘাত এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা।
- চিকিৎসা করা না হলে এটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
- সিফিলিস ঘটানোর জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াটি হল ট্রেপোনেমা প্যালিডাম।
- এই সংক্রমণটি সাধারণত অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়।
- সমকামী পুরুষদের মধ্যে সিফিলিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- আক্রান্ত মা থেকে তার সদ্যোজাত শিশুর মধ্যে এই সংক্রমণ পরিবাহিত হতে পারে, একে বলে কনজেনিটাল সিফিলিস বা জন্মগত সিফিলিস।
- আক্রান্ত ব্যক্তির অনাবৃত ফুসকুড়ি বা ক্ষতের সংস্পর্শে আসার ফলেও এই সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
কিভাবে এই রোগটি নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
সিফিলিস রোগের নির্ণয়করণ:
- কোন পরীক্ষার আগে চিকিৎসক রোগীর থেকে তার যৌনসম্পর্কের ইতিহাস সংগ্রহ করবেন এবং ত্বক, বিশেষত যৌনাঙ্গের ত্বক, পর্যবেক্ষণ করবেন।
- যদি উপসর্গ ও পর্যবেক্ষণ সিফিলিসের দিকে ইঙ্গিত করে তবে রক্ত পরীক্ষা করা হয়, এবং সিফিলিসের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধানে শরীরের ক্ষতগুলি পরীক্ষা করা হয়।
- যদি রোগী তৃতীয় পর্যায়ের সিফিলিসে ভুগছে বলে সন্দেহ করা হয় তবে বিভিন্ন অঙ্গগুলির অবস্থা জানার জন্য পরীক্ষা করা হয়।
- সুষুম্নাকান্ড থেকে তরল সংগ্রহ করে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়, এর থেকে জানা যায় রোগটি স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলেছে কিনা।
- সিফিলিস নিশ্চিতভাবে নির্ণয় হলে আক্রান্তের যৌনসঙ্গীকেও এই রোগটির জন্য পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সিফিলিসের চিকিৎসা:
- গোড়ার দিকে সিফিলিসের জন্য এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, এগুলো সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। সিফিলিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি পরিচিত এন্টিবায়োটিক হল পেনিসিলিন।
- তৃতীয় পর্যায়ের সিফিলিসে ব্যাপক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, মূলত উপসর্গগুলির উন্নতির জন্য, কারণ এই পর্যায়ে জীবাণুটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা আর সম্ভব নয়।
- চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর যেকোন যৌন কার্যকলাপ বা ঘনিষ্ঠ শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।