মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) কি?
এমএস হল একটা দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেটা মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড, এবং চোখের স্নায়ুকে প্রভাবিত করে। যেহেতু এই অসুখটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা নিজের টিস্যুকেই আক্রান্ত করে তাই এমএসকে অটোইমিউন অসুখও বলা হয়। এই অবস্থায়, শরীর মাইলিনে ক্ষতি সৃষ্টি করে - যেটা হলো একটা চর্বিযুক্ত পদার্থ যা মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ডে নার্ভ ফাইবার্সকে ঘিরে থাকে। এই হানি অধিকতর হওয়ার ফলে স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে বার্তা সরবরাহ পরিবর্তীত বা বন্ধ হয়ে যায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
উপসর্গগুলি নিম্নে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে শ্রেণীবদ্ধ রয়েছে:
প্রথম পর্যায়ভুক্ত উপসর্গ
সাধারণ
- অসাড়তা ও ঝনঝন করা।
- চুলকানি।
- জ্বলা।
- হাঁটতে অসুবিধা (ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাংসপেশীর সমস্যা, ভারসাম্যের অভাব বা কাঁপার কারণে)।
- দেখতে অসুবিধা।
- কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ব্লাডারের অকার্যকারীতা।
- মাথা ঘোরা।
- যৌন সমস্যা।
বিরল উপসর্গ
- গিলতে অসুবিধা।
- কথা বলাতে সমস্যা।
- শ্বাস নিতে অসুবিধা।
- কানে কম শোনা।
- খিঁচুনি।
- মাথাব্যথা।
দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত উপসর্গ
- ইউরিনারী ট্র্যাক্টে সংক্রমণ।
- শরীরের নিষ্কৃয়তা।
- গতিশীলতা হারানো।
তৃতীয় পর্যায়ভুক্ত উপসর্গ।
- সামাজিক দুশ্চিন্তা।
- বৃত্তিমূলক জটিলতা।
- শিখতে অসুবিধা।
- হতাশা।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
এমএসের কারণ অজানা। যাইহোক, পরিবেশগত এবং জেনেটিক বিষয়গুলি এই অসুখের জন্য দায়ী হতে পারে।
এমএসের জন্য দায়ী ঝুঁকির বিষয়গুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল:
- 15 এবং 60 বছরের মানুষেরা সাধারণত আক্রান্ত হয়।
- পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের বেশী এমএস হতে দেখা যায়।
- এমএস এর পারিবারিক ইতিহাস।
- ভাইরাস যেমন এপস্টাইন-বার ভাইরাস এমএসে সাথে যুক্ত।
- থাইরয়েড, ডায়াবেটিস বা ইনফ্ল্যামাটরি বাওয়েল ডিজিজে ভোগা ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি।
- রক্তে ভিটামিন ডি এর মাত্রা কম হওয়া।
- নিরক্ষরেখা থেকে দূরে থাকা।
- বেশী ওজন।
- ধূমপান।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
যেহেতু এমএসের উপসর্গগুলি অন্যান্য স্নায়ুর রোগগুলির অনুকারী হতে পারে তাই এই রোগের নির্ণয় করা কঠিন।
চিকিৎসক আপনার মেডিকেল ইতিহাস জানতে চাইতে পারেন এবং আপনার মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড এবং চোখের স্নায়ুর লক্ষণ দেখতে পারেন।
নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো এমএস-এর নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে:
- একইরকমের উপসর্গ থাকা রোগগুলি বাতিল করতে রক্তপরীক্ষা করা হয়।
- ভারসাম্যের মূল্যায়ণ,সমন্বয়, দৃষ্টি, এবং স্নায়ুর কার্যকরীতা নির্ধারণ করতে অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ করা হয়।
- ম্যাগ্নেটিক রেসোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) শরীরের কাঠামো দেখার জন্য করা হয়।
- প্রোটিনের অস্বাভাবিকতা নির্ণয়ের জন্য সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড ব্যবহার হয়।
- আপনার মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রিকাল সক্রিয়তা পরিমাপ করার জন্য পরীক্ষা করা হয়।
এমএসের কোনো চিকিৎসা নেই, কিন্তু কিছু চিকিৎসা শরীরের ক্রিয়াকলাপ উন্নত করতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে:
- অসুখের গতি কমাতে, আক্রমণ আটকাতে অথবা চিকিৎসা করতে, এবং উপসর্গগুলিকে আরাম দিতে ওষুধ দেওয়া হয়। স্টেরয়েড এমএস আক্রমণের গতি কম করে এবং তীব্রতা কমায়। পেশী রিলাক্সান্টস্ বা ট্র্যাঙ্কুইলাইজারস পেশীর খিঁচুনি শিথিল করে।
- ফিজিওথেরাপি শক্তি এবং ভারসাম্য রক্ষা করতে এবং ক্লান্তি ও ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
- একটা লাঠি, ওয়াকার বা ব্রেসেসের সাহায্যে আপনি সহজে হাঁটতে পারবেন।
- ক্লান্তিভাব ও চাপ কমাতে ব্যায়াম ও যোগা দরকার।