ফ্যাটিগ বা অবসাদ কি?
ফ্যাটিগ অর্থাৎ শারীরিক অবসাদ বা ক্লান্তি হলো শরীরে মাত্রারিক্ত ও প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করা যা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে নাও কমতে পারে। অসুস্থতা, ঘুমে অস্থিরতা বা ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, কোনও খাদ্যাভাস বা কাজকর্মের কারণে যে শারীরিক অবসাদ বা ক্লান্তি আসে তা প্রায় ছ’মাস মতো থাকে এবং সাধারণত দেখা যায় যে বিশ্রাম নিলে, সেই ক্লান্তিভাব অনেকটাই কেটে যায়। শরীরে দীর্ঘস্থায়ী অবসাদ বা ক্লান্তি বিনা কারণে হয় এবং তা ছ’মাসের বেশি স্থায়ী হয়। শারীরিক ক্লান্তি অথবা দীর্ঘমেয়াদি অবসাদের উপসর্গ সঙ্গে বেশীরভাগ সময় মানসিক উত্তেজনার ব্যাপারটি জড়িত থাকে।
এর সঙ্গে যুক্ত প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
অবসাদ বা ক্লান্তির সঙ্গে জড়িত অনেকরকম লক্ষণ ও উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তির অসুখ অথবা ম্যালাগিক এনসেফালোম্যায়লাইটিসের (এমই) গুরুতর লক্ষণ হলো শারীরিক অবসাদ বা ক্লান্তি এবং তা যেভাবে চিহ্নিত করা হয়:
- শারীরিক অবসাদ বা ক্লান্তি দেখা দেওয়ার আগে রোজকার কাজকর্মের সক্ষমতা লক্ষ্যণীয়ভাবে হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- মায়ালজিক এনসেফালোম্যায়লাইটিস (এমই) দেখা দেওয়ার পর রোজকার কাজকর্ম করার পর প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব হয়, যেটা আগে হতো না।
- বিশ্রাম নেওয়া ও ঘুমের পরেও অবসাদ বা ক্লান্তি থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।
- মানসিক অথবা শারীরিক পরিশ্রমসাধ্য কাজ করার পর ক্লান্তি বৃদ্ধি পাওয়া ও তার সঙ্গে আরও অনেক উপসর্গ অনুভব করা। এক্ষেত্রে অবসাদ বা ক্লান্তি বেশ কয়েকদিন স্থায়ী হয়।
- মনে রাখা ও চিন্তাভাবনায় সমস্যা, মনোযোগে অসুবিধা এবং আবেগজনিত সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি।
- ঘুমের ধরণের সমস্যা (অত্যাধিক ঘুমনো, কম ঘুমনো, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে)
- মাথাব্যথা, মাথাঘোরা ও ঝাপসা দেখা।
- শরীরে কাজ করার জন্য শক্তির অভাব এবং সঙ্গে পেশী ও গাঁটে ব্যথা।
- ঘনঘন গলায় ব্যথার সমস্যা।
- হজমের গোলমাল (আরও পড়ুন: বদহজমের চিকিৎসা)
- ফ্লু’র মতো উপসর্গ দেখা দেওয়া।
- লিম্ফ নড বা লসিকাগ্রন্থি ফুলে উঠে ত্বকে ফোঁড়ার মতো ওঠা, তা যন্ত্রণাদায়ক ও নরম হয়।
এর প্রধান কারণ কি?
অবসাদ বা ক্লান্তির জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী থাকে। যেমন:
- চিকিৎসাজনিত অবস্থা এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তাপ্লতা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, গর্ভাবস্থা, সংক্রমণ, অস্ত্রোপচার, থাইরয়েডের সমস্যা ও যক্ষারোগের মতো অসুখ।
- ক্যান্সার ও মানসিক অবসাদের মতো অন্যান্য চিকিৎসাজনিত অবস্থার কারণে চিকিৎসা হয়ে থাকলে।
- মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ও উদ্বেগ।
- খাদ্যাভাস ও ঘুমের ধরণের মতো রোজকার রুটিনে ব্যাঘাত।
কিভাব রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
ডাক্তার এই ধরণের অবস্থায় একাধিক ল্যাবরেটরি টেস্ট করাতে বলেন এবং আর অন্য কোনও কারণ আছে কি না ক্লান্তির জন্য, তা নিশ্চিত হতে অন্যান্য তথ্যও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন। কোনও উপযুক্ত কারণ ছাড়া অবসাদ বা ক্লান্তির কারণ নির্ণয়ের জন্য আগেকার চিকিৎসাজনিত ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
- চিকিৎসাজনিত ইতিহাস:
- উপসর্গ কখন এবং কতদিন ধরে দেখা দিয়েছে
- রোজকার রুটিন, চিকিৎসাজনিত পুরনো রিপোর্ট, পুরনো অসুখ ও তার চিকিৎসা ইত্যাদি।
- শারীরিক পরীক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- লিম্ফ নডের পরীক্ষা এবং পা ফুলেছে কি না দেখা হয়
- হৃদস্পন্দনে অস্বাভাবিকতা এবং শ্বাস নেওয়াতে সমস্যা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য বুকের পরীক্ষা করানো হয়
- স্নায়ুতন্ত্র ও থাইরয়েড গ্রন্থির পরীক্ষা
- তথ্য খুঁটিয়ে দেখা ও ল্যাব টেস্টের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
- রক্তপরীক্ষা: কম্প্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি), ইরিথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন রেট (ইএসআর) ও থাইরয়েড প্রোফাইল
- মূত্র পরীক্ষা
- বুকের এক্স-রে ও ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি)
- আরও অন্যান্য টেস্ট করানো হয় এবং তা ক্লান্তির কারণের ওপর নির্ভর করে
চিকিৎসা পদ্ধতিতে যা অনুসরণ করা হয়:
- ক্লান্তি বা অবসাদের জন্য দায়ী যে কারণ বা কারণগুলি, তার যথাযথ চিকিৎসা
- ক্যান্সার, সংক্রমণ, মানসিক অবসাদ, থাইরয়েড সমস্যা ইত্যাদির জন্য ওষুধ প্রয়োগ
- উপসর্গগুলির ওপর ক্রমাগত নজর রাখা
- প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমিত ব্যায়াম করা
- বড় কাজকে ছোটো ছোটো পর্বে ভাগ করে নেওয়া
- কাজের মাঝে বিরতি নেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো
- একটি সময়ে একাধিক কাজ হাতে না নিয়ে, ছোটো ছোটো কাজ হাতে নেওয়া
- ধ্যান অথবা যোগা করা
- পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম ও ঘুম