ভিটামিন ই কি?

ভিটামিন ই একটি ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন এবং একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা আপনার ত্বককে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি প্রাকৃতিক ভাবে অনেক খাদ্য বস্তুতে পাওয়া যায় এবং যতক্ষণ প্রয়োজন না হয় ততক্ষণ দেহে মজুদ থাকে। ভিটামিন ই'তে আটটি বিভিন্ন যৌগ পদার্থ আছে, যাদের মধ্যে অন্যতম সক্রিয় হল আলফা-টোকোফেরল। এই যৌগটি চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা (ইলাস্টিসিটি) বজায় রাখে, ফলে ক্ষয় ও ক্ষতি এড়ানো যায় এবং ফ্রি র‍্যাডিকেল ঘটিত অকাল বার্ধক্য বা বলি রেখাও এড়ানো যায়। ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের অনেক উপকারে লাগে, যেগুলি নিচের অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে, কিন্তু তার আগে জেনে নেওয়া যাক, চামড়ার ক্ষয় ও ক্ষতির কারণ কি।

ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলি কি?

ফ্রি র‍্যাডিকেল জুড়ি-বিহীন বা একক কোষ, যা একটি জুড়ি গঠনে অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। সেই জন্য চামড়া এবং দেহের কোষের সাথে জুড়ি বেঁধে তাদের ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে। এই প্রতিক্রিয়া অক্সিডেটিভ চাপ'এর প্রক্রিয়া শুরু করে যা আপনার দেহের কোষগুলির ক্ষতি করে। ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলি যদিও প্রধানত চামড়ার ক্ষতি করে,  এদের প্রভাব অন্যান্য টিস্যু এবং অঙ্গের উপরে পড়ে, যেমন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ইত্যাদি। এই কোষগুলির অনিয়ন্ত্রিত ক্রিয়া নিম্ন লিখিত সমস্যাগুলির সৃষ্টি করবে:

  • কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, আলঝাইমার রোগ বা ডিমেনশিয়া।
  • অকালগত বলি রেখার মত ত্বকের সমস্যা, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বা মসৃণতার ক্ষতি, চামড়া গঠনের পরিবর্তন, ইত্যাদি।
  • চুল পড়া এবং চুলের অকালের ধূসরতার সমস্যা।
  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস'এর মত অটো-ইমিউন রোগ।
  • কয়েকটি নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার।
  • ক্ষয় রোগ।
  • চর্বি জমে ধমনী অনমনীয় হয়ে যাওয়ার ফলে এথোস্ক্লেরোসিস।
  • ক্ষীণদৃষ্টি, বিবর্ণ দৃষ্টিশক্তি বা ছানি পড়া।
  • মধুমেহ

কি ভাবে শরীরে ফ্রি র‍্যাডিকেল সৃষ্টি হয়?

ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলি প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্টি হয়। তবে জীবন-শৈলীর কিছু অনিয়ম যেমন ধূমপান করা, অত্যধিক মদ্যপান করা, অত্যধিক ভাজা/জাঙ্ক খাদ্য খাওয়া; পরিবেশগত সমস্যা যেমন পরিবেশ দুষণ, কীটনাশক, ইত্যাদি, যা দেহের প্রক্রিয়াগুলির পরিবর্তন করতে পারে, জানা আছে যে সেইগুলি দেহে ফ্রি র‍্যাডিকেল সৃষ্টি ত্বরান্বিত করতে পারে।

ভিটামিন ই কি ভাবে ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলির বিরুদ্ধে কাজ করে?

আগেই বলা হয়েছে যে ভিটামিন ই একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা অন্যান্য অণুদের অক্সিডেশান প্রতিরোধ করে, এবং ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলির ক্রিয়াকে ধীরে করে দেয়। এই পদ্ধতিতে ফ্রি র‍্যাডিকেলকে একটি অতিরিক্ত ইলেকট্রন দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তাদের ক্রিয়া ক্ষমতা এবং রাসায়নিক অস্থায়িত্ব হ্রাস পায়।

  1. ভিটামিন ই'র খাদ্যের উৎস - Food sources of Vitamin E in Bengali
  2. ভিটামিন ই'র উপকারিতা - Benefits of Vitamin E in Bengali
  3. কি ভাবে ভিটামিন ই খেতে হবে? - How to take vitamin E? in Bengali
  4. ভিটামিন ই'র দৈনিক মাত্রা কত? - How much Vitamin E per day? in Bengali
  5. ভিটামিন ই'র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া - Side effects of vitamin E in Bengali

নিম্ন লিখিত খাদ্যবস্তুগুলিতে প্রাকৃতিক ভাবে ভিটামিন ই পাওয়া যায়:

  • সবুজ শাক-সবজি যেমন পালং, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, কাঁচা শালগম, কয়েক ধরেনের মরিচ, মটরশুঁটি এবং লেবু
  • অ্যাভোকাডো
  • স্যালমন মাছ
  • সামুদ্রিক খাদ্য
  • চর্বিহীন মাংস
  • ডিম
  • বাদাম, চিনাবাদাম, হ্যাজেল নাট, ফিলবার্ট বাদাম, পাইন বাদাম
  • সূর্যমুখী বীজ
  • কিছু উদ্ভিজ্জ তেল যেমন সূর্যমুখী তেল, কুসুম ফুলের তেল, ভুট্টা, সয়াবিন তেল, গমের তেল।
  • মাছের তেল
  • ফলের রস বা ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল মত কিছু প্যাকেজ করা খাদ্য উপকরণ

এইগুলি ছাড়াও, ভিটামিন সি পাওয়া যায় বড়ি, সম্পূরক এবং ক্যাপসুল হিসাবে, যেগুলি অনেক সময়েই ব্যবহৃত হয় দেহের প্রতিরক্ষা বৃদ্ধি করতে অথবা ত্বকের সাধারণ সম্পূরক হিসাবে।

ভিটামিন ই, একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ত্বক এবং চুলকে ফ্রি র‍্যাডিকেলের আক্রমণের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, যার প্রক্রিয়া উপরে আলোচিত হয়েছে। ত্বকের এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা ছাড়াও ভিটামিন ই'র আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ভিটামিন ই দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উদীপ্ত করে। আরবিসি তৈরি করা এবং ভিটামিন কে’র ব্যবহারে ভিটামিন ই'র সহযোগিতা থাকে। এছাড়াও, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হওয়ার কারণে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং পদ্ধতিকে সুরক্ষা প্রদান করে। এতে দেহের বিভিন্ন কাজ-কর্ম এবং সার্বিক প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন করে।

  • প্রাণবন্ত ত্বকের জন্য: ত্বকের জন্য ভিটামিন ই আদর্শ সম্পূরকগুলির অন্যতম। আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বককে শীতল রাখে, যা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ব্রণ এবং ত্বকে বার্ধক্যের চিহ্ন আসাও প্রতিরোধ করে।
  • লম্বা ও স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য: কেশ পরিচর্যায় ভিটামিন ই'র যোগদানে চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পায়। চুলের প্রাকৃতিক তেলগুলি বজায় রেখে ভিটামিন ই চুলকে লম্বা ও উজ্জ্বল করে তোলে।
  • দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে: দৃষ্টি সংরক্ষণ এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে অপথ্যালমোলজিস্টরা  ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের সুপারিশ করেন। খাদ্যে ভিটামিন ই মেশালে বার্ধক্য -জনিত চক্ষু সমস্যা, যেমন ছানি এবং ম্যাকুলার ক্ষয় রোধ করা যায়।
  • ডিমেনশিয়ার প্রতিরোধ: গবেষণাগুলি দেখাচ্ছে যে ভিটামিন ই'এর অভাব ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) এবং আল্জ্হেইমের রোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। অন্য দিকে, ভিটামিন ই'র সম্পূরকতা আল্জ্হেইমের ক্ষেত্রে চেতনার উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে: প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হওয়ার কারণে ভিটামিন ই হৃদ যন্ত্রের পেশিগুলিকে শক্তিশালী করে এবং ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কম করে। ফলে হার্ট এ্যাটাক এবং স্ট্রোক'এর সম্ভাবনা কম হয়।
  1. ত্বকের উপকারে ভিটামিন ই - Vitamin E benefits for skin in Bengali
  2. কেশ পরিচর্যায় ভিটামিন ই - Vitamin E oil for hair in Bengali
  3. চোখের জন্য ভিটামিন ই - Vitamin E for eyes in Bengali
  4. শরীরের সুরক্ষার জন্য ভিটামিন ই - Vitamin E for immunity in Bengali
  5. কর্কট রোগ ও ভিটামিন ই - Vitamin E and cancer in Bengali
  6. স্মৃতিভ্রম ও ভিটামিন ই - Vitamin E and dementia in Bengali
  7. হৃদয়ের উপকারে ভিটামিন ই - Vitamin E benefits for heart in Bengali

ত্বকের উপকারে ভিটামিন ই - Vitamin E benefits for skin in Bengali

ভিটামিন ই একটি অপরিহার্য পুষ্টি এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং এজেন্ট, যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ত্বকের বলি রেখা এবং কুঁচকানো প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করতে সাহায্য করে । চামড়া কুঁচকে যাওয়া রোধে ভিটামিন ই'র ভূমিকা একটি সাম্প্রতিক গবেষনাতে প্রমাণ হয়েছে । আই পরীক্ষায় যাদের ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা এবং রঙ উন্নত হয়েছিল, ফলে মুখের বলিরেখা চিহ্নগুলিও কমে গিয়েছিল । এটা সূর্য, দূষণকারী এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক এজেন্ট দ্বারা চামড়ায় সৃষ্ট ক্ষতি মেরামত করে তাই করে ।

ক্ষতির প্রতিরোধ করা ছাড়াও ভিটামিন ই'র সম্পূরকগুলি শুষ্ক ত্বকের ব্যবস্থাপনা করে এবং ব্রণের চিকিৎসাতেও সাফল্য-জনক ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে । ত্বকের উপকারে ভিটামিন ই'র অবদান অসীম, এবং ত্বকের চিকিৎসায় 1950 সাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে । সব চেয়ে ভাল ফলের জন্য রাতের নিয়মিত নাইট ক্রিমের সাথে ভিটামিন ই মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে । একটি প্রাকৃতিক আর্দ্রতা প্রদানকারী হিসাবে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে ভিটামিন ই সাহায্য করবে । ঠোঁট ফাটার প্রতিষেধক হিসাবে স্থানীয় ভাবে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তেল লাগালে শুষ্ক ভাব কমে যাবে ।

(আরও পড়ুন: ব্রণের চিকিৎসা)

এই উপকারগুলি বিভিন্ন পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে । 2010 সালে 'জার্নাল অব প্লাস্টিক, রিকন্সট্রাকটিভ এন্ড এ্যাস্থেটিক সার্জারি'তে একটি ক্লিনিক্যাল স্টাডির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল । এই পরীক্ষা দেখিয়েছিল যে সমস্ত শিশুরা তাদের শল্য চিকিৎসার পরে ভিটামিন ই থেরাপি করেছিল, তাদের দেহে শল্য চিকিৎসার দাগ ছিল না । পরীক্ষাটির জন্য শিশুদের দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল । একটি দলকে শল্য চিকিৎসার 15 দিন আগে থেকে স্থানীয় ভাবে দৈনিক তিনবার ভিটামিন ই লাগান হয়েছিল এবং শল্য চিকিৎসার পরে 30 দিন পর্যন্ত দৈনিক দুইবার ভিটামিন ই লাগান হয়েছিল । অন্য দলের শিশুদের (নিয়ন্ত্রিত দল) একটি পেট্রোলেটাম-নির্ভর মলম একই ভাবে শল্য চিকিৎসার জায়গায় লাগান হয়েছিল । ছয় মাস পরে দেখা গিয়েছিল যে শিশুদের ভিটামিন ই দেওয়া হয়েছিল তাদের 0% শিশুদের কোন দাগ ছিল (অর্থাৎ কারুরই ছিল না), আর অন্ত দলটির 6.5% শিশুদের শল্য চিকিৎসার জায়গায় দাগ রয়ে গিয়েছিল ।

এই পরীক্ষা ত্বকে ভিটামিন ই'র আশ্চর্যজনক প্রভাবগুলি প্রদর্শন করে । আপনি নিঃসন্দেহে এই বিস্ময়কর ভিটামিনকে আপনার দৈনন্দিন ত্বকের পরিচর্যায় বিনা দ্বিধায় যোগ করবেন । 

কেশ পরিচর্যায় ভিটামিন ই - Vitamin E oil for hair in Bengali

আপনি জানেন কি যে অধিকাংশ সৌন্দর্য, প্রসাধন এবং কেশের যত্নের পণ্যগুলিতে ভিটামিন ই একটি অপরিহার্য উপাদান? এর কারণ হল আপনার দেহের কোষগুলির উপরে এই ভিটামিনের বিস্ময়কর প্রভাব! দেহের কোষগুলিকে রক্ষা তো করেই, তাছাড়াও নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে এবং কোষের কোন ক্ষতি হলে তা মেরামতও করে । ফ্রি র‍্যাডিকেল'এর প্রভাব হ্রাস করে ভিটামিন ই আপনার চুলকে শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে, ফলে আপনি সহজেই আপনার চুল আঁচড়াতে পারেন । এর আয়ুর্বর্ধক বৈশিষ্ট্য চুলের স্বাস্থ্য ভাল করে এবং চুলের বৃদ্ধি করে । দেখে নেওয়া যাক আপনার চুলের উপরে ভিটামিন ই'র প্রভাব, এবং কি ভাবে আপনি এই ভিটামিনকে সব চেয়ে ভাল করে ব্যবহার করতে পারবেন ।

চুল পড়া বন্ধ করে ভিটামিন ই

চুল পড়া বন্ধ করতে ভিটামিন ই'এর গুণ পরিচিত । যাদের চুল ঝরে যাচ্ছে, তাদের চিকিৎসার জন্য ভিটামিন ই ব্যবহৃত হয় । চুল পড়ে যাওয়ার মূল কারণ হল অক্সিডেটিভ চাপ । ভিটামিন ই অক্সিডেটিভ চাপ হ্রাস করে ।

(আরও পড়ুন: চুল পড়ার প্রতিকার)

লম্বা চুলের জন্য ভিটামিন ই

আপনার স্বপ্নে দেখা লম্বা উজ্জ্বল চুলকে বাস্তব করতে আপনার দৈনন্দিন কেশ পরিচর্যায় ভিটামিন ই যুক্ত করুন । ভিটামিন ই মাথার চামড়ার স্বাস্থ্য ভাল রাখে এবং একই সাথে চুলের ফলিকেলের সংখ্যাও বাড়ায় । ফলে চুল বাড়তে থাকে । মাথার চামড়ায় রক্ত সঞ্চালন ভাল হলে চুল উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর হবে এবং লম্বা হলেও চুল শুষ্ক হবে না।

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল ও মাথার ত্বক

স্বাভাবিক আর্দ্রতা এবং তেল হারিয়ে গেলে চুল শুষ্ক হয়ে পড়ে ও জড়িয়ে যায় । ভিটামিন ই একটি সুরক্ষা প্রতিবন্ধক গঠন করে বা আপনার মাথার ত্বকের উপরে একটি আচ্ছাদন তৈরি করে আপনার চুল থেকে প্রাকৃতিক তেলের হানি এড়াতে সাহায্য করে । এটি বাইরের পরিবেশ এবং দূষণকারীর সাথে মিথষ্ক্রিয়া এড়াতে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে । ভিটামিন ই এক দিকে আপনার চুলের প্রাকৃতিক তেল পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে, অন্য দিকে এটি আবার অতিরিক্ত তেল উৎপাদন প্রতিরোধ করে । ভিটামিন ই এর এই প্রভাবগুলি আপনাকে স্বাস্থ্যকর মাথার ত্বক এবং চকচকে চুল দিতে সক্ষম হবে ।

স্বপ্নে দেখা চুল পাওয়া জন্য আপনার খাদ্যে উপরে উল্লিখিত ভিটামিন ই'র উৎসগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন । এছাড়াও আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং সম্পূরকগুলি নিতে পারেন যাতে আপনার চুলের, মাথার চামড়ার এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল হয় । ভিটামিন সমৃদ্ধ কেশ পরিচর্যার পণ্যগুলি ব্যবহার করা ভাল । কিছু কিছু তেল, ত্বকের লোশান, ক্রিম চুলের জেল, শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ভিটামিন ই সমৃদ্ধ থাকে, যা পণ্যটির গায়ে লাগানো লেবেল দেখলেই জানা যাবে । স্থানীয় ভাবে লাগানোর জন্য এই পণ্যগুলি সমভাবে প্রভাবশালী । তবে, চিকিৎসক বা ডারমাটোলজিস্টের পরামর্শ ছাড়া এই সম্পূরকগুলি এবং বড়ি ব্যবহার করবেন না । 

চোখের জন্য ভিটামিন ই - Vitamin E for eyes in Bengali

আপনারা সবাই জানেন যে বাদাম এবং বীজ চোখের উপকারের জন্য সুপরিচিত এবং ভাল দৃষ্টি শক্তির উপকারী । এই খাদ্যগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে, যা চোখের উপকারে আসে ।

অপথ্যালমোলজিস্টরা ভিটামিন ই সমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্যে দৈনিক খাদ্য তালিকায় যোগ দিতে সুপারিশ করেন । এবং সাথে সাথে চোখের সুরক্ষার জন্য দৈনিক ভাবে মাল্টি-ভিটামিন খাওয়ার পরামর্শ দেন । গবেষণা নিশ্চিত করেছে যে দৈনিক ভিটামিন ই সম্পূরক নিলে পরে বয়স বাড়লে মাস্কুলার ডিসট্রফির'র (এএমডি) ঝুঁকি 25% হ্রাস হতে পারে । এর জন্য সুপারিশ করা মাত্রা হল 400 আইইউ । তবে এই ভিটামিনের সুপারিশ করা দৈনিক মাত্রা হল 22.5 আইইউ (1 আইইউ হল 0.9 মিলিগ্রাম টোকোফেরলের সমান) ।

অন্যান্য গবেষণাগুলিও দেখিয়েছে যে আলফা-টোকোফেরল (ভিটামিন ই'র একটি উপাদান) এবং লুটেইন ও জিয়াক্সানথিন চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি হ্রাস করে । তবে এই ওষুধগুলি প্রেসক্রিপশান ছাড়া এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জ্ঞান ছাড়া নেবেন না ।  

শরীরের সুরক্ষার জন্য ভিটামিন ই - Vitamin E for immunity in Bengali

ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টতাই এর রক্ষাকারী কর্ম আছে এবং দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেবিভিন্ন গবেষকদের গবেষণাতে দেখা গিয়েছে যে ভিটামিন ই'র দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপরে ইতিবাচক প্রভাব আছে, এবং এই ভিটামিনের অভাবে সংক্রমণ হয় এবং টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে

বয়স বাড়ার সাথে সাথে, অথবা কিছু অসুখের ক্ষেত্রে, যেমন এআইডিএস, কর্কট রোগ, ইত্যাদি, দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হতে থাকেএই পরিস্থিতিতে ভিটামিন ই, দেখা যায়, খুবই কার্যকরীনিরাময় দ্রুত হয় এবং কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশান দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুগুলিও সেরে ওঠেএই গবেষণাগুলির ফলে সুপারিশ করা হচ্ছে যে ভিটামিন ই একটি অপরিহার্য পুষ্টি এবং এর সম্পূরক খুবই কার্যকরি এবং প্রয়োজনীয়, বিশেষত বৃদ্ধ বয়সে

 (আরও পড়ুন: কি ভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করা যায়)

কর্কট রোগ ও ভিটামিন ই - Vitamin E and cancer in Bengali

ভিটামিন ই'র রক্ষাকারী ও প্রতিরক্ষা বৃদ্ধির কার্যক্রম ইতিমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে,  কিন্তু সরাসরি কর্কট রোগের কোষের উপরে ভিটামিন ই'র প্রভাবের ফলাফল এখনও বিতর্কিত রয়েছেযাই হোক, যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে প্রাকৃতিক উৎসের আকারে খাদ্যে ভিটামিন ই'র সম্পূরকতা কর্কট রোগে রক্ষাকারীর কাজ করেতবে কোনও নির্দিষ্ট ধরণের ভিটামিনের সাথে বড়ি বা অতিরিক্ত পরিপূরকগুলির সুপারিশ করা হয় না, কারণ এর প্রভাবগুলি ভাল ভাবে এখনও জানা যায়নি এবং এটি প্রতিক্রিয়াশীল হতে পারে। 

স্মৃতিভ্রম ও ভিটামিন ই - Vitamin E and dementia in Bengali

আল্জ্হেইমের এবং ডিমেনশিয়া রোগ দুটির বৈশিষ্ট্য হল স্মৃতি লোপ পাওয়া এবং দৈনন্দিন কাজ-কর্মে অসুবিধা হওয়া । ভিটামিন ই'র রক্ষাকারী গুণগুলি এবং দেহের ক্ষতি হয়ে যাওয়া কোষগুলির পুনর্সংস্থাপনে এর কার্যক্ষমতা সুপারিশ করে যে এই দুটি রোগের প্রতিরোধে ভিটামিন ই ব্যবহার করা যেতে পারে । বয়স বাড়ার সাথে সাথে অক্সিডেটিভ চাপ সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে এই দুইটি রোগ হয় । জানা আছে যে ভিটামিন ই অক্সিডেটিভ চাপের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে, এবং তাই এই দুই ধরনের রোগীদের ভিটামিন ই সাহায্য করতে পারে ।

দেখা গিয়েছে যে এই দুই ধরনের রোগীদের সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) এবং প্লাজমা'তে ভিটামিন ই'র পরিমাণ কম থাকে । এটাই হয় তো দেহের অবনতির কারণ ।  এই ফলাফল বিবেচনা করে অন্যান্য গবেষণাগুলি দেখাচ্ছে যে বিশেষত প্রাথমিক পর্যায়ে ভিটামিন ই ব্যবহার করলে আল্জ্হেইমের এবং ডিমেনশিয়া রোগ-দুটির উপসর্গগুলি প্রতিহত করা যেতে পারে ।

রোগের অন্তিম পর্যায়ে ভিটামিন ই'র প্রভাব তেমন পরিলক্ষিত হয় না, এবং উপসর্গগুলিকে বিপরীত মুখি অথবা মস্তিষ্কের হয়ে যাওয়া ক্ষতি পুনরুদ্ধার করা যায় না । তবে রোগ অনেকটা এগিয়ে গেলেও ভিটামিন ই'র সম্পূরক প্রয়োগে কিছু রোগীর দৈনন্দিন কাজ-কর্ম যেমন খাওয়া, পরিষ্কার করা, স্নান করা, ইত্যাদিতে উন্নতি লক্ষ্য করা যায় ।

এই সম্পূরকগুলির কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়া দেখা যায়নি বটে, তবে রোগীর অবস্থা সাবধানে নিরীক্ষণ করতে হবে যখন তিনি এই সম্পূরকগুলি নেবেন ।

(আরও পড়ুন: কি ভাবে মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করবেন)    

হৃদয়ের উপকারে ভিটামিন ই - Vitamin E benefits for heart in Bengali

ভিটামিন ই অক্সিডেটিভ চাপ হ্রাস করতে পারে, তাই এটি হৃদযন্ত্রকেও রক্ষা করতে পারে । ভিটামিন ই রক্তের জমাট বাধা বন্ধ করতে পারে, তাই এটি হৃদরোগের এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে সক্ষম হয় । শিরাতে রক্ত অতিরিক্ত ভাবে জমাট বাঁধলে স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়া যায়, যা কি না ভিটামিন ই খেয়ে প্রতিরোধ করা যায় । তবে অত্যধিক পরিমাণে ভিটামিন ই খেলে বিপরীত ফল হতে পারে । 

উপরে আলোচনা করা হয়েছে যে ভিটামিন ই স্বাভাবিকভাবেই খাদ্যে বা বড়ি এবং ক্যাপসুল আকারে সম্পূরক হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে । এছাড়াও চামড়ার মলম, লোশান এবং কেশ তৈল হিসাবেও পাওয়া যায় । চুল এবং চামড়ার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আপনি ভিটামিন ই ব্যবহার করতে পারেন এমন কয়েকটি উপায় নিচে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । 

  1. চুলের মাস্কের জন্য ভিটামিন ই - Vitamin E hair mask in Bengali
  2. ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুল - Vitamin E capsules for skin in Bengali
  3. মুখের জন্য ভিটামিন ই - Vitamin E for face in Bengali

চুলের মাস্কের জন্য ভিটামিন ই - Vitamin E hair mask in Bengali

চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে, মাথার ত্বককে শীতল রাখতে ও পুষ্টি দিতে চুলের মাস্ক খুবই উপযোগী । এই প্রয়োজনগুলিকে ভিটামিন ই সহায়তা করে । বাড়িতে চুলের মাস্ক কি ভাবে তৈরি করবেন এবং ব্যবহার করবেন, তার বিধি নিচে দেওয়া হল ।

  • একটি কলা এবং একটি এভোক্যাডো চটকে একটি মন্ড প্রস্তুত করুন । 1 টেবিল চামচ এভোক্যাডো তেল এবং নারকেল তেল মেশান । তারপর এক টেবিল চামচ মধু মেশান । ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে লেই তৈরি করুন ।
  • এই লেই চুলে আর মাথার চামড়ায় লাগিয়ে আঙুল দিয়ে সংবাহন (ম্যাসেজ) করুন । 15 থেকে 20 মিনিট অপেক্ষা করুন । এইবার ধীরে ধীরে হালকা গরম জল এবং শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ও চুল ধুয়ে ফেলুন । 

ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুল - Vitamin E capsules for skin in Bengali

আপনার ত্বক যদি তেলতেলে হয় এবং ব্রণ থাকে, তাহলে আপনার জন্য আমরা একটি 2-উপাদান, সহজ, ঘরে তৈরি মাস্ক'এর আকারে একটি নিখুঁত সমাধান পেয়েছি । 1 টেবিল চামচ মধুর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে একটি মসৃণ লেই তৈরি করুন । এই লেই মুখে লাগিয়ে 15 মিনিট অপেক্ষা করে ভাল করে ধুইয়ে ফেলুন । ব্রণ-মুক্ত উজ্জ্বল ত্বক উপভোগ করুন । 

মুখের জন্য ভিটামিন ই - Vitamin E for face in Bengali

আপনার ত্বক যদি তেলতেলে হয় এবং ব্রণ থাকে, তাহলে আপনার জন্য আমরা একটি 2-উপাদান, সহজ, ঘরে তৈরি মাস্ক'এর আকারে একটি নিখুঁত সমাধান পেয়েছি । 1 টেবিল চামচ মধুর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে একটি মসৃণ লেই তৈরি করুন । এই লেই মুখে লাগিয়ে 15 মিনিট অপেক্ষা করে ভাল করে ধুইয়ে ফেলুন । ব্রণ-মুক্ত উজ্জ্বল ত্বক উপভোগ করুন । 

আমাদের সুপারিশ করা ভিটামিন ই'র দৈনিক মাত্রা হল, 14 বছর এবং তার বেশি বয়সীদের জন্য 15 মিলিগ্রাম/ডি আলফা-টোকোফেরল, অর্থাৎ প্রাকৃতিক উৎসের 22 আইইউ'র সমান অথবা কৃত্রিম উৎসের  331 আইইউ'র সমান । তবে, অভাবের ঘটনায়, দৈনিক 60-75 আইইউ'র সমান মাত্রা সুপারিশ করা হচ্ছে । (1 আইইউ হচ্ছে 0.9 মিলিগ্রাম টোকোফেরল'এর সমান) । প্রাকৃতিক ভিটামিন ই খাদ্যয়ের মধ্যেই পাওয়া যায়, যেমন আগে বলা হয়েছে, এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ । কৃত্রিম ডেরিভেটিভগুলি হল বড়ি এবং সম্পূরকগুলি, যা শুধু চিকিৎসকের পরামর্শেই নিতে হবে, নয়তো এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে ।

স্বাস্থ্যের অন্য কোন সমস্যায় যদি আপনি ভিটামিন ই নিতে থাকেন, তাহলে দৃঢ় ভাবে সুপারিশ করা হচ্ছে যে এই ভিটামিন সেবনের পূর্বের সময়ে এবং সেবনের সময়ে আপনি আপনার চিকিৎসকের উপদেশ পুরোপুরি মেনে চলবেন । এর কারণ হল ভিটামিন ই'র মাত্রা বয়স, ওজন, উচ্চতা, লিঙ্গ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপরে নির্ভর করে । সম্পূরকগুলি গ্রহণ করা ছাড়াও একটি নির্দেশিকা সারণি নিচে দেওয়া হল ।

বয়স পুরুষ মহিলা
6 মাস পর্যন্ত 4 মিলিগ্রাম 4 মিলিগ্রাম
7 মাস থেকে 1 বছর 5 মিলিগ্রাম 5 মিলিগ্রাম
1 থেকে 3 বছর 6 মিলিগ্রাম 6 মিলিগ্রাম
4 থেকে 8 বছর 7 মিলিগ্রাম 7 মিলিগ্রাম
9 থেকে 13 বছর 11 মিলিগ্রাম 11 মিলিগ্রাম
14 বছর এবং তার বড় 15 মিলিগ্রাম 15 মিলিগ্রাম

মহিলাদের জন্য উপরের পরিমাণ ছাড়া, স্তন্যদায়িনী মা'দের অতিরিক্ত ভিটামিন ই গ্রহণ করা উচিত । তাদের জন্য সুপারিশ করা মাত্রা হল 19 মিলিগ্রাম । 

নিয়মিত ভাবে সুপারিশ করা মাত্রায় ভিটামিন ই নেওয়া সাধারণত নিরাপদ । কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় নিম্ন লিখিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি হতে পারে:

ভিটামিন ই নেওয়ার আগে এবং নেওয়ার সময় যে বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে

  • যদি আপনার মধুমেহ রোগ থাকে, তাহলে ভিটামিন ই নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন, তা না হলে স্ট্রোকের হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে ।
  • যাদের হৃদরোগ বা স্ট্রোক হওয়ার ইতিহাস আছে, তারা অবশ্যই ভিটামিন ই নেবেন না, তা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।
  • যাদের রক্তক্ষরণের সমস্যা আছে, তারা ভিটামিন ই নেবেন না । কারণ ভিটামিন ই রক্তকে তরল করে দেয়, ফলে হেমারেজের সম্ভাবনা থাকে । এই প্রভাবের কারণে ভিটামিন ই দেহের অত্যাবশ্যক অঙ্গগুলিতে হেমারেজের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে । একই কারণে শল্য চিকিৎসার পরে ভিটামিন ই নেওয়া উচিৎ হবে না ।
  • ভিটামিন ই কয়েক ধরণের কর্কট রোগের কারণ হতে পারে, যেমন প্রস্টেট'এর কর্কট রোগ । আগে কর্কট রোগ চিকিৎসার দ্বারা নিরাময় হয়ে গেলেও ভিটামিন ই'র প্রভাবে আবার তা ফিরে আসতে পারে ।
  • ভিটামিন ই'এ সম্পূরকগুলি হৃদ বৈকল্যের (হার্ট ফেলিওর) কারণ হতে পারে এবং তার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হতে পারে । 
और पढ़ें ...
Read on app