থ্যালাসেমিয়া কি?
থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রোগ যা পিতামাতার মাধ্যমে আসে এবং লোহিত রক্ত কোষের উপর প্রভাব বিস্তার করে। শরীরের এই অবস্থায় অস্বাভাবিকভাবে হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন হওয়ার ফলে লোহিত রক্ত কোষগুলি অতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয় যার ফলে অবশেষে অ্যানিমিয়া হয়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
বিশেষত কিছু ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়ার উপসর্গগুলি লক্ষণীয় এবং দৃশ্যমান হয়না। তাই, যেক্ষেত্রে উপসর্গগুলির উদ্ভব হয়, তাদের মধ্যে সবথেকে সাধারণ হলো হাড়ের বিকৃতি, যা বিশেষত মুখে দেখতে পাওয়া যায়। থ্যালাসেমিয়ার অন্যান্য লক্ষণগুলি হল:
- লাল রক্তকোষের ক্ষতির ফলে গাঢ় মূত্র ত্যাগ।
- ক্লান্তি।
- চামড়া হলুদ বা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
- শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠনে বিলম্ব।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
এই রোগটি বিকাশ পাওয়ার প্রধান কারণ হল হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের সাথে জড়িত জিনগত অস্বাভাবিকতা। জিনগত ত্রুটিগুলি সাধারণত বংশগতভাবে পিতামাতার কাছ থেকে আসে। কোন ক্ষেত্রে যদি মাতা বা পিতার মধ্যে কোন একজনের এই অবস্থা থাকে, তাহলে তা শিশুর মধ্যে বাহিত হতে পারে এবং শিশুটির মধ্যে রোগের হালকা লক্ষণ দেখা দিতে পারে বা কোনও লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে কিন্তু শিশুটি নিজে রোগের বাহক হবে। থ্যালাসেমিয়া লোহিত রক্ত কোষে পর্যায়ক্রমে আলফা ও বিটাতে প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুটি মাতাপিতার থেকে একটি বা দুটি জিনের আলফা বা বিটা থ্যালাসেমিয়াটি বংশগতভাবে পেয়েছে কিনা তার ওপর ভিত্তি করে উপসর্গগুলি আলাদা হতে পারে, কখনো তা কিছু নাও হতে পারে আবার কখনো জীবন বিপন্নকারক অ্যানিমিয়াও হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে ঘন ঘন রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হতে পারে।
কিভাবে এটি নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
অবস্থাটি নির্ণয় করতে, চিকিৎসক রোগীর স্বাস্থ্য বিবরণী গ্রহন করার সাথে সাথে পারিবারিক ইতিহাস জানতে চান ও শারীরিক পরীক্ষা করেন। যদি মাতা ও পিতার মধ্যে একজন বা উভয়েই থ্যালাসেমিয়া রোগটি বহন করেন, সেক্ষত্রে চিকিৎসক অ্যানিমিয়া আছে কিনা তা যাচাই করতে রক্তপরীক্ষার পরামর্শ দেন। থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ খুঁজে পেতে, চিকিৎসক রক্তের নমুনাতে বিকৃত আকারের লাল রক্ত কোষগুলি যা থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ তা দেখার জন্য অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সেটি পরীক্ষা করেন। রোগীরর রক্তে উপস্তিত অস্বাভাবিকতাগুলি চিহ্নিত করার জন্য চিকিৎসক হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফরেসিসের পরামর্শ দেন।
সাধারণত যে চিকিৎসাপদ্ধতির সাহায্যে উপসর্গগুলির তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয় সেগুলি হল:
- রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি।
- চিকিৎসক ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সম্পূরক গ্রহনের পরামর্শ দিতে পারেন এবং খাদ্যতালিকায় সীমিত আয়রন-সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলেন। যেকোনো ভাবে আয়রন সমপূরকগুলি গ্রহন এড়ানো উচিত।
- হাড়ের মজ্জা প্রতিস্থাপন।
- কিছু ক্ষেত্রে, প্লিহা বা স্প্লিন অপসারন করতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।