লবণের অভাব কাকে বলে?
খাদ্যে স্বাভাবিক ভাবে লবণ থাকে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাদ্য তৈরির সময়ে এতে লবণ যোগ করা হয়। লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড হল একটি অবশ্যপ্রয়োজনীয় পুষ্টিদ্রব্য যা রক্তচাপ ও রক্তের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শরীরে তরলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণেও এটি সাহায্য করে। শরীরে লবণের মাত্রা কমে যাওয়ার যে সমস্যা হয় তাকে বলে হাইপোন্যাট্রিমিয়া এবং/অথবা হাইপোক্লোরেমিয়া।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
লবণের অভাবের মূল উপসর্গগুলি হল:
- বমি এবং বমিভাব।
- বিভ্রান্তি।
- জীবনীশক্তির অভাব বা লেথার্জি।
- কোমা।
- অস্থিরতা।
- ক্লান্তি।
- বিরক্তি।
- সিজার বা খিঁচুনি।
- পেশীর দুর্বলতা, খিঁচ বা টান ধরা, কম্পন।
- খারাপ মেজাজ।
- নিম্ন রক্তচাপ।
- পা ও মুখ ফুলে যাওয়া।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
শরীরে লবণের অভাব ঘটার প্রধান কারণগুলি হল:
- শরীরে উচ্চমাত্রায় তরল বা জলের উপস্থিতি।
- শরীর থেকে লবণ অথবা লবণ ও জল দুটোই বেরিয়ে যাওয়া।
- কিডনি ফেলিওর (কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া)।
- কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিওর।
- কয়েকটি হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন, যেমন থাইরয়েডের মাত্রা কমে যাওয়া।
- কিছু ওষুধ (ডাইইউরেটিক বা মূত্রবর্ধক, পেনকিলার বা ব্যথার ওষুধ এবং এন্টিডিপ্রেসেন্ট)।
- পলিডিপসিয়া (অত্যধিক তেষ্টা)।
- গুরুতর ডায়রিয়া এবং বমি।
কিভাবে এই সমস্যাটি নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে লবণের অভাব নির্ণয় করা যায়। এতে বিশেষত পাচন তন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, কিডনি ও অনাক্রম্য তন্ত্রের সমস্যার খোঁজ করা হয়। প্রয়োজন মত যে ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলি করা হয়ে থাকে সেগুলো হল ক্রিয়েটিনিন মাত্রার পরীক্ষা, সম্পূর্ণ মেটাবলিক প্যানেল, মূত্র এবং রক্তে সোডিয়াম ও ক্লোরিনের মাত্রার পরীক্ষা এবং অন্যান্য।
কি কারণে লবণের অভাব ঘটেছে তার উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি নিচে দেওয়া হল:
- ওরাল (খাওয়ার) বা ইনট্রাভেনাস (শিরার মাধ্যমে) সোডিয়াম দ্রবণ দেওয়া হয়।
- কিডনিকে শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বর্জন করতে সাহায্য করার জন্য ডায়ালিসিস।
- শরীরে লবণের মাত্রা স্থির রাখার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়।
- লবণের অভাবের ফলে যে উপসর্গগুলি দেখা দেয়, যেমন সিজার, বমিভাব ও মাথা যন্ত্রণা, তাদের উপশমের জন্য ওষুধ দেয়া হয়।
- পর্যাপ্ত লবণযুক্ত খাদ্যগ্রহণ।
- স্বল্পকালীন চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে রোগের কারণের চিকিত্সার জন্য ওষুধের নিয়ন্ত্রণ এবং জলপানের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া।