প্রোল্যাক্টিনোমা কি?
প্রোল্যাক্টিনোমা পিটুইটারি গ্রন্থির একধরণের অবিপজ্জনক (ক্যান্সারবিহীন) টিউমার। এই টিউমার প্রোল্যাক্টিন নামক একটি হরমোনের ক্ষরণ করে, যা মহিলাদের স্তনে দুধের প্রবাহ নিয়ে আসে। হরমোনের অত্যাধিক উৎপাদনের কারণে নানান সমস্যা তৈরি হয়। প্রোল্যাক্টিনোমা অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা এবং ছোটো টিউমার বেশিরভাগই মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়, আর বড়ো টিউমার পুরুষদের মধ্যে সাধারণ ব্যাপার।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি?
টিউমার পিটুইটারি গ্রন্থির আশেপাশের টিস্যুতে ঠোকা লাগে এবং তার ফলে নানারকম স্নায়বিক ও হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা-সম্পর্কিত উপসর্গ দেখা দেয়। অন্যান্য উপসর্গগুলি টিউমারের হরমোন ক্ষরণের কারণে ঘটে।
- মহিলারা ঋতুস্রাব এবং বন্ধ্যাত্ব জনিত সমস্যার অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারেন।
- ঋতুস্রাবের অনুপস্থিতি বা প্রথম রজঃস্রাব দেরিতে ঘটতে পারে।
- গর্ভাবস্থা ছাড়াই মহিলাদের স্তনে দুধ আসতে পারে। এটা অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা।
- এস্ট্রোজেনের মাত্রা কম হতে পারে, তার থেকে যোনির শুষ্কতা, ডিসপ্যারেনিয়া না যৌনসঙ্গমে ব্যথা এবং অস্টিওপরোসিস হয়।
- পুরুষেরা কামেচ্ছার অভাব, লিঙ্গের ঋজুতার সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করতে পারেন।
- অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপসর্গগুলি হল মাথাব্যথা, পেরিফেরাল বা আশপাশের দৃষ্টি হ্রাসের মতো দৃষ্টি পরিবর্তন ইত্যাদি।
যেসমস্ত ক্ষেত্রে, টিউমার পিটুইটারির পার্শ্ববর্তী টিস্যুতে আঘাত করে, তাতে পিটুইটারির গ্রন্থির সংশ্লিষ্ট অংশগুলির কাজকর্ম অস্বাভাবিকতার দিকে মোড় নেয়। এটি থাউরয়েড উদ্দীপক হরমোনের মতো এক অথবা একাধিক হরমোনের অভাব হিসেবে দেখা দেয়।
এর প্রধান কারণ কি?
টিউমার প্রকৃতিগতভাবে অবিপজ্জনক (ক্যান্সারবিহীন)। রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি প্রোল্যাক্টিন হরমোনের অতিরিক্ত মাত্রায় উৎপাদনের ফলে দেখা দেয়।
এটি হাইপোথাইরয়েডিজম, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির বিকলতা, মানসিক রোগের জন্য নির্ধারিত কিছু ওষুধ, জিইআরডি অথবা হাইপারটেনশন কারণেও হতে পারে। মাদকের থেকেও প্রোল্যাক্টিনোমা হতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
উপসর্গগুলির ক্ষেত্রে, প্রোল্যাক্টিনোমার সন্দেহ হলে, বিভিন্ন হরমোন মাত্রার যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষা করানো হয়। এর সঙ্গে এমআরআই বা সিটি টেস্ট করা হয়। মাংসপিণ্ড বড়ো প্রতীয়মান হলে সিটি স্ক্যান আবশ্যক।
রোগ নির্ণয় একবার সুনিশ্চিত হয়ে গেলে চিকিৎসা করা হয়, যদি হমরোনের অসাম্যতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গগুলি দেখা দিয়ে থাকে। যখন চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা হয়, বেশিরভাগ প্রোল্যাক্টিনোমা আকারে বৃদ্ধি পায় না। নির্দিষ্ট হরমোনের প্রভাব প্রতিরোধ এবং আটকানোর ওষুধ দেওয়া হয়।
এরসঙ্গে টিউমারের আকার ছোটো করতে রেডিওথেরাপির ব্যবহার করা হতে পারে। তবে, সাধারণত নানা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণে এটি এড়ানোর চেষ্টা করা হয়। শুধুমাত্র কিছু ঘটনায় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়, যেসব ক্ষেত্রে উপসর্গগুলি হঠাৎ করে বেড়ে যায়। আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা সাধারণত ভালোই।