পেলাগ্রা কাকে বলে?
পেলাগ্রা একপ্রকার পুষ্টিজনিত অসুখ যা নিয়াসিনের (ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শ্রেণীর একটি ভিটামিন) অভাবে ঘটে। অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণ বা পাকতন্ত্রে ত্রুটিপূর্ণ শোষণের ফলে নিয়াসিনের অভাব ঘটতে পারে। এটি একটি সামগ্রিক অসুস্থতা যা ত্বক, পাকনালি ও স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। রোগটির প্রভাব মূলত এদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় কারণ এই টিস্যুগুলিতে গুরুতর কোষ বিপর্যয় ঘটে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
পেলাগ্রার সবথেকে পরিচিত উপসর্গগুলিকে প্রায়শই 3ডি নামে ডাকা হয়, এগুলি হল ডায়রিয়া, ডিমেনশিয়া এবং ডার্মাটাইটিস। ডার্মাটাইটিস অনেকটা রোদে পোড়ার মত দেখতে হয়, এবং সূর্যের সংস্পর্শে এটি বৃদ্ধি পায়। এতে আক্রান্ত ত্বকে লালভাব এবং চুলকানি থাকে। এর প্রভাব দেহের দুইপাশে সুষমভাবে দেখতে পাওয়া যায়। পাকতন্ত্র সম্পর্কিত উপসর্গগুলি হল পেটে অস্বস্তি, বমিভাব, ডায়রিয়া যাতে জলের মতো, বিরল ক্ষেত্রে রক্তসহ, পায়খানা হয়। স্নায়ুতন্ত্রের উপসর্গগুলি হল বিভ্রান্তি, স্মৃতি লোপ, ডিপ্রেশন বা অবসাদ, এবং কিছু ক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশন। রোগটি যত অগ্রসর হয় রোগী ক্রমশ বিচলিত ও বিকারগ্রস্ত হয়ে ওঠে, চিকিৎসা না করলে এর ফলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
পেলাগ্রা প্রধানত খাদ্যে নিয়াসিনের অভাবের কারণে ঘটে। এটি সাধারণত হায়দ্রাবাদে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় যাদের মূল খাদ্য জোয়ার। জোয়ার একটি ভুট্টাজাতীয় খাদ্য যা শরীরে নিয়াসিনের শোষণে বাধা দেয়। এই রোগটির গৌণ কারণের মধ্যে আছে পাচনতন্ত্রের কিছু সমস্যা যাতে যথেষ্ট পরিমাণ নিয়াসিন গ্রহণ করলেও তার শোষণ হয়না। এছাড়াও মদ্যপান, কিছু ওষুধের ব্যবহার এবং লিভার ক্যান্সারও এই সমস্যার কারণ হতে পারে।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
পেলাগ্রা নির্ণয়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট ল্যাবরেটরি পরীক্ষা নেই। সুতরাং এর নির্ণয় নির্ভর করে রোগীর ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রেক্ষাপটের উপর। কোন কোন ক্ষেত্রে মূত্র পরীক্ষায় ক্ষয়প্রাপ্ত নিয়াসিনের বর্জ্য পদার্থ পাওয়া যায় যা এই রোগের নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে।
পেলাগ্রার চিকিৎসার জন্য এর কারণগুলির চিকিৎসা করা প্রয়োজন। অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণের ফলে হওয়া পেলাগ্রা নিয়াসিন সরবরাহের মাধ্যমে সহজেই নিরাময় সম্ভব। চিকিৎসা শুরুর কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রোগীর অবস্থার উন্নতি দেখা যায়। কিন্তু ত্বকের সমস্যার উপশমে একাধিক মাস লেগে যায়। নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য রোগীর কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন, যেমন ত্বককে নিয়মিত আর্দ্র রাখা এবং বাইরে বেরোলে সবসময় সানস্ক্রিনের ব্যবহার করা। অন্যান্য কারণে সৃষ্ট পেলাগ্রার সেই অনুযায়ী চিকিৎসা হয়, তবে ইনট্রাভেনাস নিয়াসিন প্রয়োগ এদের ক্ষেত্রেও উপকারী। এই রোগের ফলে মৃত্যু ঘটতে পারে যদি 4-5 বছর একে অবহেলা করা হয়।