প্যারাসাইটিক সংক্রমণ কি?
প্যারাসাইটের সংজ্ঞা হলো এটা একটা জীব যেটা অন্য জীবন্ত পদার্থের ভিতরে বাস করে এবং তার থেকে পুষ্টি নিয়ে বেঁচে থাকে।
যাকে অবলম্বন করে প্যারাসাইট বেঁচে থাকে তার শরীরে সংক্রমণের জন্য এই প্যারাসাইটই দায়ী থাকে, এবং এইপ্রকার সংক্রমণকে প্যারাসাইটিক সংক্রমণ বলা হয়। বিভিন্ন প্রকারের প্যারাসাইট, ছোটো এককোষী থেকে বহুকোষী, মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
প্যারাসাইট শরীরের প্রায় সর্বাঙ্গেই সংক্রমণ ঘটায়। কোন জীবের কারণে সংক্রমণ হয়েছে এবং সংক্রমণের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে এর উপসর্গগুলোও বদলে যায়, যেগুলো নিচে বলা হল:
- কিছু সংক্রমণ স্পষ্ট দেখা যায় গ্যাস্ট্রিকের অসুবিধা, পেটের মধ্যে টান ধরা, এবং পেটে ব্যথার মধ্যে।
- বমিভাব লাগতে পারে, বমি, ডায়রিয়া, এবং তার সঙ্গে খিদে না হওয়া হতে পারে।
- প্যারাসাইটের কারণে যৌনসংক্রমণ হলে তার ফলে জনন অঙ্গ থেকে নিঃসরণ হয়, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, দূর্গন্ধ, এবং চুলকানি বা জ্বালাভাব অনুভুত হয়।
- উপরোক্ত উপসর্গ ছাড়াও ব্যাক্তির জ্বর বা ত্বকে ফুসকুড়ি হতে পারে।
- মস্তিষ্কে প্যারাসাইটিক সংক্রমণের কারণে সিজিওরস হতে পারে এবং সতর্কতার অভাব দেখা দিতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
- কিছু প্যারাসাইট যারা সংক্রমণ ঘটায় তাদের মধ্যে রয়েছে প্রোটোজোয়া (এককোষী) এবং হেল্মিন্থস (কৃমি)।
- প্যারাসাইট শরীরে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। এর মধ্যে সবথেকে সাধারণ হল দূষিত খাবার ও জল গ্রহণ করা যার দ্বারা মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
- সংক্রামিত ব্যাক্তির সাথে যৌনমিলনের দ্বারাও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
- সংক্রামিত রক্ত এবং সংক্রামিত ব্যাক্তির কাপড় ও অন্যান্য আসবাব থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
- অপরিষ্কার, ভীড় জায়গা ও গ্রাম্য পরিবেশে এই সংক্রমণ খুবই সাধারণ।
- অনুন্নত দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের এবং ঘনঘন বেড়াতে যাওয়া ব্যাক্তিদের এই সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- মশা বা অন্যান্য পোকামাকড়ের থেকেও মানুষের শরীরে এই অসুখ ঢুকতে পারে, যেমন ম্যালেরিয়া।
- কম রোগ প্রতিরোধকারী ব্যাক্তির অন্যান্য অবস্থার কারণে এই সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি প্রচণ্ড মাত্রায় থাকে। এই অবস্থার কিছু কারণ হল ক্যান্সার, এইচআইভি এবং ডায়াবেটিস।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
- যখন আপনার শরীরে সংক্রমণ হয়, রক্তপরীক্ষার দ্বারা রক্তকোষের সংখ্যা এবং সংক্রমণের অন্যান্য কারণ প্রকাশ পায়।
- এছাড়াও, প্রস্রাব ও মলের নমুনা সংগ্রহ করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে প্যারাসাইটের পরীক্ষা করা হয়।
- ইমেজিং পদ্ধতিতে দেখা হয় শরীরের ভিতরে কোনো অঙ্গে বা টিসুতে হানি পৌঁছেছে কিনা। এর অন্তর্গত হল এক্স-রেস, সিটি স্ক্যানস, আল্ট্রাসাউন্ডস এবং এমআরআই।
- গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল এলাকা পরীক্ষার জন্য এন্ডোস্কোপি বা কোলোনোস্কোপি করা হয়।
সংক্রমণের প্রাথমিক চিকিৎসা হল ওষুধ। এগুলো হল:
- বিশেষ অ্যান্টিমাইক্রোবায়ালস দেওয়া হয় প্যারাসাইট শেষ করতে।ওষুধ দেওয়া হয় কোন জীবের কারণে সংক্রমণ হয়েছে সেটা দেখে।
- যদি প্রচন্ড দূর্বলতা এবং সাথে তরল পদার্থ বেরিয়ে যায় তাহলে তরল পদার্থ পূনরায় সরবরাহ করা হয়।
- সংক্রামিত ব্যাক্তিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকতে বলা হয় ও ভালভাবে রান্না করা খাবার যা পরিষ্কার পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে তা খেতে বলা হয়।