পেজেট রোগ কি?
পেজেট রোগ এমন একটি রোগ যার ফলে, বংশগতভাবে জিনের মিউটেশনের কারণে দেহে ত্রুটিপূর্ণ হাড় গঠিত হয়। অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে হাড়ের পুনর্গঠনের জন্য, অস্থিকঙ্কালে হাড়গুলি অস্বাভাবিকভাবে প্রতিস্থাপিত হয়। এই রোগে, নতুন হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়। অস্টিওপোরোসিসের পরে, এটি দ্বিতীয় সর্বাধিক পরিচিত হাড়ের বিপাকীয় রোগ। হাড়ের পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার জন্য এই রোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির হাড় ভাঙলে, তা নিরাময় হতে বেশী সময় লাগে। সাধারণত পা, মাথার খুলি, শ্রোণী আর শিরদাঁড়ায় এটি হতে দেখা যায়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি হল:
- হাড় বা হাড়ের সন্ধিতে ব্যথা।
- চামড়া লাল হয়ে যাওয়া।
- সংবেদনশীলতা।
- হাড় বা হাড়ের সন্ধিতে ফোলাভাব।
- হাড়ে ফাটল।
- অস্বাভাবিক বড় আকারের হাড়।
- ক্ষতিগ্রস্ত তরুনাস্থি।
- হাড়ের সন্ধিতে বা হাড়ে কঠিনভাব।
- হাড়ের বৃদ্ধির জন্য স্নায়ু সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে নির্দিষ্ট অঙ্গ নাড়ানোর ক্ষমতা বা সেই অঙ্গের সংবেদনশীলতা কমে যায়।
- পেটে ব্যথা।
- কোষ্ঠকাঠিন্য।
- দুর্বলতা।
- অবসাদ।
- ক্ষুধামান্দ্য।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
এর সঠিক কারণ এখনও জানা যায় নি। যাইহোক, নীচের উল্লেখিত কারণগুলি এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়:
- অস্টিওক্লাস্ট (যে কোষগুলি পুরনো হাড় শোষণ করে) এবং অস্টিওব্লাস্টের (যে কোষগুলি নতুন হাড় গঠন করে) অস্বাভাবিক কার্যকলাপ।
- রুবেওলা ভাইরাসের কারণে হাড়ের কোষে সংক্রমণ হলে।
- বংশগত কারণ আরেকটি বিষয়, কারণ সাধারণত আক্রান্তের পরিবারে এই রোগের প্রবণতা দেখা যায়।
- বয়সও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ সাধারণত 40 বছরের নীচে কাউকে এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায় না।
কিভাবে এই রোগ নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
বিভিন্ন রকম উপায়ে এই রোগ নির্ণয় করা হয়, যেমন:
- শারীরিক পরীক্ষা
হাড়ের আকৃতি এবং আকারে কোনও অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা জানতে সাহায্য করে। - রক্ত পরীক্ষা
রক্তে ফসফাটেজের উপস্থিতি পেজেট রোগের উপস্থিতি নির্দেশ করে। - এক্স-রে
এক্স-রে এই রোগ নিশ্চিত করে এবং হাড়ে ফাটল ও হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া সম্পর্কেও জানা যায়।
যদিও সম্পূর্ণ নিরাময় অসম্ভব, চিকিৎসার ফলে হাড়ের ক্ষয় রোধ করা যায় এবং রোগের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে থাকে। চিকিৎসাগুলি হল:
- পেজেটের কারণে হাড়ে গুরুতরভাবে ফাটল ধরলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হাড়ের বিকৃতি দেখা দিলে, অস্ত্রোপচারই একমাত্র চিকিৎসা।
- প্রদাহ-উপশমকারী ওষুধ।
- অ্যানালগেসিক্স (বেদনানাশক ওষুধ)।
- অস্টিওক্লাস্টের প্রতিক্রিয়াকে বাঁধা দেওয়ার জন্য বাইফসফনেট ওষুধ ব্যবহার করা হয়।