অপিওয়েড বিষক্রিয়া (অপিওয়েড টক্সিসিটি) কাকে বলে?
অপিওয়েড বিষক্রিয়া হল এমন একটি সমস্যা যেখানে স্বেচ্ছায় অথবা অজান্তে অতিরিক্ত অপিওয়েড সেবনের উপসর্গ দেখা দেয়। অপিওয়েড (আফিমজাতীয় ওষুধ) একশ্রেণীর ওষুধ যা ব্যথার উপশমে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘকালীন ব্যবহার এর সহ্যসীমা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। সহ্যসীমা বেড়ে যাওয়ায় যথাযথ ফলের জন্য আরো বেশি মাত্রায় ওষুধ নেওয়ার দরকার পড়ে। এর ওভারডোজ বা মাত্রাতিরিক্ত সেবন একাধিক অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
এশিয়াতে অপিওয়েড অপব্যবহারের মাত্রা প্রায় 0.35%।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
যদি আপনার মধ্যে নিচে উল্লিখিত সকল উপসর্গ দেখা যায় তবে আপনি ওপিয়েট ওভারডোজে ভুগছেন:
- পিনপয়েন্ট পিউপিল বা তারারন্ধ্রের সংকোচন।
- জ্ঞান হারানো।
- শ্বাসের সমস্যা।
- রক্তচাপ কমে যাওয়া।
- হৃদস্পন্দনের হার কমে যাওয়া।
- ফ্যাকাশে চেহারা।
- শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া।
- অসম্পূর্ণ মূত্রত্যাগ।
- ডায়েরিয়া (উদরাময়) অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য।
মস্তিষ্কের যে অংশটি শ্বাসক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে অপিওয়েড সেটিকে প্রভাবিত করে। ফলে ওষুধের ওভারডোজে শ্বাসক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে এবং মৃত্যু ঘটতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
অপিওয়েড ব্যবহারই এর ওভারডোজের মূল কারণ। অপিওয়েড বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যদি আপনি:
- নির্দেশিত পরিমাণের থেকে বেশি মাত্রার অপিওয়েড ব্যবহার করেন।
- ওপিওয়েডের সঙ্গে একত্রে অন্যান্য ওষুধ খান বা মদ্যপান করেন।
- ইনজেকশনের মাধ্যমে অপিওয়েড নেন।
- সহ্যসীমার হ্রাস ঘটে (অপিওয়েড ব্যবহার বন্ধ করার 3-4 দিনের মধ্যে)।
- এইচআইভি সংক্রমণ, ডিপ্রেশন (অবসাদ), কিডনি বা লিভারের সমস্যায় ভোগেন।
- বয়স 65 বছর বা তার বেশি।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা যায় এবং এর চিকিৎসা কি?
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শারিরীক ক্রিয়া, যেমন শ্বাসক্রিয়ার হার, হৃদস্পন্দনের হার, রক্তচাপ, এবং তারারন্ধ্রের সংকোচন দেখার জন্য চোখ পরীক্ষা, প্রভৃতির সাহায্যে চিকিৎসক অপিওয়েড বিষক্রিয়া নির্ণয় করেন। রক্তে ওপিওয়েডের মাত্রা জানতে এবং শরীরের অন্তর্বর্তী অঙ্গগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরী টেস্ট করা হয়ে থাকে।
রোগীর বায়ুপথে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম চিকিৎসা হল অক্সিজেনের সরবরাহ। এর পর নাকের মধ্য দিয়ে বা ইনজেকশনের মাধ্যমে অপিওয়েড বিষক্রিয়ার এন্টিডোট দেওয়া হয়। এই এন্টিডোট তৎক্ষণাৎ দ্রুতগতিতে বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে এবং সময়মত প্রয়োগ করলে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারে। শরীরে কি পরিমাণে অপিওয়েড উপস্থিত আছে তার উপরে নির্ভর করে এন্টিডোটের মাত্রা নির্ধারিত হয়।