নেফ্রাইটিস কি?
নেফ্রাইটিস হল এমন এক অবস্থা, যাতে একটি অথবা উভয় কিডনিই ফুলে ওঠে এবং প্রদাহ হয়। কিডনি বা বৃক্ক মানব শরীরের একটি অত্যাবশ্যক অঙ্গ, যা শরীর থেকে অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে অতিরিক্ত জল বের করতে এবং শরীরে প্রোটিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রোটিনের মতো অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। নেফ্রাইটিস দুই ধরণের হয়:
- গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, এক্ষেত্রে গ্লোমেরুলিতে প্রদাহ হয়, ফলে শরীরের বর্জ্য এবং জলের পরিশোধন ব্যহত হয়।
- ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস, এক্ষেত্রে ইন্টারস্টিশিয়াম অর্থাৎ কিডনির টিবিউলের মধ্যবর্তী ফাঁকা অংশে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা কিডনির কার্যক্ষমতাকে ব্যাহত করে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
নেফ্রাইটিসের প্রধান উপসর্গগুলি হল:
- জ্বর এবং সাধারণ অসুস্থতা বোধ।
- শরীরে ফোলা ভাব এবং প্রদাহ।
- শরীরে জল জমার কারণে ওজন বৃদ্ধি।
- বমি অথবা মল, প্রস্রাবে রক্ত।
- মূত্র উৎপাদনে পরিবর্তন।
- র্যাশ বা ফুসকুড়ি।
- বমনেচ্ছা এবং বমি।
- ডায়রিয়া।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
যদিও নেফ্রাইটিসের সঠিক কারণ পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি, নেফ্রাইটিসের ধরনের উপর নির্ভর করে কারণ ভিন্ন হতে পারে।
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসের কারণ হতে পারে:
- শরীরের রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ কার্যকলাপ।
- পরিবারিক ক্যান্সারের ইতিহাস।
- হাইড্রোকার্বন দ্রাবকের সংস্পর্শে আসা।
- রক্ত অথবা লসিকাতন্ত্রের রোগ।
- ভাইরাল সংক্রমণ, হৃদপিণ্ডে সংক্রমণ এবং ফোঁড়া।
- লুপাস নেফ্রাইটিস।
- পরিস্রাবণে ভূমিকা নেওয়া গ্লোমেরুলির বেসাল স্তরকে প্রভাবিত করা কোনও রকম রোগ।
- অত্যধিক পেইনকিলার ব্যবহারের কারণে কিডনির অসুখ।
ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিসের কারণ হতে পারে:
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
- রক্তে ইউরিক অ্যাসিড এবং ক্যালসিয়ামের অত্যধিক মাত্রা।
- সংক্রমণ।
- রক্তে পটাশিয়ামের অভাব।
- অটোইমিউন ডিসঅর্ডার।
- অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস যে পদ্ধতির সাহায্যে নির্ণয় করা যেতে পারে:
- তলপেটের সিটি স্ক্যান।
- বুকের এক্স-রে।
- কিডনির আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং।
- ইন্ট্রাভেনাস পাইলোগ্রাম।
- ক্রিয়েটিনিন নির্গমন, প্রোটিন, লোহিত রক্ত কণিকা, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি সনাক্ত করতে মূত্র পরীক্ষা।
ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস যে পদ্ধতির সাহায্যে নির্ণয় করা যেতে পারে:
- রক্তে বিইউএন এবং ক্রিইয়েটিনিনের মাত্রা।
- কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট।
- কিডনির আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং।
- মূত্র পরীক্ষা।
- কিডনির বায়োপসি।
উভয় ধরনের নেফ্রাইটিসের চিকিৎসাই অবস্থার কারণের উপর নির্ভর করে। কারণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অবস্থার পরিচালনায় সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। নেফ্রাইটিসের পরিচালনায় সহায়ক কিছু উপায়:
- রক্তচাপ কমাতে নুন খাওয়া কমানো।
- বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে প্রোটিনের গ্রহণ কমানো।
- প্রদাহরোধী ওষুধ।
- উচ্চ-রক্তচাপ কমানোর ওষুধ ( আরও পড়ুন: উচ্চ-রক্তচাপের চিকিৎসা)।
- কিডনির সমস্যার ক্ষেত্রে ডায়ালিসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়তে পারে।