মায়েস্থেনিয়া গ্রেভিস কি?
মায়েস্থেনিয়া গ্রেভিস (এমজি) হল এমন একটি অসুখ যা শরীরের রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থার অস্বাভাবিক কার্যকারিতার ফলে হয়, যা ভুলবশত তার নিজের টিস্যু বা কলাকে প্রভাবিত করে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ক্ষতিসাধন করে। এটি স্নায়ু এবং পেশীর মধ্যে রাসায়নিক বার্তার আদানপ্রদান, যা সবধরনের চলন এবং কার্যকলাপ করতে সাহায্য করে তাকে প্রভাবিত করে। এটি বিভিন্ন বয়সী পুরুষ এবং মহিলা উভয়কেই প্রভাবিত করে। সাধারণত, মহিলাদের ক্ষেত্রে কম বয়সে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়সকালে এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। প্রদাহের কারণে বিভিন্ন পেশীতে চলন ঘটাতে শক্তির ক্রমাগত ক্ষয় হয়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
- পেশীর দুর্বলতা।
- চোখের পেশী দুর্বল হয়ে পড়ায় ডাবল ভিশন বা দুটি করে দেখা।
- কথাবার্তায় অসুবিধা।
- ক্ষীণ স্বর।
- চিবোতে এবং গিলতে অসুবিধা।
- শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে অসুবিধা।
- ওজন তুলতে অসুবিধা।
উপসর্গগুলোর চিকিৎসা না করা হলে এগুলি আরো বেড়ে যায়।
এটির প্রধান কারণ কি?
মায়েস্থেনিয়া গ্রেভিসের কারণ, যখন শরীরের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা ভুলবশত মস্তিষ্ক এবং পেশীর স্নায়ুপ্রান্তের সুস্থ কোষকে আক্রমণ করে। অ্যাসিটাইল কোলিন নামক রাসায়নিক বার্তাবহ, যা মস্তিষ্ক এবং পেশীর মধ্যে পরিবাহিত হয় সেটির ঘাটতির জন্য এই কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেসমস্ত ফ্যাক্টর এই রোগের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় তা হল
- অনাক্রম্যতা নিয়ন্ত্রণকারী থাইমাস গ্রন্থির ক্ষতি।
- ক্যান্সার।
- এমজি রোগ সংক্রান্ত পারিবারিক ইতিহাস।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
একধরণের স্নায়বিক পরীক্ষা করা হয়, যা নির্ধারণ করে
- পেশীর দুর্বলতার মাত্রা।
- পেশীর দৃঢ়তা।
- প্রতিবর্ত ক্রিয়া।
- পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার মাধ্যমে চোখের ত্রুটি দেখা।
- পেশীর সমন্বয়।
চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাসের বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়। অন্যান্য পরীক্ষাগুলি হল
- অ্যাসিটাইল কোলিন নামক রাসায়নিক বার্তাবহের পরিমাপ করা।
- এড্রোফোনিয়াম ক্লোরাইড পরীক্ষা হলো একটি বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা, এর মাধ্যমে পেশীর চলনের পরীক্ষা করা হয়।
- ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি, যা পেশীকলার বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করে।
- থাইমাস গ্রন্থি পরীক্ষা করার জন্য সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই করা হয়।
- শ্বাসপ্রশ্বাস ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য ফুসফুসের পরীক্ষা করা হয়।
বর্তমানে মায়েস্থেনিয়া গ্রেভিসের কোনও প্রতিকার নেই। উপসর্গের ব্যবস্থাপনা এবং রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করাই এর চিকিৎসা পদ্ধতি।
- অনাক্রম্যতা এবং কর্টিকোস্টেরয়েড হ্রাস করে এমন ওষুধ কার্যকারী। স্নায়ুকোষ এবং পেশীর মধ্যে মস্তিষ্ক সংকেত উন্নত করার জন্য পাইরিডোস্টিগমাইন ব্যবহার করা হয়। ইন্ট্রাভেনাস ইমিউন গ্লোবুলিন হলো রক্তের একধরণের উপাদান, যা প্রবর্তিত অনাক্রম্যতার সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- থাইমাস গ্রন্থি অপসারণ সংক্রান্ত অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করা হয়।
- প্লাজমা বা রক্তরস পরিবর্তন পেশী শক্তি উন্নয়নে সহায়তা করে।
জীবনশৈলিতে পরিবর্তন এমজির উপসর্গ হ্রাসে সাহায্য করতে পারে:
- পেশী দুর্বলতা কমাতে বিশ্রাম নেওয়া।
- চাপ এবং গরম এড়িয়ে চলা।