পেশীতে টান কি?
পেশীতে টান হলো এক বা একাধিক পেশীতে আঘাতের একটি ধরন। কোনও ব্যক্তির পেশীতে টান পড়েছে কথাটি তখন বলা হয়, যখন পেশী তন্তু প্রসারিত হয় অথবা ছিঁড়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেশীতে টান মৃদু হয় এবং পেশীর ফাইবার বা তন্তু শক্ত এবং অক্ষতই থাকে। মাংসপেশীর তন্তু তার সহ্য সীমা অতিক্রমের পরও প্রসারিত হয় এবং মাশল স্ট্রেইন বা পেশীতে টান পড়ার ঘটনায় খুব কম ক্ষেত্রেই তা ছিঁড়ে যায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
পেশীতে টান পড়ার প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো:
- আঘাতের সময় পেশীতে ফেটে যাওয়ার মতো মৃদু শব্দের সংবেদন।
- পেশীতে খিঁচুনি অথবা খিল ধরা।
- পেশীতে সংবেদনশীলতা ও ব্যথা।
- পেশীতে ফোলা ভাব।
- আঘাতের জায়গা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া।
- প্রদাহ।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
পেশীতে টানের প্রধান কারণগুলো হলো:
- নাচ বা দৌড়ানোর সময় হ্যামস্ট্রিং বা পায়ের পিছনের পেশী অতিমাত্রায় প্রসারিত হওয়া।
- অত্যধিক মোচড় অথবা লাফ-ঝাঁপের কারণে পিঠের পেশীতে টান।
- খেলাধুলো জনিত আঘাত।
- খুব ভারী ওজন তোলা।
- সঙ্গতিহীন দেহভঙ্গি।
- শারীরিক ক্রিয়াকলাপের আগে ওয়ার্ম-আপ বা গা ঘামিয়ে না নেওয়া।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
পেশীতে টান ধরা নিম্নলিখিত উপায়ে নির্ণয় করা হয়:
- পেশীর নড়াচড়া ও শক্তি সম্পর্কিত যেসব উপসর্গ উপলব্ধি করছেন, চিকিৎসক আপনাকে তা লিখে রাখতে বলবেন।
- খিঁচুনি, দূর্বলতা, এবং পেশীর সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসাজনিত ইতিহাস মিলিয়ে দেখা হবে।
- যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে এক্স-রে বা এমআরআই স্ক্যান করাতে বলা হতে পারে।
- মেরুদণ্ড এবং ভার্টিব্রাল ডিস্কে কোনও সমস্যা আছে কিনা, তা জানার জন্য অতিরিক্ত টেস্ট করানো হতে পারে।
নিম্নলিখিত প্রক্রিয়ায় পেশীতে টানের চিকিৎসা করা হয়:
- বিশ্রাম, বরফ লাগানো, ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখা এবং হার্টের উচ্চতার সমান বা তার ওপরে (আরআইসিই) উঁচু করে তুলে রাখা হলো পেশীতে টানের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। এগুলো ফোলাভাব ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- ফিজিকাল থেরাপির সাহায্যে মৃদু টান পরার চিকিৎসা করা হয়, এতে পেশী সেরে ওঠার কারণে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
- গুরুতর পেশীতে টানের ঘটনায় ফিজিকাল থেরাপির সাথে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
- ব্যথা ও ফোলা কমানোর জন্য চিকিৎসক নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ (এনএসএআইডিএস), পেইনকিলার অথবা পেশী রিলাক্স্যান্টস নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।
- ক্রিয়াকলাপে সীমাবদ্ধতা আনা এবং কাস্ট, স্প্লিন্ট, হুইলচেয়ার অথবা ক্রাচ ব্যবহার হলো এই চিকিৎসার অন্যান্য বিকল্প।