লিপোডিসট্রফি কি?
লিপোডিসট্রফি শব্দটি ব্যবহৃত হয় সেই সকল ব্যাধিগুলি বোঝানোর জন্য যা শরীরের আংশিক বা সম্পূর্ণ মেদ ঝরিয়ে ফেলার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই রোগটি নিজে থেকে হতে পারে বা বংশগতও হতে পারে। কিছু ডাক্তার অ্যাডিপোস টিস্যুর ক্ষয়কে লিপোডিসট্রফি না বলে লিপোঅ্যাট্রফি বলেন।
অন্য আরও কারণ ছাড়া, নিজে থেকে হওয়া লিপোডিসট্রফি ইডিওপ্যাথিক বা এইডসের কারণেও হতে পারে এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের কারণে হতে পারে। নিজে থেকে হওয়া লিপোডিসট্রফিকে আবার বিভক্ত করা যায় অনেকগুলি ভাগে:
- লরেন্স সিন্ড্রোম: সাধারণভাবে অ্যাডিপোজ টিস্যুর ক্ষয় হয়।
- ব্যারাকার-সাইমন্স সিন্ড্রোম: অ্যাডিপোজ টিস্যুর আংশিকভাবে ক্ষয়।
- লোকালাইসড লিপোডিসট্রফি: কিছু নির্দিষ্ট শরীরের অংশ থেকে মেদ ক্ষয় হয়ে যাওয়া।
- অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল (এআরভি) থেরাপি-ইনডিউসড লিপোডিসট্রফি: এইচআইভি সংক্রমণের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে মেদ ক্ষয় হয়ে যাওয়া।
উপরে উল্লেখিত সিন্ড্রোমগুলি হয় বিপাকীয় এবং হরমোনের অসামঞ্জস্যের কারণে। এইভাবে, এই অবস্থাগুলি কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে, যেমন:
- এক্টোপিক লিপিড অ্যাকুমুলেশন।
- ইনসুলিনের প্রতিরোধ।
- ডায়াবেটিস।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (পিসিওএস)।
- নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের রোগ।
- হাইপারট্রাইগ্লাইসেরিডেমিয়া (রক্তে উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড ফ্যাটের মাত্রা)।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
এই রোগটি খুবই বিরল, কিন্তু তাও এটি দীর্ঘকালীনভাবে মারাত্মক হতে পারে। এর প্রধান উপসর্গগুলি হল:
- কোমরের মাপ বেড়ে যাওয়া।
- চাঁদের আকারের গোল মুখ, সাথে গালে এবং গলায় মেদ জমা।
- স্তনে মেদ জমা।
- পিঠের ওপরের দিকে মেদ জমা যা দেখতে কুঁজের মতো হয়।
- প্যাঙ্ক্রিয়াটাইটিস বা প্যাঙ্ক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের জ্বালা বা ফোলাভাব।
- লিভার বেড়ে যাওয়া।
- ডায়াবেটিস।
মহিলাদের ক্ষেত্রে, এই অবস্থাটিতে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলির সাথে ওপরে উল্লেখিত উপসর্গগুলিও দেখা দিতে পারে:
- হিরসুটিজম (পুরুষালি চুলের বৃদ্ধি), থুতনি এবং ঠোঁটের উপরে চুল গজানো (পিসিওর কারণে)।
- ক্লিটোরিস বড় হয়ে যাওয়া।
- গাঢ় ভেলভেটের মতো ত্বক স্তনের চারপাশে, বগলে এবং হাতে।
শিশুদের ক্ষেত্রে, রোগটি সহজেই চেনা যায় এরকম যেসব উপসর্গগুলি দেখা দেয় সেগুলি হল:
- পেশির আকার।
- ইনসুলিনের প্রতিরোধ।
- উচ্চ ভিত্তিগত বিপাকীয় মাত্রা।
- বিশেষভাবে প্রতিভাত নাভি।
- শিরাগুলির অবস্থান ত্বকের বাইরে থেকেও সহজে চিহ্নিত করতে পারা।
- কিছু ক্ষেত্রে, অ্যারিথমিয়া।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
আগেই বলা হয়েছে, এই রোগ দুটি বিশেষ কারণে হয়, তা হল বংশগত এবং নিজে থেকে হওয়া।
- সহজাত বা বংশগত কারণ (কনজেনিটাল জেনারালাইসড লিপোডিসট্রফি [সিজিএল],ফ্যামিলিয়াল পার্শিয়াল লিপোডিসট্রফি[এফপিএল])। এই রোগ বাবা-মা’র থেকে শিশুদের হয় রিসেসিভ জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে বা জিনের মিউটেশনের কারণে। এফপিএলের ক্ষেত্রে, এই রোগ বংশগত হওয়ার সম্ভাবনা 50 শতাংশ বেড়ে যায় যখন কোন একজন অভিভাবকের মধ্যে জিনের মিউটেশনটি ঘটে।
- নিজে থেকে হওয়ার ক্ষেত্রে (অ্যাকোয়ার্ড জেনেরালাইসড লিপোডিসট্রফি[এজিএল], অ্যাকোয়ার্ড পার্শিয়াল লিপোডিসট্রফি[এপিএল])।
এজিএলে, উপসর্গগুলি দেখা দেয় এইসব কারণে:
- টাইপ1: প্যানিকুলাইটিস (ত্বকনিম্নস্থ মেদে ফোলা ভাব)
রোগী ত্বকে বেদনাদায়ক এবং প্রদাহযুক্ত ফোস্কা হওয়ার কারণে কষ্ট পায়। দাগ থেকে যায় সেরে ওঠার পরও, যদিও উপরের ত্বক একদমই স্বাভাবিক দেখায়। ত্বকনিম্নস্থ মেদ কমে যাওয়া এক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
- টাইপ 2: অটোইমিউন রোগ
অটোইমিউন ব্যাধি হওয়ার কারণে লিপোডিসট্রফি হতে পারে। এইসব ব্যক্তিদের এইডস বা এইচআইভি-সম্বন্ধনীয় সমস্যার ইতিহাস থাকে।
- টাইপ 3: ইডিওপ্যাথিক
এই ধরণের ক্ষেত্রে, অটোইমিউন ব্যাধি এবং পান্নিকুলাইটিস দেখা যায় না এবং অন্তর্নিহিত কারণও অজানা থাকে।
এটি কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
এই রোগের নির্ণয় করা যায় চারিত্রিক উপসর্গগুলি সনাক্ত করে। যেমন, যাদের এজিএল এবং এপিএল আছে তাঁরা হাতে, যোনি স্থানে, পায়ে এবং চোখের চারপাশে ত্বকনিম্নস্থ মেদের ক্ষয় হয়। এই অবস্থার আরেকটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে ডায়াবেটিস হওয়া । সম্পূর্ণভাবে, এই অবস্থা চেহারার উপর প্রভাব ফেলে এবং, এর ফলে মানসিক সমস্যাও হতে পারে যেমন বিষণ্ণতা।
সিজিএল এবং এফপিএলের ক্ষেত্রে, উপসর্গগুলি যৌবন থেকেই দেখা দেয়। পেশির আকার পরিবর্তন তার সাথে অস্বাভাবিকভাবে মেদ ক্ষয় লক্ষণগুলি দেখা দিলে বিষয়টির খেয়াল রাখা উচিত।
চিকিৎসা হিসাবে কসমেটিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যা শারীরিক সমস্যাগুলি ঠিক করার জন্য ব্যবহৃত হয়:
- ইনজেকশন।
- প্রতিস্থাপন।
- কসমেটিক সার্জারি।
- লিপোসাকশন।
ওষুধ দ্বারা চিকিৎসাগুলি হল:
- হিউমান গ্রোথ হরমোনের সাহায্যে চিকিৎসা (এইচজিএইচ)।
- লিপিড কমানোর ওষুধ যেমন স্টাটিনস এবং ফাইব্রেটস।
- ডাইয়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য মেটফর্মিন।
- এআরভি থেরাপি শুরু করা।
ওপরে উল্লেখিতগুলি ছাড়াও, জীবনশৈলীতে পরিবর্তনও কিছু সময়ের জন্য রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।