লেড পয়জনিং কাকে বলে?
আমাদের পরিবেশে সাধারণভাবে উপস্থিত একটি উপাদান হল লেড বা সীসা, যা কোনোভাবে শরীরের মধ্যে গৃহীত হলে লেড পয়জনিং অথবা বিষক্রিয়া ঘটে। যদিও উন্নত দেশগুলিতে সীসার প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য কড়া নিয়ম চালু আছে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এখনো যথেষ্ট সাবধানতা ছাড়াই সীসা ব্যবহৃত হয়। দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা এতে বেশি প্রভাবিত হয়, কারণ শিশুদের বহু খেলনার রং-এ সীসা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিষাক্ত রাসায়নিক গ্রহণের ফলে ঘটিত সমস্ত বিষক্রিয়ার মধ্যে প্রায় 0.6% এর কারণই লেড পয়জনিং।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি?
সাধারণত বারংবার সীসার সংস্পর্শে এলে তা শরীরে একটু একটু করে জমা হতে থাকে। রক্তে এর পরিমাণ যথেষ্ট বেড়ে গেলে দীর্ঘস্থায়ী নানা সমস্যা, কোমার মত উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে এবং প্রাণহানির মত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। শিশুদের জন্য এর বিপদ অনেক বেশি কারণ লেড পয়জনিং তাদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এই রোগের লক্ষণগুলি হল:
- উচ্চ রক্তচাপ।
- পেটব্যথা।
- স্মৃতিশক্তির সমস্যা।
- পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা।
- গর্ভপাত।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
এই রোগের মূল পরিবেশগত কারণগুলি হলো:
- রাস্তার ধুলো, নির্মাণে ব্যবহারকারী সিমেন্ট।
- সীসার তৈরি পুরোনো জলের পাইপ।
- খাবারের পাত্র যাতে সীসা উপস্থিত থাকে।
- কিছু নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় দ্রব্য, যেমন পেন্সিল, কালি, তাছাড়া খেলনা বা গয়নাতেও সীসা থাকে।
- কিছু আয়ুর্বেদিক ওষুধ।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে, পেশাসংক্রান্ত কার্যকলাপ ও গাড়ির ধোঁয়া থেকে লেড পয়জনিং হতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিত্সা করা হয়?
সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা ও যথাযথ বয়ান (হিস্ট্রি) নেওয়া এই অসুস্থতার চিহ্নিতকরণে বিশেষ সাহায্য করে। এটি নির্ণয় করার জন্য রক্তে সীসার ঘনত্ব মাপা হয়। মূলত শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয় যা নির্ণয় করে রোগটি কতটা গুরুতর পর্যায়ে আছে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দীর্ঘকালীন সংস্পর্শের ফলাফল মাপতে জিঙ্ক প্রোটোপরফাইরিন (জেডপিপি) টেস্ট করা হতে পারে।
সীসার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হতে পারে। বাড়িকে সম্পূর্ণ সীসামুক্ত করতে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। শিশুদের শরীর থেকে সীসা কমাতে চিলেটিং এজেন্ট দেওয়া হয়ে থাকে।
নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু কর্তব্য:
- যেকোনো পুরোনো পাইপ বা যন্ত্রপাতি যাতে সীসা থাকতে পারে সেগুলো সরিয়ে ফেলুন।
- নিয়মিত আপনার বাড়ি পরিষ্কার করুন।
- নিয়মিত সুষম আহার করুন।
- ব্যস্ত অঞ্চলের আশেপাশে ঘোরাফেরা বা খেলাধুলা থেকে বিরত থাকুন।
সীসা একটি অত্যন্ত বিষাক্ত উপাদান যাকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। ভবিষ্যৎ প্রাণহানি এড়ানোর জন্য শরীর থেকে সীসার সম্পূর্ণ অপসারণ খুবই প্রয়োজনীয়।