সংক্রমণ (ইনফেকশন) কি?
যখন রোগ-সৃষ্টিকারী জীবণু আপনার শরীরে আক্রমণ করে তখন তারা তাদের সংখ্যা গুণ করে বা বাড়িয়ে তুলে নানা রকম উপসর্গ এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, একে সংক্রমণ (ইনফেকশন) বলে। সংক্রমণ (ইনফেকশন) ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস এবং পরজীবীর কারণে হয়, যা (শরীরের) ভিতরে ও বাইরে হতে পারে। বেশিরভাগ প্যাথোজেন ব্যাপক বর্ণের বা ধারার রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সংক্রমণগুলি প্রাথমিকও হতে পারে, যা বর্তমান স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ, অথবা দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্তও হতে পারে, যেখানে পূর্বে সংক্রমণ বা কোন ধরনের আঘাতের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে সংক্রমণ তৈরী হয়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
সংক্রমণের উপসর্গগুলি সাধারণত সংক্রমণের স্থানের উপর এবং যে ক্ষুদ্র জীবাণু এই সংক্রমণের কারণ তার উপর নির্ভর করে। প্রধান উপসর্গগুলি হল:
- ফুলে যাওয়া এবং লাল হয়ে যাওয়া।
- ব্যথা।
- জ্বর।
- পেট খারাপ।
- লাল লাল ফুসকুড়ি।
- নাক দিয়ে জল পড়া বা সর্দি।
- কাশি।
- নড়াচড়া বা চলাফেরা করতে অসুবিধা।
- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া।
এটির প্রধান কারণগুলি কি কি?
রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলি হল ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস এবং প্যারাসাইট বা পরজীবী, যেমন দাদ, কেঁচোকৃমি, উকুন, মাছি এবং এঁটেল পোকা। নীচের আলোচনা হিসাবে সংক্রমণ অনেক উপায়ে ছড়ায়:
- ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি।
- পশু থেকে ব্যক্তি।
- মায়ের থেকে গর্ভে থাকা শিশুর মধ্যে।
- দূষিত খাদ্য এবং জল থেকে।
- পোকার কামড় থেকে।
- সংক্রামিত ব্যক্তি ছুঁয়েছে এরকম কোনো জিনিস ব্যবহার করলে।
- ইয়াট্রোজেনিক সংক্রমণ (সংক্রামিত চিকিৎসার যন্ত্রপাতির কারণে)।
- নসকমিয়াল সংক্রমণ (হাসপাতাল থেকে আসা)।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
নির্ণয় পরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে ডাক্তার দ্বারা করা আপনার চিকিৎসার ইতিহাস। সাধারণত নিম্নলিখিত রোগনির্ণয়সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলি করার পরামর্শ দেওয়া হয়:
- শারীরিক পরীক্ষা।
- মাইক্রোবায়োলজিকাল পরীক্ষা।
- ল্যাবরেটরি পরীক্ষা, যেমন রক্তের নমুনা, মূত্র, মল, গলার ভিতর এবং সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা।
- ছবি পরীক্ষা, যেমন এক্স-রে এবং এমআরআই।
- বায়োপসি।
- পিসিআর (পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন) ভিত্তিক পরীক্ষা।
- ইমিউনোঅ্যাসেস : ইএলআইএসএ (এনজাইম-লিংকড ইম্মুনোসরবেন্ট অ্যাসে) বা আরআইএ (রেডিও ইমিউনো অ্যাসে)।
একবার যদি আপনার সংক্রমণ সৃষ্টি করা জীবাণুর পরিচয় পাওয়া যায়, তাহলে চিকিৎসা সহজ হয়ে যায়। সংক্রমণের জন্য নিম্নলিখিত চিকিৎসাগুলি সহজেই করা যায়:
- ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা:
- অ্যান্টিবায়োটিক।
- অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগস।
- এন্টিপ্রোটোজোয়াল ড্রাগস।
- অ্যান্টিফাঙ্গালস।
- টিকাকরণ।
- বিকল্প ওষুধ:
গ্রীন টি, ক্যানবেরি জুস, আদা এবং রসুনের মত প্রাকৃতিক প্রতিকার যা সংক্রমণকে বিরুদ্ধে লড়াই করার দাবি করে।
যদিও প্রাকৃতিক প্রতিকার এবং বিকল্প চিকিৎসা, বিশেষ করে আয়ুর্বেদিক ওষুধ দ্বারা সংক্রমণগুলির চিকিৎসা করা যায়, তবুও সংক্রমণের কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটাই শ্রেয়। অ্যান্টিবায়োটিকে ক্ষুদ্র জীবাণুগুলির বাধা রদ করার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের নিয়ামকগুলি ব্যবহার করা এবং এটি সম্পূর্ণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সব সংক্রমণের চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, কিছু কিছু নিজেই সেরে যায়। কিন্তু গুরুতর সংক্রমণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ এবং ঠিক সময় চিকিৎসার প্রয়োজন। পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি এবং সঠিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা বজায় রাখলে তা সংক্রমণের প্রেষণ রদ করতে পারে, যার ফলে সংক্রামক রোগ বিস্তার সীমিত হয়।