হজকিন লিম্ফোমা কি?
হজকিন লিম্ফোমিয়া হল লিম্ফোসাইট নামক এক ধরণের শ্বেত কণিকার ক্যানসার যা বিপজ্জনক নয়। লিম্ফোসাইটিস সারা শরীর জুড়ে লিম্ফ নোডে এবং লিম্ফ নালিতে থাকে। লিম্ফ নোড হল ছোট সিমের বীজের আকারের গ্ল্যান্ড যা আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন গলায়, বগলে, তলপেটে আর কুঁচকিতে অবস্থিত থাকে। লিম্ফ ভেসেল হল টিউব যা লিম্ফ নামক তরল এবং তার সঙ্গে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় কোষ যা সংক্রমনের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম তা বয়ে নিয়ে যায় । হজকিন লিম্ফোমার বৈশিষ্ট্য হল লিম্ফাটিক সিস্টেমের ভিতরে লিম্ফোসাইটিসের অসংযত বৃদ্ধি।
ক্যানসার লিম্ফ ভেসেলের মাধ্যমে একটা নোড থেকে অন্য নোডে ছড়িয়ে পরতে পারে। এই ক্ষেত্রে মহিলাদের চেয়ে পুরুষ যাদের বয়স 20 থেকে 25 বছরের মধ্যে এবং 70 বছরের উপরে তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যদিও হজকিন লিম্ফোমা হল খুবই বিরল ধরণের ক্যানসার যা বিপজ্জনক নয়, কিন্তু এটা অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় খুব সহজেই সারিয়ে তোলা যায়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুল কি কি?
- স্বাভাবিক লক্ষণ: ব্যথা ছাড়া ঘাড়ে বা গলায়, বগলের তলায় আর কুঁচকির জায়গায়তে ফোলাভাব।
- সাধারণ লক্ষণ।
- রাতে প্রচণ্ড পরিমাণে ঘাম হওয়া।
- জ্বর ( উচ্চ তাপমাত্রা)।
- ওজন কমে যাওয়া।
- সারা শরীরে চুলকানি হওয়া।
- কাশি বা ঊর্ধ্বশ্বাস।
- তলপেটে ব্যথা।
-
বিরল লক্ষণ।
অনেকের অস্থি মজ্জাতে অস্বাভাবিক ভাবে কোষ বৃদ্ধি হতে পারে যার ফলে এই উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে:
- দুর্বলতা।
- দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- রক্তপাতের সমস্যা যেমন নাক থেকে রক্ত পড়া, বেশি মাসিক হওয়া এবং ত্বকের নীচে ছোট লাল ছোপ দেখা দেয়।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট কারণ এখনও অজানা কিন্তু যেই ব্যক্তিদের এই নিম্নলিখিত ঝুঁকির কারণগুলি থাকে তাঁদের হজকিন লিম্ফোমা হতে পারে:
- এইচআইভি সংক্রমন বা এইডস।
- শরীরের অঙ্গ কাজ করা বন্ধকে আটকাতে যদি কেউ ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ওষুধ খায়।
- অটোইমিউন রোগ যেমন রিউমাটয়েড আরথারাইটিস এবং সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাস(এসএলই)।
- নন হজকিন লিম্ফোমার পূর্ব ইতিহাস।
- পরিবারের অন্য সদস্য (বাবা, মা বা ভাই- বোন) যাদের হজকিন লিম্ফোমা আছে।
- আগে যদি এপ্সটিয়েন বার ভাইরাস বা গ্ল্যান্ডুলার জ্বর হয়ে থাকে।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
আপনার ঝুঁকির কারণগুলির মুল্যায়ণ করার জন্য ডাক্তার আপনার পরিবারের এবং ব্যক্তিগত ইতিহাস বিশদে জানতে চাইবে। প্রথমত, আপনার ডাক্তার আপনাকে ছোট সার্জিকাল পদ্ধতি যাকে বায়োপসি বলা হয় তা করার উপদেশ দেবে, এটা রোগ নিশ্চিত করার জন্য আপনার লিম্ফ নোড থেকে কিছুটা নমুনা সংগ্রহ করা হবে। বায়োপসির মাধ্যমে রোগ নির্ধারিত করার পর, আরও কিছু পরীক্ষা যেমন রক্ত পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে আর পেট স্ক্যান করা হবে যাতে রক্ত কোষের মাত্রা এবং শরীরের আরও কোন কোন অঙ্গের ক্ষতি হয়েছে তা জানার জন্য।
কিছু সহজলভ্য থেরাপি হল কেমোথেরাপি (ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা করা) এবং রেডিয়োথেরাপি (রেডিয়েশনের সাহায্যে চিকিৎসা করা)। মাঝেমধ্যে স্টেরয়েডের ওষুধও দেওয়া হয়। সম্পূর্ণভাবে রোগ সেরে গেছে কি না নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত ডাক্তার দেখানো দরকার।