গ্লিওব্লাস্টোমা মাল্টিফরম কি?
গ্লিওব্লাস্টোমা মাল্টিফর্মের (জিবিএম) অর্থ মারাত্মক (ক্যান্সার রোগাক্রান্ত), আক্রমনাত্মক (দ্রুত-বৃদ্ধিমূলক) টিউমার যা মস্তিষ্কে অথবা মেরুদণ্ডে হয়। এই ধরনের টিউমার মূলত গ্লিয়াল নামক টিস্যু বা শরীরকলা থেকে সৃষ্ট হয়, এটি এক ধরনের সংযোগকারী টিস্যু, যা মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডে পাওয়া যায়।
এর প্রধান কারণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
টিউমার বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে, তা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকালাপে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। জিবিএমের প্রধান উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
- পূর্বের কোন ঘটনা মনে না পড়া বা মনে পড়তে সমস্যা (আরো পড়ুন: স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার কারণ)
- মানসিক অস্থিরতা
- অনিচ্ছাকৃতভাবে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আন্দোলন
- দৃষ্টির সমস্যা
- শ্রবণে সমস্যা
- কথা বলার সমস্যা
- হৃদরোগ
- ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন
- বমি বমি ভাব এবং বমি
- ঘন ঘন ও গুরুতর মাথাব্যথা
এর মূল কারণগুলি কি কি?
জিবিএমের প্রাথমিক কারণ জানা নেই । যাইহোক, পরিবেশগত, জিনগত ও পেশাগত বিপত্তি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণ যাদের প্রভাবে জিবিএম হতে পারে তা জানার জন্য গবেষণা চলছে।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা কি?
এই রোগ নির্ণয় শুরু হয় শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে উপসর্গগুলি মূল্যায়ন করার পর। ডাক্তার রোগী এবং তার পরিবারের চিকিৎসাগত ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে চাইতে পারেন।
একটি স্নায়বিক পরীক্ষা করা হয় কতকগুলি বিষয় মূল্যায়নের জন্য:
- প্রতিবর্তী ক্রিয়া
- সমন্বয়
- ব্যথার প্রতিক্রিয়া
- পেশীর শক্তি
উপসর্গগুলির প্রাথমিক মূল্যায়নের পর, ডাক্তার কিছু ইমেজিং টেস্ট করেন যেমন ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই), কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি) এবং পজিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি (পিইটি) স্ক্যান যেগুলির দ্বারা মস্তিষ্কের স্বচ্ছ ছবিগুলি পাওয়া যায় এবং সনাক্ত করা যায় যদি সেখানে কোনো ফোলাভাব অথবা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শরীরকলা থাকে।
বায়োপসি (মস্তিষ্কের টিস্যু বা শরীরকলা পরীক্ষা) করা যেতে পারে জিবিএমের নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য।
এই মুহূর্তে জিবিএমের কোনো সম্ভাব্য নিরাময় নেই। চিকিৎসার মূল উদ্দ্যেশ্য হল উপসর্গগুলির প্রবলতা কম করা এবং রোগীর আয়ু দীর্ঘায়িত করা।
চিকিৎসার ৩টি মূল পথ রয়েছে যেগুলি হল:
- রেডিয়েশন থেরাপি: রেডিয়েশন থেরাপি টিউমারের কোষগুলিকে ধ্বংস করে এবং পার্শ্ববর্তী টিস্যুগুলিকে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এই থেরাপি টিউমার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
- কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপিতে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা ক্যান্সার কোষগুলিকে গুনিতক হারে বাড়তে বাঁধা দেয়। এই ওষুধগুলি মৌখিকভাবে অথবা ইঞ্জেকশনের দ্বারা শরীরে প্রয়োগ করা হয়। কেমোথেরাপির এই ওষুধগুলি সেবন করার ফলে অনেক রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন বমি বমি ভাব অথবা বমি।
- অস্ত্রোপচার: এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপির সমন্বয়ে সম্পন্ন করা যেতে পারে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যুগুলিকে অপসারণ করা হয়।