গোড়ালিতে ফ্র্যাকচার কি?
গোড়ালি তিনটি হাড় নিয়ে গঠিত - টিবিয়া (শিনবোন), ফিবুলা (কাফ বোন),এবং তালুস (যা টিবিয়া ,ফিবুলা, এবং হিল বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট) । গোড়ালিতে ফ্র্যাকচার হলে এই তিনটি যৌথ হাড়ের মধ্যে যেকোনো একটি ভেঙে যেতে পারে।ফ্র্যাকচার যেকোনো একটা হাড়ে হতে পারে (সাধারণত তাই হয়ে থাকে), যা দৈনন্দিন কাজকে নষ্ট করে না, অথবা এটি গুরুতর ফ্র্যাকচারও হতে পারে যা গোড়ালিকে স্থানচ্যুত করে দিতে পারে, এবং তার জন্য চিকিত্সার প্রয়োজন হতে পারে।গোড়ালিতে ফ্র্যাকচার যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। বারবার হওয়া গোড়ালিতে ফ্র্যাকচার (সবরকম গোড়ালিতে ফ্র্যাকচারের মধ্যে 55% ফ্র্যাকচার) হলো পার্শ্ববর্তী মাল্লেওলাসের ফ্র্যাকচার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বছরে 100,000 মানুষের মধ্যে প্রায় 187 জন মানুষের এই গোড়ালিতে ফ্র্যাকচার হয়। যেটা ভারতে 100,000 মানুষের মধ্যে প্রায় 122 জনের হয়ে থাকে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি ?
গোড়ালিতে ফ্র্যাকচার হয়েছে কিনা তা বোঝার সবথেকে সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- আক্রান্ত জায়েগাটি থেকে অসহ্য যন্ত্রনা যা হাঁটু অবধি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- আংশিক বা গোটা পায়ে এডিমা হওয়া (ফুলে যাওয়া)।
- খসখসে ফোস্কা গঠন।
- হাটতে অসুবিধা হওয়া
- চামড়ার মধ্যে দিয়ে হাড় ফোটা।
গোড়ালির জায়েগাটা নরম হয়ে যেতে পারে, এবং তার কারণে ব্যক্তিটি আক্রান্ত পায়ের পাতাটির উপর ভর দিতে সক্ষম নাও হতে পারে।অনেকে খুব সহজেই একটি ফ্র্যাকচার হওয়া গোড়ালিকে সাধারনত পা মচকে যাওয়ার সাথে গুলিয়ে ফেলতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি ?
গোড়ালি ফ্র্যাকচার হওয়ার জন্য যে কারণগুলি বেশী দায়ী তা হলো পড়ে যাওয়া,গোড়ালি মচকে যাওয়া, এবং খেলার সময় কোন ভাবে স্থানটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া। অনেক রোগী যাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশী রয়েছে তারা বুঝতে নাও পারে যে তাদের শরীরের মধ্যে চোট রয়েছে কারণ তাদের সংবেদনশীল স্নায়ুগুলি নষ্ট হয়ে গেছে যা ভবিষ্যতে হাড় এবং তার পার্শবর্তী গঠনগুলির ক্ষতি করতে পারে। ধূমপান এবং উচ্চ বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) এর অনুপাত গোড়ালি ফাটার ফ্র্যাকচারের সঙ্গে যুক্ত।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয় ?
যে ঘটনার কারণে এই ফ্র্যাকচারটি হয়েছে চিকিৎসক তার ইতিহাস জানতে চাইবেন,এবং এর সঙ্গে অন্য কোনও রোগের চিকিত্সা চলছে কিনা, ক্লিনিকাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে কিনা তা জানতে চাইবেন এবং আক্রান্ত গোড়ালিটির আরো পরীক্ষা করে মূল্যায়ন করতে চাইবেন। ফ্র্যাকচারটি এক্স -রের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। সিটি স্ক্যান ও এমআরআই স্ক্যানের মতো আরও অন্যান্য পরীক্ষাও করা হতে পারে। অস্ত্রপচার প্রয়োজন কিনা জানার জন্য স্ট্রেস পরীক্ষা বল প্রয়োগ করে পরীক্ষাও করা হতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে অন্তরভুক্ত রয়েছে:
অস্ত্রপচার পদ্ধতিঃ গোড়ালি স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়ার জন্য বা চামড়া ভেদ করে হাড় বেরিয়ে আসা।
অস্ত্রপচার ছাড়া অন্য পদ্ধতি:
- আক্রান্ত পায়ের উপর বরফ ব্যবহার করা এবং পাটিকে উপর দিকে তুলে রাখা, কারণ এটি ব্যাথা ও ফোলাভাব কমায়।
- আক্রান্ত গোড়ালিতে স্প্লিন্ট বা ঠেস ব্যবহার করলে কিছুটা উপকার হতে পারে, যদি হাড় স্থানচ্যুত না হয় তবেই।
- পায়ের ওপর বেশি ভর না দেওয়া এবং সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া।
- পায়ে ইমমোবাইলাইজার ব্যবহার করা বা প্লাসটার ব্যাবহার করার ফলে কোনরকম নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কিছু অ্যানালজেসিক এবং স্টেরয়েড বিহীন ব্যাথা কমানোর ওষুধ (এনএসএআইডি) ব্যাথা এবং জ্বালা বা যন্ত্রণা কমাতে ব্যাবহার করা যেতে পারে। দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য ওষুধের মধ্যমে সুস্থ হওয়ার সঙ্গে শারীরিক চিকিৎসা বা ব্যায়ামও করা যেতে পারে।
গোড়ালিতে ফ্র্যাকচার কোনরকম দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা নয় এবং এটি আক্রান্ত পায়ের পাতাটির সঠিক যত্ন ও সেবার মাধ্যমে নির্মূল করা যেতে পারে।