দাঁতের ক্ষয় রোগ কি?
দাঁতের ক্ষয় হল দাঁতের মধ্যিখানের রন্ধ বা গর্ত যা দেখা যায় দাঁতের পরিকাঠামোয় ক্ষয় এবং পুনর্গঠনের পদ্ধতির কারণে।দাঁতের ক্ষয় বায়োফ্লিম-দ্বারা ঘটিত, শর্করা-নির্ভর রোগ যা যে কোন বয়সেই হতে পারে।
দুধের দাঁতেও (প্রাথমিকভাবে যে দাঁত গজায়) ক্ষয়ের সমস্যা হতে পারে আবার স্থায়ী দাঁতেও (প্রাথমিক পর্যায়ের পরে যে দাঁত গজায়) এই সমস্যা হয়, যার ফলে দাঁতের পরিকাঠামোগত ক্ষতি হয়।
সমগ্র বিশ্বের জনসংখ্যার 32% মানুষ দাঁতের ক্ষয়ে ভুগছেন, যেকারণে সচরাচর যে রোগগুলি মানুষের মধ্যে দেখা দেয় এমন অসুখের তালিকায় সাধারণ ঠান্ডা লাগার পর এটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
দাঁতের ক্ষয়ের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
দাঁতের ক্ষয়ের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি হল:
প্রাথমিকভাবে যে লক্ষণগুলি দেখা যায়
- গরম ও ঠাণ্ডা খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা
- কিছু কামড়ে খাওয়ার সময় ব্যথা বা অস্বস্তিবোধ
- দাঁত বিবর্ণ হয়ে আসা
পরবর্তীকালে যে সব লক্ষণ দেখা দেয়
- মাড়ি ফোলা
- একনাগাড়ে অসহ্য যন্ত্রণা
- রাত্রিবেলা দাঁতে ব্যথা
- প্রায়ই দাঁত ভাঙা
কখনো কখনো, দাঁতে কোনওরকম ব্যথা অনুভব করা যায় না, অথচ দাঁতের ডাক্তার দেখাতে গিয়ে অবাক হয়ে জানা যায় দাঁতে ক্ষয় থাকার কথা।
দাঁতের ক্ষয় হওয়ার প্রধান কারণগুলি কি কি?
ক্ষয়ের প্রধান কারণ হলো মুখে বর্তমান থাকা ব্যাকটিরিয়া, যা সুক্রোজ, অন্যান্য শর্করা জাতীয় খাবার, পরিশ্রুত শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য উপাদানের কারণে দাঁতের গোড়ায় গিয়ে আটকে যায়। এই ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিড উৎপন্ন করে ও দাঁতের এনামেলকে ক্ষইয়ে ফেলে, যা হল দাঁতের সবচেয়ে শক্ত স্তর।
দাঁতের ক্ষয় হওয়ার জন্য প্রধানত স্ট্রেপ্টোকোক্কাস মিউট্যানস এবং স্ট্রেপ্টোকক্কাস সব্রিনাস নামক ব্যাকটিরিয়া দুটি দায়ী।
নার্সিং বটল ক্যারিজ হয় যখন রাত্রিবেলা শিশুকে ঘুমের মধ্যে বোতলে করে শর্করা মেশানো দুধ খাওয়ানো হয় ও তার থেকে শিশুর মুখের ভিতর ব্যাকটিরিয়া জন্ম নেয়।
দাঁতের ক্ষয় কিভাবে নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা কি?
- ক্ষয় হয়েছে কি না তা দেখার জন্য দাঁতের ডাক্তার প্রথমে মুখের ভিতর পরীক্ষা করে দেখেন নানারকম যন্ত্রপাতির সাহায্যে, যেমন, দেখে অথবা স্পর্শ করে পরীক্ষা।
- যদি প্রয়োজন হয়, ডাক্তার রেডিওগ্রাফি করারও পরামর্শ দিতে পারেন দৃষ্টিলব্ধ পরীক্ষণটিকে নিশ্চিত করতে।
- এরপর, পরীক্ষা করে পাওয়া ফল ও রোগীর উপসর্গগুলির মধ্যে সংগতি রেখে, দাঁতের ডাক্তার চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করেন।
- দাঁতের ক্ষয়ের ব্যাপকতা অনুযায়ী, দাঁতের ডাক্তার চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করেন।
-
প্রাথমিক চিকিৎসা – দাঁতের এনামেলের পুনর্গঠনের জন্য ফ্লুওরাইডেটেড বার্নিশ ব্যবহার করা হয়।
-
এর পরবর্তী পর্যায়ে, চিকিৎসা হল দাঁতের ক্ষয় বন্ধ করতে ভরাট করা বা রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট, খুবই মারাত্মকভাবে দাঁতের ক্ষয় হলে, ডাক্তার দাঁত তুলেও দিতে পারেন।
- দাঁতে সংক্রমণের কারণে জ্বর হতে পারে, যেমন মাড়িতে ফোড়া হওয়ার কারণে।
- যাইহোক, নিজের যত্ন নেওয়া, যেমন কম শর্করাজাতীয় ও পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা, খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দাঁতের ক্ষয় নির্ণয়ের প্রকারভেদগুলি
- প্রাথমিক ভাবে, দাঁতে সাদা ছোপ দেখা দেয় যার থেকে বোঝা যায় এনামেলের ক্ষয় হচ্ছে। যাইহোক, অনেক সময় দাঁতে স্বাভাবিক কারণেও সাদা ছোপ ফুটে উঠতে পারে, একে ডেন্টাল ফ্লুওরোসিস বলা হয়।
- দাঁত বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণ মানষিক আঘাতও হতে পারে।এইকারণে,দাঁত বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মানেই দাঁতের ক্ষয় নয়।
- চা ও কফি খেলে দাঁতে গর্তের কারণে দাগ বা দাঁতে ফাটল দেখা দিতে পারে। তাই, চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করার আগে দাঁতের ডাক্তার ভালো করে পরীক্ষা করে দেখেন।·
চিকিৎসায় কত সময় লাগবে সেটা নির্ভর করে চিকিৎসার ব্যাপ্তির ওপর। বর্তমানে প্রযুক্তির যেভাবে উন্নতি হয়েছে তাতে, দাঁতের ডাক্তার পক্ষে একদিনেই এর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। দাঁতের চিকিৎসা যন্ত্রণাদায়ক তবে সেটা সবসময় নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, ডাক্তার লোকাল অ্যানাসথেসিয়া ব্যবহার করেন চিকিৎসার সময় যাতে ব্যথা অনুভূত না হয়। দাঁতের গর্ত বা ক্ষয় হওয়া অংশে ফ্লুওরাইড জেল ব্যবহার করা হয় অথবা দাঁতের গর্ত বা ক্ষয়টিকে বন্ধ করে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট উপাদান দিয়ে। দাঁতে গর্ত যদি খুব গভীর হয়, তাহলে প্রথমে সেটিকে পরিষ্কার করা হয়, তারপর দাঁতের ওপর কৃত্রিম মাথা বা ক্রাউন বসানো হয়। যদি ক্ষয় মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তাহলে ক্ষয় হওয়া দাঁত তুলে ফেলার প্রয়োজন হয়।
দাঁতের ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া উপায়
- দিনে দুবার দাঁত মাজা
- ফ্লুওরাইডেটেড টুথপেস্ট ব্যবহার করা
- নিয়মিত নিজে দাঁত পরীক্ষা করা
- মাউথওয়াশ ব্যবহার করা
- ঘন ঘন খাওয়ার অভ্যেস ত্যাগ করা