কসটোকনড্রাইটিস (পাঁজরে ব্যথা) কি ?
মানুষের বক্ষাস্থি বা উরঃফলকের সঙ্গে যে তরুণাস্থি জোড়া থাকে, তার প্রদাহকে কসটোকনড্রাইটিস বলে। বুকের শেষ দু’জোড়া পাঁজর ছাড়া, বাকি সবকটি পাঁজরই তরুনাস্থি দ্বারা এই বক্ষাস্থির সাথে যুক্ত থাকে। বক্ষাস্থির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা এই প্রদাহের জন্যে বুকে ব্যথা হয়, যা কসটোকনড্রাইটিসের প্রধান উপসর্গ।
কসটোকনড্রাইটিস এইসব নামেও পরিচিত:
- কসটো-স্টার্নাল সিনড্রোম
- প্যারাস্টার্নাল কন্ড্রোডাইনিয়া
- অ্যান্টিরিয়র চেস্ট ওয়াল সিনড্রোম
এর প্রধান লক্ষণগুলি কিকি ?
গুরুত্বপূর্ণ লক্ষনগুলির মধ্যে ব্যথার সাথে সাথে আর যা যা দেখা যায়:
- সাধারণতঃ উরঃফলকের বামদিকে ব্যথা করে
- ব্যথার অনুভূতি তীক্ষ ও যন্ত্রণাদায়ক হকে পারে
- রোগী বুকে চাপ অনুভবও করতে পারেন
- জোরে জোরে নিশ্বাস নেওয়া, কাশি, হাঁপানি আর শরীরের উপরি ভাগের নড়াচড়াতেও ব্যথা বাড়তে পারে
- একাধিক পাঁজর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে
এই রোগের প্রধান কারণ গুলি কি?
অ্যান্টিরিয়র চেস্ট ওয়াল বা বুকের ভেতরের দেওয়ালে ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণ হলো কসটোকনড্রাইটিস। এর তেমন কোনও লুকোনো কারণ থাকে না। যেসব পাঁজরগুলি তরুণাস্থি দিয়ে বক্ষাস্থির সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাতে প্রদাহ হলে, তা কসটোকনড্রাইটিসে রূপ নেয়।
সাধারণ কারণগুলি হলো:
- বুকে চোট বা আঘাত
- মাত্রাতিরিক্ত শরীর চর্চা করা কিংবা বহুদিন ধরে কাশিতে ভোগা
- বাতের রোগ সংক্রান্ত (আরও পড়ুনন: বাতের চিকিৎসা)
- যেসব রোগে পাঁজরসন্ধি প্রভাবিত হয়, যেমন - টিউবারকুলোসিস এবং সিফিলিস
- ফুসফুস, স্তন, বা থাইরয়েড ক্যান্সার মেটাস্ট্যাটিক দশায় চলে গিয়ে যদি উরঃফলক সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
কসটোকনড্রাইটিস এর সাথে টিয়েটজে’স সিনড্রোমের যোগা রয়েছে, এই ধরনের সমস্যায় দেহের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফুলে গিয়ে ব্যথা করে।
40 বছরের ওপরে যাদের বয়স, সেই সমস্ত ব্যক্তিদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পুরুষদের চেয়ে মহিলারাই এতে বেশি ভোগেন।
এর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
এই রোগ রোগীর চিকিৎসাজনিত ইতিহাস আর তাঁর পাঁজর এলাকার পর্যবেক্ষণ করে নির্ধারণ করা হয়। আপনি আগে অতিরিক্ত শরীরচর্চা করতেন কিনা বা দীর্ঘদিন কাশিতে ভুগেছিলেন কিনা ইত্যাদি আপনার চিকিৎসক জিজ্ঞেস করতে পারেন। অ্যান্টিরিয়র চেস্ট এক্স-রে করানোj দরকার হতে পারে অন্তর্নিহিত কোনও কারণ খুঁজে বের করার জন্য, যেমন:
- ঘাড়ের সন্ধিগুলিতে বা বুকের আশেপাশের হাড়ের সন্ধিগুলিতে বাত আছে কিনা
- উরঃফলক সংলগ্ন তরুনাস্থি সংক্রমণ অথবা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে নষ্ট হয়ে গেলে.
- ফাইব্রোমায়ালজিয়া
- বক্ষপিঞ্জরে হার্পিস জোস্টার সংক্রমণ
কসটোকনড্রাইটিসের চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত
- বেদনা ও প্রদাহরোধী ওষুধ
- গুরুতর সমস্যায় যদি প্রয়োজন পড়ে লোকাল অ্যানেস্থেটিক বা স্টেরোয়েড ইঞ্জেকশনের ব্যবহার
- চিকিৎসক হালকা স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করতে বলতে পারেন
নিজের যত্ন কিভাবে নেবেন:
- ঠাণ্ডা বা গরম সেঁক নেওয়া
- কঠোর পরিশ্রম হয় এমন কাজকর্ম না করা বা চাপ না নেওয়া
(আরও পড়ুন: প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসা)