ভ্যালি ফিভার (কোসিডিওডোমাইকোসিস) কি?
কোকসিডিওডোমাইকোসিস বা ভ্যালি ফিভার হল একটা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ যা কোকসিডিওইডেস নামক ছত্রাকের কারণে হয়। এই রোগ মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম রাজ্যগুলিতে বেশি দেখা যায়, মেক্সিকোর কিছু অংশে, আর মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায়। একটি বিচ্ছিন্ন বাইরের থেকে আসা ভ্যালি ফিভারের ঘটনা প্রথম উত্তর ভারতে দেখা গিয়েছিল।
এই রোগের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
উপসর্গগুলি সংক্রমণ হওয়ার 1-3 সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় আর কয়েক সপ্তাহ থেকে বেশ কিছু মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। উপসর্গগুলি হল:
- ফুসকুড়ি (আরো পড়ুন: ত্বকের ফুসকুড়ির চিকিৎসা)
- কাশি
- জ্বর
- শ্বাসগ্রহণে অসুবিধা
- মাথাব্যথা
- রাতে ঘাম হওয়া
- পেশিতে ব্যথা বা গাঁটে ব্যথা
- মারাত্মকভাবে ফুসকুড়ি হওয়া
প্রায় 5%-10% রোগীরা পরে ফুসফুসের সমস্যায় ভোগেন। দীর্ঘকালীন পরিস্থিতিতে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায়:
- অল্প মাত্রায় জ্বর
- বুকে ব্যথা
- ওজন কমে যাওয়া
- থুতুর সাথে রক্ত আসা
যদি সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়, এই উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে:
- ক্ষুদ্র আব বা স্ফীতি, ত্বকে মারাত্মক ঘা হওয়া।
- মাথার খুলিতে এবং শরীরের অন্যান্য হাড়ে বেদনাদায়ক ক্ষত।
- যন্ত্রণাদায়ক ফোলা গাঁট বা হাড়ের সন্ধি।
- মেনিঞ্জিয়াল সংক্রমণ (মস্তিষ্কের চারিপাশের প্রতিরক্ষামূলক শরীরকলাতে এবং সুষুম্নাকান্ডে সংক্রমণ)।
এর মূল কারণগুলি কি কি?
এই রোগ মুলত হয় ছত্রাকের বীজগুটি নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করার ফলে। এই বীজগুটিগুলি হাওয়ায় মেশে ধুলিকণার দ্বারা সেখান থেকে, এই বীজগুটিগুলি শরীরে প্রবেশ করে, যা সংক্রমণের কারণ হয়। এই রোগ সংক্রামক নয়।
ঝুঁকির কারণগুলি হল:
- পরিবেশের সাথে মেলামেশা করা: আশপাশ থেকে, বাড়ির ভিতর বা কর্মক্ষেত্র থেকে বীজগুটি নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করা।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় মহিলারা তাদের তৃতীয় ত্রৈমাসিক কালের সময়ে, আরও বেশী প্রবণ হয় এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার।
- দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা: যেসব রোগীর এইচআইভি-পজিটিভ বা এইডস আছে তাদের এই সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
- বয়স: যাদের বয়স বেশী তারা এই রোগে বেশী আক্রান্ত হন।
- জাতিগত কারণ: ফিলিপিনো আর আফ্রিকান মানুষদের এই সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কিভাবে এই রোগ নির্ণয় করা হয় এবং এর কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?
যেহেতু শুধু লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে ভ্যালি ফিভার নির্ণয় করা খুব কঠিন, নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করার পরামর্শ দেওয়া হয়:
- ত্বকের পরীক্ষা করা।
- থুতুর অনুশীলন করা।
- রক্ত পরীক্ষা যেমন সম্পূর্ণ রক্ত গণনা করা এবং এরিথ্রোসাইট সেডিমেন্টেনশনের মাত্রা দেখা।
চিকিৎসার পদ্ধতিগুলি হল:
- ছত্রাকরোধী ওষুধ ব্যবহার করা: এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে, কিন্তু যখন চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায় তখন তা কমে যায় ।
- খুবই সাবধানতার সঙ্গে ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ড্রাগস বা রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা দমণকারী ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।
নিজের যত্ন নেওয়ার কিছু উপায়:
- যথাযথ বিশ্রাম গ্রহণ করা দরকার।
- যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করা জরুরী।
- বেশী ধুলো-বালিময় বা ঝড়ো আবহাওয়ায় কাজ না করা।
- খারাপ আবহাওয়ার দিনে বাড়ির ভিতরে থাকা।
- বাড়ির ভিতরে এয়ার ফিল্ট্রেশন বা বাতাস-পরিশুদ্ধকর উপায় ব্যবহার করা এবং রেস্পিরেটর মাস্ক বা শ্বাসমুখোশ ব্যবহার করা।
- অ্যান্টিসেপ্টিক দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান পরিষ্কার করা সংক্রমণ রোধ করতে।
এই জরুরী পদক্ষেপগুলি নিলে খুব সহজেই ভ্যালি ফিভার এড়ানো যায়। যদি কোন লক্ষণ বা উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত পুনরায় জটিলতা এড়ানোর জন্য।
(আরও পড়ুন: ছত্রাক সংক্রমণের চিকিৎসা)