পোড়া কি ?
পোড়া হল সম্ভবত সাধারণ ক্ষতগুলির মধ্যে অন্যতম। একজন ব্যক্তি বাড়িতে, রাস্তায়, কর্মক্ষেত্রে - যে কোন জায়গায়ই পুড়ে যেতে পারেন। আমাদের অধিকাংশ ভেবে দেখা পোড়াগুলো জ্বলে যাওয়া ক্ষতের পরিণাম হিসাবে বেদনা উপলব্ধি করায়। তবে, পোড়াগুলো ত্বক কলাতে (জীব শরীরে কোষসমষ্টি) ক্ষতির কারণ নির্দেশ করে যার কারণে প্রভাবিত কোষগুলো মারা যায়।
পোড়ার দ্বারা করা ক্ষতের পরিমান অনুযায়ী তাদের আলাদা করা হয় এবং তীব্রতার ক্রমবর্ধমান ক্রমে প্রথম-, দ্বিতীয়- বা তৃতীয়-মাত্রার পোড়া হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। একটি চতুর্থ-মাত্রার পোড়া হল যেখানে পোড়াটা ত্বকে ছড়িয়ে যায় এবং পেশী, হাড় ও রোগকে প্রভাবিত করে।
এটার প্রধান লক্ষণগুলো এবং উপসর্গগুলো কি?
পোড়ার মাত্রার সাথে লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয়।
- প্রথম-মাত্রার পোড়া:
- অল্প ফোলা
- লাল ভাব (লালচে)
- তীব্র যন্ত্রণা
- শুষ্কতা এবং ত্বকের পিলিং (খসে পরা) হিসাবে এটা ভাল করা
- একসময় পোড়া ত্বক খুলে যাওয়ায় দাগের প্রায় পুরোপুরি দেখা না যাওয়া
- দ্বিতীয় -মাত্রার পোড়া:
- পোড়া ত্বকের প্রথম স্তরটিতে ছড়িয়ে যায়
- তীব্র বেদনা এবং লালভাব
- ত্বকের ওপর ফোসকা
- ভেজা, ফোসকার মধ্যে জলভরা পদার্থ যা যদি ফোসকা ফাটে তবে ঝরতে পারে
- মোটা, নরম কলা যা ক্ষতটির ওপর একটা মামড়ি গঠন করে
- পোড়া জায়গায় চামড়ার স্বাভাবিক রংয়ের পরিবর্তন
- চামড়া স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে গ্রাফ্টিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে
- তৃতীয়-মাত্রার পোড়া:
- ত্বকের সমস্ত স্তরগুলির ভিতর পর্যন্ত যায়
- নার্ভের ক্ষতি এবং সংবেদন হারানোর কারণ
- সাদা এবং মোমের মত, দগ্ধান অথবা প্রায় বাদামী দেখাতে পারে
- পোড়া জায়গা চামড়ার মত অনুভব হয় এবং উত্থিত দেখায়
- গুরুতর দাগ এবং ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সার্জারির প্রয়োজন
- সম্পূর্ণরূপে ভাল হতে খুব বেশি সময় লাগতে পারে
পোড়ার প্রধান কারণ কি?
পোড়ার কিছু কারণ অন্তর্ভুক্ত করা হল:
- কেমিক্যাল এবং ইলেকট্রিক কারেন্ট
- আগুন এবং আগুনের শিখা
- গরম বস্তু
- ফুটন্ত গরম তরলের বাষ্পপ্রদাহ
- রোদ্দুরে বেশিক্ষণ (দীর্ঘসময়) অনাবৃত অবস্থায় থাকা
কিভাবে এটাকে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
রোগ নির্ণয়ের প্রথম পদক্ষেপটি হল পোড়াটার পরিমাণ ও তীব্রতাকে পুরোপুরি পরীক্ষা করা। যদি ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি হয় তাহলে রোগীদেরকে বিশেষ চিকিৎসালয় বা বার্ন সেন্টারের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। অন্য কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা দেখার জন্য এক্স-রে এর মতো কিছু পরীক্ষা করা হতে পারে।
পোড়ার মাত্রার উপর চিকিৎসা নির্ভর করে। কিছু পোড়ার পরিচর্যা হয়তো বাড়িতেই করা যায়, যখন কিছু ক্ষেত্রে অবিলম্বে মেডিক্যাল অ্যাটেনশনের প্রয়োজন হতে পারে।
- প্রথম-মাত্রার পোড়া
- 10 মিনিট মত ঠাণ্ডা জলের মধ্যে জায়গাটাকে ভিজিয়ে রাখুন
- একটা পেনকিলার নিন
- একটা শীতল জেল অথবা ক্রিমের মত সিলভার নাইট্রেট অয়েন্টমেন্ট লাগান
- অ্যান্টিবায়োটিক অথবা গজ দিয়ে জায়গাটাকে সুরক্ষিত রাখুন
- দ্বিতীয়-মাত্রার পোড়া
- জায়গাটাকে পরিষ্কার রাখুন এবং ঢেকে রাখুন
- 15 মিনিটের জন্য ঠাণ্ডা জলের মধ্যে পোড়া জায়গাটাকে রাখুন
- ফোসকাগুলোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করুন
- তুলো ব্যবহার এবং এটাকে শক্ত করে বাঁধা এড়িয়ে চলুন
- তৃতীয়-মাত্রার পোড়া
- জরুরি চিকিৎসা বিষয়ক সহায়তা খুঁজুন
- বাড়িতে যেকোন ওষুধপ্রয়োগ এবং চিকিৎসা এড়িয়ে চলুন
- শিরায় দেওয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর এবং তরলের ব্যবহার করুন
- বিশেষ ক্ষতের ড্রেসিং করান
- ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ওষুধের ব্যবহার করুন
- খুঁত যুক্ত জায়গাগুলোর জন্য স্কিন গ্রাফ্টিং
- যদি প্রয়োজন হয় তবে শ্বাসক্রিয়া সহায়ক এবং ফিডিং টিউব ব্যবহার করুন
- প্রয়োজনে, প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়