মাড়ি থেকে রক্তপাত কি?
মাড়ি থেকে রক্তপাত হল একটি অস্বাস্থ্যকর অথবা রোগগ্রস্ত মাড়ির লক্ষণ। এর কারণটির চিকিৎসা, দাঁতের সঠিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলী বজায় রাখা হল মাড়ি থেকে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করার গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
এটির প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
মাড়ি থেকে রক্তপাত শুরু হবার আগে, সেখানে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় (লাল এবং ফোলাভাব) এবং দাঁত ব্রাশ করা অথবা পরিষ্কার করার সময় সহজেই রক্তপাত শুরু হয় (জিঞ্জিভাইটিস)। রক্তপাত বৃদ্ধি পায় যখন ব্যথা ও প্রদাহ বাড়ে এবং চোয়ালের হাড় পর্যন্ত তা বিস্তার লাভ করে (পেরিও্ডন্টাইটিস)। রোগের যত অগ্রগতি হয়, বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে থাকে:
- নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ
- খাবার চিবানোর সময় ব্যথা এবং অসুবিধা
- দাঁতগুলি নিজের জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা, দাঁতের সাথে মাড়ি আলাদা হয়ে যাওয়া
- দাঁত নড়া, সাথে দাঁতের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া
- মাড়ির মধ্যে পূঁজ জমা হওয়া
- মুখের মধ্যে ধাতব স্বাদ, লালা নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং যখন সংক্রমণ অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পায় তখন জ্বর আসা
মাড়ি থেকে রক্তপাতের প্রধান কারণগুলি কি কি?
বিভিন্ন কারণগুলি যেগুলি মাড়ি থেকে রক্তপাত ঘটায় সেগুলি হল:
- দাঁত ব্রাশ করার ভুল পদ্ধতি অথবা দাঁত চকচকে করা অথবা শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করা
- দাঁতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার অভাব
- দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে জমে থাকা দন্তমলের কারণে সংক্রমণ হওয়া
- গর্ভধারণের সময় হরমোন পরিবর্তনের কারণে
- ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কের অভাব
- রক্তপাতজনিত রোগ
- রক্ত পাতলা করার ঔষধ
- ব্লাড ক্যান্সার যেমন লিউকেমিয়া
- অনুপযুক্ত আলগা দাঁত
- ডায়াবেটিস
- ধূমপান
- এডসের মত রোগপ্রতিকারক ক্ষমতাহীন পরিস্থিতি
কিভাবে এটির নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
দাঁতের পরীক্ষা এবং অন্যান্য রোগের ইতিহাসের (যেমন ডায়াবেটিস) উপর ভিত্তি করে দন্তচিকিৎসক মাড়ি থেকে রক্তপাত রোগটি নির্ণয় করেন। বিভিন্ন অনুসন্ধানগুলি যা রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে তা হল:
- রক্ত পরীক্ষা
- সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা শরীরে সংক্রমণ সনাক্ত করতে সাহায্য করে
- গবেষণা অনুযায়ী, উচ্চ কলেস্টেরলের মাত্রা এবং বেড়ে যাওয়া সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিনও মাড়ি এবং দাঁতের রোগকে সূচিত করে
- এক্স-রে: চোয়ালের হাড়ের এক্স-রে চোয়ালে মাড়ির অসুখটি কতদূর বিস্তারলাভ করেছে তা সনাক্ত করতে সাহায্য করে
মাড়ি থেকে রক্তপাতের চিকিৎসার উদ্দেশ্য হল রোগের বৃদ্ধি রোধ করা এবং দাঁত ও মাড়ির আরও ক্ষতি প্রতিরোধ করা।
- সঠিক ভাবে ব্রাশ করা এবং দাঁত পরিষ্কারের অভ্যাস দন্তমল কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রমণের থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
- মুখ ধোয়ার জন্য গরম জল অথবা হাইড্রোজেন পারক্সাইড দন্তমল কমাতে সাহায্য করে।
- দন্তচিকিৎসক একটি পদ্ধতির দ্বারা দাঁতের উপর থেকে দন্তমলের স্তর অপসারণ করেন যাকে স্কেলিং বলা হয়।
- ভিটামিন সি অথবা ভিটামিন কের অভাবের জন্য মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার চিকিৎসা হিসাবে ভিটামিন সম্পূরক ব্যবহার করা হয়।
- সম্পূর্ণরূপে ধূমপান এবং তামাক ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।
- যতক্ষণ না আপনার ডাক্তার সুপারিশ করেন ততক্ষণ অ্যাসপিরিনের মত রক্ত পাতলা করার ওষুধ এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত দাঁতের চেক-আপ এবং পেশাদারীভাবে দাঁত পরিষ্কার করলে তা দাঁতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।