বেলস পালসি (ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস) কি?
বেলস পালসি (ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস) এমন একটি অবস্থা যার ফলে মুখের পেশীগুলি দুর্বল হয়ে যায় বা একপাশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। এটি মুখের পেশীর সঙ্গে যুক্ত স্নায়ুগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে হয়। তবে, এই পেশীগুলি সাময়িকভাবে আক্রান্ত হয় এবং চিকিৎসার ফলে এই অবস্থা সাধারণত পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায় বা সেরে যায়।
এটির প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি?
- বেলস পালসির কারণে সাধারণত মুখের এক পাশের পেশী আক্রান্ত হয়। প্রায় 1% ক্ষেত্রে মুখের দু’পাশের পেশী আক্রান্ত হয়।
- এই রোগে মুখের স্নায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গতিবিধি বা কাজগুলির উপর প্রভাব পড়ে। রোগী চোখের পাতা নাড়াতে, মুখের যেদিকের অংশ আক্রান্ত হয়েছে তা খুলতে, হাসা এবং চিবানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা অনুভব করেন।
- মুখের ওই পাশে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে চোয়াল এবং মাথাতে।
- পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে চোখের পাতা ঢুলে পড়ে বা বন্ধ হয়ে আসে এবং মুখের এক কোণ থেকে লালা ঝরতে থাকে।
- জিভের সামনের অংশের স্বাদের অনুভূতির উপর প্রভাব পড়তে পারে।
বেলস পালসি হওয়ার প্রধান কারণগুলি কি?
-
বেলস পালসি হওয়ার সঠিক কারণ এখনো পর্যন্ত অজানা রয়েছে; তবে, বলা হয়ে থাকে যে বিভিন্ন রকম ভাইরাল বা বিষাক্ত সংক্রমণের কারণে রোগটি হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে হার্পিস সিমপ্লেক্স, হার্পিস জোস্টার, এইচআইভি, সাইটোমেগালোভাইরাস এবং এপস্টাইন বার ভাইরাস।
রোগের ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- ডায়াবেটিস
- গর্ভাবস্থা, বিশেষত তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময়
- এই রোগের বিষয়ে পারিবারিক ইতিহাস
যেকোনো কারণ, যা মুখের স্নায়ুর উপর কোনোরকম ট্রমা বা আঘাত, জ্বালা বা কোনো ক্ষতি সৃষ্টি করে তাই বেলস পালসি ঘটাতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
এই রোগ নির্ণয়ের জন্য শারীরিক পরীক্ষা, ইমেজিং এবং রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন।
- উপসর্গগুলির উপর ভিত্তি করে ডাক্তার মুখ পরীক্ষা করবেন, এবং চোখের পাতা ঢুলে যাচ্ছে কি না, লালা ঝরে পড়ছে কি না প্রভৃতি লক্ষণগুলি পরীক্ষা করে দেখবেন।
- একটি এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মতো ইমেজিং প্রযুক্তি মুখের স্নায়ুগুলির অবস্থা দেখতে সাহায্য করে।
- যদি চিকিৎসক ভাইরাল সংক্রমণ সন্দেহ করেন, তাহলে তা নিশ্চিত করতে একটি রক্ত পরীক্ষাও করা হয়।
- স্ট্রোক, লাইম রোগ এবং ব্রেন টিউমারের মতো অবস্থাকে বাদ দেওয়ার উপর এই রোগের নির্ণয় নির্ভর করে।
বেলস পালসির চিকিৎসা অনেকটাই চিহ্নিত করা কারণগুলি বা ঝুঁকির কারণগুলির উপর নির্ভর করে।
- এই অবস্থার চিকিৎসার জন্য কর্টিকোস্টেরয়েডস হলো সবথেকে ভালো ওষুধ। দেখা গেছে যে এই ওষুধ 6 মাস সময়ের ওপর পর্যন্ত আরাম দিয়ে থাকে। তবে, এই অবস্থার জন্য প্রাথমিক পর্যায় থেকেই স্টেরোয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।
- যদি সন্দেহ করা হয় যে কোনো ভাইরাস এই রোগের কারণ, তাহলে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হয়।
- ওষুধের পাশাপাশি, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পেশীর ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- মারাত্মক ক্ষেত্রে, যেখানে ট্রমার কারণে স্নায়ু সঙ্কুচিত হয়ে যায় বা আক্রান্ত হয়, সেক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
- এই অবস্থা কয়েক মাসের মধ্যেই কমে যেতে পারে এবং এটি আবার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।