বেজেল কি?
বেজেল একটি সংক্রামক রোগ। ট্রিপোনেমা নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণে এই রোগ হয়। এটি সিফিলিস ব্যাকটেরিয়াম সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং এই অবস্থাটি এন্ডেমিক সিফিলিস নামেও পরিচিত। এটি এশিয়ান এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে সাধারণত দেখা যায় এবং আমেরিকাতে এই অসুখ বিরল। প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুরাই এই অসুখে বেশি আক্রান্ত হয়।
সিফিলিসের মতো এই রোগ সাধারণত যৌন সংক্রমণের কারণে হয় না। তবে, সরাসরি যোগাযোগ ঘটলে বা যে সমস্ত জিনিস অনেকে মিলেমিশে ব্যবহার করেন, তা থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গ কি কি?
- মুখের মধ্যে ছোট দাগ এবং ফোসকা দিয়ে শুরু হয়।
- তারপর ফোস্কাগুলি ধীরে ধীরে হাত ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে।
- হাত পায়ের হাড়ে ব্যথা শুরু হয় এবং এমনকি গুরুতর সমস্যা হলে, তাতে বিকৃতও আসতে পারে।
- হাড় এবং মুখে, বিশেষ করে হাতের তালুর মধ্যে মাংস পিণ্ড তৈরি হয়। এগুলিকে গুমাস বলা হয় এবং এগুলো হাড়ের ক্ষতি করে ও হাড়কে বিকৃত করে দেয়।
- লিম্ফ নোড বা লসিকাগ্রন্থিতে ফোলাভাব দেখা যেতে পারে।
এর প্রধান কারণ কি?
- বেজেল ট্রেপোনেমা নামে একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট অসুখ। এই মাইক্রোঅর্গ্যানিজমটি সেই একই ট্রেপোনেমা প্যালিডাম নামক ব্যাকটিরিয়ার গোত্রের, যার কারণে সিফিলিস হয়।
- এটি অ-যৌন যোগাযোগের মাধ্যমে প্রেরিত হয় এবং শুষ্ক, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসকারী শিশুদেরই সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হতে দেখা যায়।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
চিকিৎসাজনিত ইতিহাস এবং মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা, উভয়ের মাধ্যমেই বেজেল রোগ নির্ণয় করা হয়।
- বেজেলের নির্ণয়ের জন্য একজন ব্যক্তির ভৌগলিক ইতিহাস জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়া, আফ্রিকা এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এই সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।
- ক্ষতগুলি একটি বিশেষ অন্ধকার ক্ষেত্রের মাইক্রোস্কোপের অধীনে ব্যাকটেরিয়ামের জন্য মাইক্রোস্কোপিকভাবে পরীক্ষা করা হয়।
- পরিবারের ইতিহাস এবং সন্তানের জীবনধারা এই রোগটির নির্ণয়ের সাহায্য করে।
- সিফিলিস থেকে বেজেল আলাদা করতে, একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস এবং ক্লিনিকাল পরীক্ষা প্রয়োজন। কারণ, এই দুটি ব্যাকটেরিয়াকে মাইক্রোস্কোপের তলায় দেখলে প্রায় একই রকম লাগে।
সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
- পেনিসিলিন জি সবথেকে বেশি ব্যবহৃত ওষুধ যা পেশীর ভিতরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দিতে হয়।
- যেসব রোগীদের পেনিসিলিনে অ্যালার্জি আছে, তাদের অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকস দেওয়া হয়, যেমন ডক্সিসাইক্লাইন বা আজিথ্রোমাইসিন। যাইহোক, সমস্ত ওষুধ শুধুমাত্র যেরকম নির্ধারিত সেই হিসাবে দেওয়া উচিত, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে।
- সংক্রমণ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে পরিবারের সকল শিশুদের চিকিৎসা করা জরুরি।