এন্ড্রোজেন ইনসেনসিটিভিটি সিন্ড্রোম কি?
এন্ড্রোজেন ইনসেনসিটিভিটি সিন্ড্রোম একটি জিনগত ব্যাধি যেটা সাধারণত পুরুষদের মধ্যে দেখা যায় (46, এক্স ওয়াই ক্রোমোজোম)। এই সিন্ড্রোম বা লক্ষনটি এক্স ক্রোমোজোমের জিনগত পরিবর্তনের কারণে ঘটে। এই সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে, ব্যক্তির শরীর এন্ডোজেনের (পুরুষ যৌন হরমোন) প্রতি সংবেদনশূন্য হয়ে পড়ে। এই কারণে, সাধারণত এই সিন্ড্রোমে, একই শরীরে উভয় প্রকারের যৌনাঙ্গ দেখা যায়। এটি হল ভ্রূণের প্রজননগত অঙ্গ বিকাশ সম্পর্কিত (যৌনাঙ্গের বিকাশ) রোগ। আংশিক এন্ড্রোজেন ইনসেনসিটিভিটি হলো এন্ডোজেনের প্রতি শরীরের রিসেপ্টর বা সংবেদনশীলতায় সাড়া দেবার মাধ্যমগুলির আংশিক অসংবেদী হয়ে যাওয়া। এটিকে রিফেনস্টাইন সিন্ড্রোমও বলা হয়, এক্ষেত্রে যৌনাঙ্গটি নারী ও পুরুষ উভয়ের মতোই দেখায়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
- যৌনাঙ্গের চেহারা পরিবর্তন হওয়া।
- বয়ঃসন্ধিকালে পুরুষদের স্তন বিকশিত হওয়া, শরীরে কম চুল এবং দাড়ি থাকা, এবং যৌন অসুস্থতা।
- একটি ছোট লিঙ্গ, হাইপোস্পাডিয়াস (এই ক্ষেত্রে মুত্রনালীর মুখ লিঙ্গের তলার দিকে যুক্ত থাকে), দুভাগে বিভক্ত অন্ডকোষ (অন্ডকোষ মাঝখান থেকে দুভাগে বিভক্ত হয়), শুক্রাশয় এক্ষেত্রে নীচের দিকে থাকে না এবং বন্ধ্যাত্ব দেখা যায়।
- গুরুতরভাবে আক্রান্ত পুরুষদের ক্ষেত্রে মহিলাদের মতো যৌনাঙ্গের বর্হিপ্রকাশ ও সাথে বৃহৎ ক্লিটোরিস বা ভগাঙ্কুর দেখা যায়, গাইনিকোমাস্টিয়া (পুরুষদের স্বাভাবিকের চেয়ে বড় স্তন) অথবা যোনির ঠোঁট বা অধরের আংশিক সংমিশ্রন দেখা যায়।
এন্ড্রজেন ইনসেনসিটিভিটি সিন্ড্রোমের মূল কারণ কি?
প্রধানত, এটির কারণ হল এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর কোডিং জিনটির পরিবর্তন ঘটা। এটি এমন ব্যাধি যা বংশগতভাবে হতে পারে। প্রাথমিকভাবে, গর্ভাবস্থায় শিশুর যৌনাঙ্গ স্বাভাবিকভাবেই বিকশিত হয়। যাইহোক, ভ্রূণ বিকাশের পরবর্তী পর্যায়ে, শিশুর যৌনাঙ্গের বিকাশ এন্ড্রোজেনের স্তরের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। এক্স এক্স ক্রোমোজোম যুক্ত নিম্ন স্তরের এন্ড্রোজেন থাকলে নারী যৌনাঙ্গের বিকাশ হয় এবং এক্স ওয়াই ক্রোমোজোম যুক্ত উচ্চ স্তরের এন্ড্রোজেন থাকলে পুরুষ যৌনাঙ্গের বিকাশ হয়। কিন্তু জিনগত পরিবর্তনের কারণে, শরীর এক্ষেত্রে এন্ড্রোজেনকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে ও সাড়া দিতে পারে না,এবং এর ফলে, যৌনাঙ্গ গঠনে ত্রুটি থেকে যায়, যেমন, পুরুষ যৌনাঙ্গে।
তাই, জন্মের সময়, শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি সাধারণত সেইসব ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায় যাদের শরীরে একটি ত্রুটিপূর্ণ এক্স ক্রোমোজোম এবং অন্য একটি ওয়াই ক্রোমোজোম থাকে, যেমন পুরুষদের ক্ষেত্রে। কিন্তু এটি একটি ত্রুটিপূর্ণ এক্স ক্রোমোজোম এবং অন্য একটি স্বাভাবিক এক্স ক্রোমোজোম থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায় না, যেমন, মহিলাদের ক্ষেত্রে। অতএব, মা হল এই ত্রুটিপূর্ণ জিনের বাহক।
কিভাবে এই রোগ নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা করা হয়?
এন্ড্রোজেন ইনসেনসিটিভিটি সিন্ড্রোম নির্ণয় করা কঠিন। বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করতে হতে পারে। জিনগত পরীক্ষা যেমন কারিয়োটাইপিং, শুক্রাণু গণনা, এইসকল পরীক্ষাগুলির বায়োপসি, শ্রোর্ণী বা পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড, এম আর আই, এবং সিস্টো-ইউরেথ্রস্কপি (মূত্রাশয় এবং মুত্রনালীর ইমেজিং বা প্রতিবিম্বকরণ) করার প্রয়োজন হতে পারে। শিশুর মায়ের পরিবারের তরফে উক্ত রোগের কোনো ইতিহাস থাকলে, এই জিনগত পরীক্ষা গর্ভাবস্থার 9 থেকে 16 সপ্তাহের মধ্যেই করা যেতে পারে।
চিকিৎসা সাধারণত অবস্থার তীব্রতার উপর এবং ব্যক্তিটি পুরুষ নাকি নারী হিসেবে বেড়ে উঠছে তার ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভিরিলাইজেশনের জন্য এন্ড্রোজেনের বড় ডোজের প্রয়োজন। চিকিৎসা হিসেবে সার্জারি বা হরমোন প্রতিস্থাপন করে হতে পারে। যারা নারী হিসেবে বড় হয়েছে, তাদের বয়ঃসন্ধিকালে সম্পূরক বা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ইস্ট্রোজেন দেওয়া হতে পারে। মানসিক ভাবে পাশে থাকা এই চিকিৎসার একটি বড় অঙ্গ।