অ্যাকালেসিয়া কাকে বলে?
অ্যাকালেসিয়া হল একটি বিরল কিন্তু খুবই গুরুতর অবস্থা যা খাদ্যনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে (অন্ননালী)। এটি দুই লিঙ্গের মানুষকেই এক ভাবে প্রভাবিত করে, আর যদিও এটি যে কোন বয়সে হতে পারে, কিন্তু বিশেষ করে 30-70 বছর বয়সের মানুষজনের মধ্যে বেশী দেখা যায়। অ্যাকালেসিয়ার প্রভাব অনেক বছর পর প্রকাশ পায়।
সাধারণত, অন্ননালীর পেশী একবার সংকুচিত আর একবার প্রসারিত হয় (একে পেরিস্টালসিস বলা হয়) পেটের ভিতর খাবার ঠেলে পাঠানোর সময়। খাদ্যনালীর নীচের ভাগটা পেটের সঙ্গে যুক্ত থাকে একটি বৃত্তাকার পেশী ভাল্ব বা কবাটিকা দ্বারা (লোয়ার ইসোফিগাল স্পিঙ্কটার), যা প্রসারিত হয় যাতে খাবার ঢুকতে পারে পেটে। অ্যাকালেসিয়ায়, দুটি পদ্ধতিতেই অসুবিধে দেখা যায়। খাদ্যনালীর পেশি ঠিক ভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে না, আর বৃত্তাকার পেশী কবাটিকা প্রসারিত হয় না বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রসারিত হতে পারে না, এতে খাবার খাদ্যনালীর নীচের অংশে আটক থেকে যায় ফলে অস্বস্তি বা অসুবিধার উপসর্গ দেখা যায়।
এই রোগের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
যারা অ্যাকালেসিয়ায় আক্রান্ত তাঁদের কঠিন ও তরল খাবার গিলতে অসুবিধা (ডিস্ফেগিয়া) হয়। পরবর্তীকালে, যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে অবস্থা আরও খারাপ হয় আর ফলে খাবার গেলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এছাড়াও, যদি চিকিৎসা না করানো হয়, তাহলে সামান্য ঝুঁকি থেকে যায় খাদ্যনালীর ক্যান্সার দেখা দেবার। সুতরাং, এটা জরুরী যে, অ্যাকালেসিয়ার উপসর্গগুলি দেখা দিলেই দেরী না করে তার চিকিৎসা শুরু করা।
অন্যান্য উপসর্গগুলি হল :
- বুকে জ্বালা অনুভুতি।
- খাবার গিলতে গিয়ে বিষম লাগা।
- দীর্ঘস্থায়ী কাশি।
- খাবার খাওয়ার পর ব্যাথা বা অস্বস্তি হওয়া।
- খাবার খাওয়ার পর বমি করা।
- ধারাবাহিক কিন্তু বিপজ্জনক ভাবে ওজন কমে যাওয়া।
অ্যাকালেসিয়ার অনুরুপ উপসর্গ দেখা যায় গ্যাস্ট্রোইসোফিগাল রিফ্লাক্স রোগের ক্ষেত্রেও (এই রোগে পেটের খাবার পুনরায় খাদ্যনালীতে ফেরত চলে আসে), ইসোফিগাল পারফরেশন (খাদ্যনালীতে ছিদ্র) এর ক্ষেত্রে, এবং ইসোফিগাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে।
এর মূল কারণগুলি কি কি?
যদি খাদ্যনালীর স্নায়ুতে আঘাত লাগে তবে তার কার্যকারিতা ক্ষতিপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে অ্যাকালেসিয়া দেখা দেয়। আবার যদি, পেশীর কবাটিকা আর খাদ্যনালী ভালো ভাবে কাজ না করে তার ফলেও এই রোগ হতে পারে।
অ্যাকালেসিয়া ভাইরাল ইনফেকশন, অটোইমিউন অবস্থা এবং জন্মগত কারণের সাথেও জড়িত।
কিভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
অ্যাকালেসিয়ার রোগ নিম্নলিখিতগুলি দ্বারা নির্ণয় হয়ে থাকে :
- বেরিয়াম গলার্ধকরণ দ্বারা
এটি একটি সহজ পদ্ধতি যাতে বেরিয়াম সালফেট খাদ্যনালী দিয়ে পাঠানো হয় আর এক্সরে-র মাধ্যমে ছবি নেওয়া হয়। এটি খাদ্যনালীর গঠনগত অবস্থা দেখতে সাহায্য করে আর সাহায্য করে কতক্ষনে খাবার পেটে পৌঁছাচ্ছে সেটি জানতে।
- ইসোফিগাল ম্যানোমেট্রি
এই পদ্ধতিতে 45 মিনিট লাগে আর এটি করা হয় খাদ্যনালীর পেশীগুলির শক্তি ও সক্রিয়তা দেখার জন্য, এর সাথে পেশীর কবাটিকার কার্যকারিতাও দেখা হয়।
- এন্ডোস্কপি
একটা সরু নল গলা দিয়ে নীচে নামানো হয় যাতে খাদ্যনালীর ভিতরকার ছবি নেওয়া যায়, ও এর শেষ প্রান্তের বৃত্তাকার পেশীর ও পেটের ছবি নেওয়া হয়।
অ্যাকালেসিয়ার নিরাময় সম্ভব নয়, কিন্তু চিকিৎসা করলে উপসর্গগুলি নিবারণ করা যেতে পারে।
-
স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা সেবা
- নাইট্রেট আর ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস-এর সাহায্যে নিম্ন ইসোফিগাল স্পিঙ্কটারে চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, যাতে খাবার গিলতে সুবিধা হয়।
- বোটুলিনাম টক্সিন (বোটক্স) যা বৃত্তাকার পেশীতে এন্ডোস্কোপ দ্বারা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয় তা পেশীকে আরাম প্রদান করবে। কিন্তু এটির প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় না আর অনেককেই বার বার বোটক্স নিতে হয়।
- অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে, একটা বেলুন খাদ্যনালী দিয়ে পাঠানো হয় আর তারপর তা ফোলানো হয় যাতে খাদ্যনালীর নীচের দিকের কবাটিকা চওড়া হতে পারে। এটিকে বেলুন ডাইলেটেশন বলে।
- সার্জিকাল কেয়ার বা সেবা
সাধারণ অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে, লোয়ার ইসোফেগাল স্পিঙ্কটার-এর সুক্ষ অংশগুলি কাটা হয়। এটা করা হয় ল্যাপারোস্কোপের মাধ্যমে, এতে হাসপাতালে বেশি দিন থাকতে হয় না ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।