পেটে মোচড় বা পেট কামড়ানো কি?
বুকের নিচ থেকে তলপেট পর্যন্ত, শরীরের এই অংশে পেট মোচড়ানো বা পেট কামড়ানোর ব্যথা অনুভব করা হয়। আমাদের শরীরে যে পেশী রয়েছে, সেই পেশীর অতিরিক্ত সঙ্কোচনের ফলে পেট মোচড়ানো দেখা দেয়। ক্র্যাম্পের ব্যথা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার আর জীবনে প্রত্যেকেই একবার হলেও এই ধরণের ব্যথা অনুভব করেছেন। এই ব্যথার তীব্রতা এবং কতবার হতে পারে, তা কয়েকটি কারণের ওপর নির্ভর করে।
এই ব্যথার সঙ্গে জড়িত প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
- পেট মোচড়ানোর সাধারণ উপসর্গ
- হজমের গোলমাল ও খাওয়ার সময় অস্বস্তি বোধ হওয়া।
- কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডাইরিয়া (পাতলা পায়খানা হওয়া)।
- ঢেকুর ওঠা ও পেট ফাঁপা বা পেটে গ্যাস হওয়া।
- বুকজ্বালাভাব বা অম্বল হওয়া ও বমি পাওয়া।
- মাইক্রোবিয়াল অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া ঘটিত জীবাণুর সংক্রমণের কারণে জ্বর।
- পেট মোচড়ানো বা কামড়ানোর গুরুতর লক্ষণ
- প্রসাবের সময় যন্ত্রণা এবং বারবার পায়খানা পাওয়া।
- প্রসাব অথবা মলের সঙ্গে রক্ত।
- ডিহাইড্রেশন বা শরীরে জলের পরিমাণ কমে যাওয়া।
- খিদে কমে যাওয়া এবং শরীরের ওজন হ্রাস।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
পাকস্থলী, যকৃৎ বা লিভার, বৃক্ক বা কিডনি, অগ্নাশয় অথবা পেটে অবস্থিত যে কোনও অঙ্গে একটি অন্তর্নিহিত চিকিৎসাজনিত অবস্থার কারণে পেট মোচড়ানো অথবা পেট কামড়ানোর সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণগুলি ছোটোখাটো সংক্রমণের সমস্যা থেকে শুরু করে মারাত্মক অসুখ যেমন ক্যান্সারও সৃষ্টি করতে পারে। পেট মোচড়ানোর সাধারণ কারণগুলি হল:
- খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে পাকস্থলীতে সংক্রমণ এবং প্রদাহ (ফুসকুড়ির মতো হওয়া)।
- বমিভাব এবং গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা বদহজম জনিত সমস্যায় অম্বল ও গ্যাস (এক্ষেত্রে পাকস্থলীতে থাকা যাবতীয় জিনিস খাদ্যনালীতে আবার ফেরৎ চলে আসে)।
- ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা।
- দুগ্ধজাতীয় খাবার খেলে অস্বস্তি বোধ বা ল্যাক্টোজ সহ্য না হওয়া (চিনি ও দুধ হজম করতে না পারা)।
- কিডনিতে পাথর অথবা পিত্তাশয়ে পাথর।
- মলাশয়ে অস্বস্তি বোধ (অন্ত্রে প্রদাহ)।
- অ্যাপেন্ডিসাইটিস।
- গ্যাস্ট্রিক বা পেটের আলসার বা ঘা।
- কোলন অথবা পাকস্থলীতে ক্যান্সার।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হয় আর চিকিৎসা করা হয়?
সঠিক ও কার্যকরী চিকিৎসার জন্য পেট মোচড়ানোর আসল কারণ নির্ধারণ করা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পেট ব্যথার ধরণ, তার তীব্রতা, যন্ত্রণা কতবার ধরে হচ্ছে, এছাড়াও আরো আনুষাঙ্গিক উপসর্গ শুনে ও দেখে ডাক্তার একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন যে ঠিক কি কারণে পেট মোচড়ানো বা পেট কামড়ানোর সমস্যা হচ্ছে।
নিম্নলিখিত পরীক্ষা বা টেস্টের মাধ্যমে কারণ নির্ধারণ করা যেতে পারে:
- সংক্রমণ হয়েছে কি না, তা জানার জন্য রক্তপরীক্ষা।
- জীবাণুর সংক্রমণ, প্রসাবে রক্ত, মলের সঙ্গে পুঁজ বের হওয়া ইত্যাদি আরো বেশ কিছু কারণে প্রসাব ও মল পরীক্ষা।
- পিত্তাশয় অথবা কিডনিতে পাথর হয়েছে কি না, তা জানার জন্য এক্স-রে করানো।
- পাকস্থলী এবং ক্ষুদ্রান্তের স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধা পাচ্ছে কি না, তা জানার জন্য এন্ডোস্কোপি।
- কোলনের অবস্থা ঠিক কি রকম পর্যায়ে আছে, তা জানার জন্য কোলোনস্কোপি।
- কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি অর্থাৎ সিটি স্ক্যান।
- আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা।
কারণের উপর ভিত্তি করে ক্র্যাম্প বা পেট মোচড়ানোর চিকিৎসা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয় এবং নিম্নলিখিতগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে:
- সংক্রমণ বা প্রদাহের জন্য ডাক্তার আপনাকে ওষুধ দেবেন এবং সেই সঙ্গে একটা ডায়েট চার্ট বা খাদ্যতালিকা তৈরি করে দিয়ে, সেই অনুযায়ী চলার পরামর্শ দেবেন।
- কোনও অঙ্গে বাধা তৈরি হলে, তা নিরাময় করার জন্য অস্ত্রোপচারের সূচি নির্ধারণ।
- ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি যোগ করে আরও বিস্তৃত পদ্ধতির প্রয়োজন। তবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে ব্যাপারাটা কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করছে বা ক্যান্সার কোন জায়গায় আছে এবং কতটা ছড়িয়েছে, তার ওপর।
পেট মোচড়ানোর ক্ষেত্রে নিজে কিভাবে যত্ন নেবেন
পেট মোচড়ানো বা কামড়ানোর ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসার ধরণ নির্ভর করলেও, সাময়িকভাবে অস্বস্তি কমাতে আপনি কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে পারেন। যেমন:
- অম্বল হতে পারে এমন খাবার এবং মশালদার খাবার এড়িয়ে চলুন। না হলে পাকস্থলী এবং অন্ত্রে যে স্তর রয়েছে, তাতে জ্বালাভাব বাড়বে।
- বেশি করে জল খান এবং তরল জাতীয় পানীয় পান করুন। তবে, কার্বনেটেড পানীয় এড়িয়ে চলুন। কারণ, তাতে পেটে আরও গ্যাস তৈরি হবে।
- শুতে যাওয়ার আগে ভারি খাবার খাবেন না। ঘুমনোর অন্তত দু’ঘণ্টা আগে রাতের খাওয়া সেরে নিন। তাতে খাবার হজম হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে।
- পেটের পেশীতে অত্যাধিক চাপ পড়ে, এই ধরনের ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।